রমেন দাস: নিট থেকে নেট। একের পর এক সর্বভারতীয় পরীক্ষা নিয়ে উঠছে প্রশ্ন। পরীক্ষা বাতিল থেকে অতিরিক্ত নম্বর, বিতর্কের দাবানলে পুড়ছে লক্ষ লক্ষ পড়ুয়ার ভবিষ্যত! রাজ্যের শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি ছাপিয়ে কেন্দ্র সরকারের দিকে আঙুল উঠেছে ফের। কিন্তু কেন বারবার প্রশ্নের মুখোমুখি হচ্ছে একাধিক পরীক্ষা?
শিক্ষায় দুর্নীতি! প্রশ্নফাঁসের শিক্ষা আবহেই উঠে আসছে প্রযুক্তির বিপদের কথা। দেশজুড়ে ফের শিরোনামে এসেছে অন্ধকার জগৎ! টেকনিক্যাল পরিভাষায় যাকে বলা হচ্ছে 'ডার্ক ওয়েব'। দাবি, বিশ্বের অন্তর্জালের (Internet) ৯৬ শতাংশই নাকি আবর্তিত হয় অজানা ডিপ ওয়েব (Deep Web) বা ডার্ক ওয়েবের (Dark Web) মাধ্যমে! যার উপর ভরসা করেই দিনের পর দিন পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস করছে অপরাধীরা! বিস্তারিত ব্যাখা সাইবার বিশেষজ্ঞ সন্দীপ সেনগুপ্তের।
কী এই ডার্ক ওয়েব?
আমরা ইন্টারনেটে যা দেখি, বা যে যে কাজ মূলত করি সেটাকে বলা হয় 'সার্ফ ওয়েব'। যা মাত্র ৪ শতাংশ। কিন্তু বাকি ৯৬ শতাংশ কার্যকলাপ চলে অন্যভাবে। যে সার্ফিং স্বাভাবিক বা চলতি কোনও ব্রাউজার দিয়ে সম্ভব নয়। এই তথাকথিত অসম্ভব অংশকেই বলা হচ্ছে ডিপ ওয়েব। যেখানে প্রবেশ করতে হলে একটি বিশেষ ধরনের ব্রাউজার লাগে। যাকে বলা হয় 'টর ব্রাউজার' (Tor Browser) । এই ডিপ ওয়েবে কাজ করলে, কে সেটা করছেন, ট্র্যাক করা খুব সহজ নয়। খানিকটা মুখোশ পরিবৃত থাকে সব। আর এই গোপনীয়তা কাজে লাগিয়েই এর মধ্যে দিয়ে অপরাধ হচ্ছে। মাদক বিক্রি থেকে অস্ত্র, এমনকী পরীক্ষার প্রশ্নফাঁস, সবটাই চালানো যাচ্ছে, অপরাধীদের এই স্বর্গরাজ্যে। প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে হিমশৈলের চূড়ার নিচে এই অপরাধের মুক্তাঞ্চলকেই আসলে বলা হচ্ছে ডার্ক ওয়েব। সাম্প্রতিক সমস্ত বিতর্ক, পরীক্ষা নিয়ে প্রশ্ন, সবকিছুই কিন্তু ডার্ক ওয়েবকে ঘিরে।
ভয় ধরাচ্ছে ডার্ক ওয়েব, কী লুকিয়ে অন্ধকারে?
কীভাবে প্রশ্নফাঁস?
সাইবার বিশেষজ্ঞ সন্দীপ সেনগুপ্ত বলছেন, মোটামুটি যা দাবি করা হচ্ছে, তাতে এই ডার্ক ওয়েবের মাধ্যমে প্রথমত কোনও বিজ্ঞাপন দেওয়া হচ্ছে, যে বিজ্ঞাপন সুকৌশলে ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। যেমন, এত টাকার বিনিময়ে এই পরীক্ষার প্রশ্ন মিলবে। সার্টিফিকেট পাওয়া যাবে! যেমন বলা হচ্ছে, নেট (UGC-NET) এবং নিট (NEET 2024) পরীক্ষার ক্ষেত্রেও এমন হতে পারে! এবার সেই বিজ্ঞাপনের হাত ধরে অথবা আগে থেকে ফাঁদে ফেলার জন্য সহজ নামে টেলিগ্রামে (Telegram) চ্যানেল খোলা হচ্ছে। এবার সেই চ্যানেলে যোগ দিচ্ছেন বহু। সেখানেই নানান লিংকের মাধ্যমে বিটকয়েন, ক্রিপ্টো কারেন্সিতে লেনদেন হচ্ছে। প্রশ্ন পাওয়া যাচ্ছে। কিন্ত কে ডার্ক ওয়েবে এই 'দুর্নীতি'র সূচনা করলেন, এই বিষয়টি প্রাথমিকভাবে অধরাই থেকে যাচ্ছে। অপরাধ হচ্ছে এভাবেই।
সন্দীপ সেনগুপ্ত, সাইবার বিশেষজ্ঞ।
সমাধানের উপায়?
যাঁরা পরীক্ষা অনুষ্ঠিত করছেন তাঁদের প্রযুক্তিগত দিক থেকে আরও সক্রিয় এবং সচেতন হতে হবে। টেলিগ্রামের মতো অ্যাপ বা বিভিন্ন 'ওনিয়ন' ধরনের সাইট, প্রশ্ন উঠলেই চেষ্টা করতে হবে গভীর নজরদারির। শুধু তাই নয়, হিউম্যান এরর অর্থাৎ প্রশ্ন ছাপা থেকে পরবর্তী ক্ষেত্র, সবক্ষেত্রেই মানুষের দ্বারা যে যে কাজ হয়, সেখান থেকেও তথ্যফাঁস আটকাতেই হবে।
ডার্ক ওয়েবে অপরাধ ঠেকাতে অসুবিধা?
ডিপ বা ডার্ক ওয়েবে কাজ অনেকটা মুখোশ পরে কাজ করার মতো। আইপি অ্যাড্রেস থেকে শুরু যাবতীয় তথ্য, সবক্ষেত্রেই ট্র্যাক করা বেশ কঠিন। কিন্তু একেবারেই অসম্ভব নয়। বিভিন্ন উপায় রয়েছে অপরাধীদের চিহ্নিত করার। এইক্ষেত্রে টেলিগ্রাম অপরাধীদের সুবিধা করছে। যেখানে একই চ্যানেলে বহু মানুষের যোগ। তথ্য লেনদেন। সবকিছুতেই ধরা পড়ার সম্ভাবনা অনেক কম। এই অ্যাপ সহজেই প্রশাসনকে তথ্য দেবে না। হোয়াটসঅ্যাপ (WhatsApp) জাতীয় অ্যাপের থেকে টেলিগ্রাম (Telegram) অপরাধীদের কাছে বেশি নিরাপদ।
কেন শুরু হয় ডার্ক ওয়েব?
সাইবার বিশেষজ্ঞ সন্দীপ সেনগুপ্ত বলছেন, ডিপ বা ডার্ক ওয়েব মূলত বাকস্বাধীনতা যে দেশে কম, সেখানে বেশি ব্যবহৃত হতে শুরু করে। নিজের পরিচয় গোপন রেখে মতামত প্রকাশ করা হয়। রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে সরব হওয়া। গ্রেপ্তারির সম্ভাবনা না থাকা। এসবের জন্যই শুরু। কিন্তু এই সুযোগেই অপরাধের জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে।
[আরও পড়ুন: মুরগি খেলেই বিপদ! ফের কড়া নাড়ছে মৃত্যুর হাতছানি? খাবারেই লুকিয়ে সব? ]
প্রসঙ্গত, সাম্প্রতিক পরীক্ষা বিতর্ক। একের পর পরীক্ষা বাতিলে চর্চায় এসেছে এই ডার্ক ওয়েব। যা অপরাধের জগতে জনপ্রিয়তা অর্জন করছে নিরন্তর। কিন্তু এতদিন ধরে ডার্ক ওয়েব লক্ষ লক্ষ পড়ুয়ার ভবিষ্যত অন্ধকারে নিমজ্জিত করলেও কেন আগে থেকেই সক্রিয় হয়নি প্রশাসন? এই প্রশ্নেও সরব হয়েছেন কেউ কেউ।
[আরও পড়ুন: নিট ‘দুর্নীতি’র নেপথ্যে কে, বিস্তারিত ব্যাখা চিকিৎসক-শিক্ষক অর্কদীপের]
দেখুন ভিডিও: