রমণী বিশ্বাস, তেহট্ট: গ্রামে ভূতের আতঙ্ক। সন্ধে হলেই গৃহবন্দি যুবকেরা। ভূত যাতে স্পর্শ করতে না পারে সে কারণে পকেটে এক কোয়া রসুন নিয়ে বাড়ির বাইরে বেরচ্ছেন তাঁরা। গ্রামের যুবকের অতৃপ্ত আত্মাই নাকি এই কাণ্ড ঘটাচ্ছে, দাবি এলাকাবাসীর। এমনই গুজবে নদিয়ার তেহট্ট থানার বেতাই সাধুবাজার বাসস্ট্যান্ড লাগোয়া উত্তর জিতপুর পুকুরপাড় এলাকায় শোরগোল।
প্রায় আড়াই বছর আগে ওই গ্রামে ঘটে অঘটন। স্থানীয় বাসিন্দা সৌরভ সরকার পারিবারিক অশান্তির কারণে নিজের ঘরে গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মঘাতী হন। সৌরভ ভারতীয় সেনাবাহিনীতে কর্মরত ছিলেন। তাঁর অতৃপ্ত আত্মা গ্রামে ঘুরে বেড়াচ্ছে বলে দাবি গ্রামবাসীদের। গত শনিবার গ্রামেরই বাসিন্দা রিপণ সিংহকে সৌরভের অতৃপ্ত আত্মা ‘ভর’ করেছিল বলেই মনে করেন স্থানীয়রা। তার জেরে রিপণ অসলগ্ন কথাবার্তা বলছিল এবং পরিবারের কাউকে চিনতে পারছিল না বলেও দাবি। রিপণকে স্বাভাবিক ছন্দে ফেরাতে অবশেষে শনিবার রাতে ওঝা ডাকা হয়। চলে ঝাড়ফুঁক। রিপনের মায়ের দাবি, শনিবার রাতে তাঁর ছেলে একটি অনুষ্ঠান থেকে বাড়ি ফিরে অস্বাভাবিক আচরণ করছিল। রিপণের শরীরে এত শক্তি সঞ্চার হয়েছিল যে বেশ কয়েকজন যুবক তাঁকে নাকি ধরে রাখতে পারছিলেন না। তাই রাতে বাইরে থেকে ওঝা ডেকে এনে ঝাড়ফুঁক করানো হয়। এখন স্বাভাবিক রয়েছে সে। প্রত্যক্ষদর্শী বিশ্বনাথ রায়েরও বক্তব্য প্রায় একইরকম। তাঁর মতে, কোনও স্বাভাবিক মানুষ এই ধরনের অস্বাভাবিক আচরণ করতে পারেন না।
[আরও পড়ুন: ডুয়েট গেয়ে মাতিয়ে দিলেন কুণাল-সায়নী, উচ্ছ্বসিত হাজার হাজার দর্শক]
ওই গ্রামেরই আরেক বাসিন্দা স্বপন সরকারের অভিজ্ঞতা আবার একটু অন্যরকম। মঙ্গলবার রাতে শৌচকর্ম সারতে বাড়ি থেকে বেরন। সেই সময় তিনি কিছু অস্বাভাবিক ঘটনার সাক্ষ্মী হন বলেই দাবি। মনে হয় কেউ যেন রান্নাঘরের টিনের চালে দাপাদাপি করছে। পরক্ষণেই আবার সে নাকি স্বপনবাবুর ঘাড়ে উঠে দাপাদাপি করতে শুরু করে। সঙ্গে সঙ্গে টর্চ জ্বালালেও, কাউকে দেখা যায়নি বলেই দাবি। বাড়ি ঢুকে অসুস্থ হয়ে পড়েন স্বপনবাবু। অতিরিক্ত ঘামতে শুরু করেন। এবং ঘাড়ও বেঁকে যায় তাঁর। আত্মঘাতী সেনা জওয়ান সৌরভের বন্ধু রকি টিকাদারও ‘অতৃপ্ত আত্মা’র অত্যাচারে কার্যত কাহিল। তিনি জানান, প্রতি রাতে ঘুমের মধ্যে তিনি সৌরভকে দেখতে পাচ্ছেন। সৌরভ ক্রমাগত ডেকেই চলেছে তাঁকে। প্রায় প্রতি রাতই আতঙ্কে কাটছে তার। সন্ধের পর বাড়ি থেকে বেরচ্ছেন না রকি। পরিবারের কথামতো পকেটে এক কোয়া রসুন সব সময় রেখে দিচ্ছেন।
আপাতত গ্রামজুড়ে আতঙ্কের পরিবেশ। গ্রামবাসীদের একাংশের দাবি, সৌরভের অস্বাভাবিক মৃত্যুর পরেও পিণ্ডদান না করায় এমন ঘটনা ঘটছে। গ্রামবাসীদের পক্ষ থেকে সৌরভের বাবার কাছে গয়ায় গিয়ে পিণ্ডদানের আরজি জানানো হয়েছে। তেহট্ট-১ বিডিও শুভাশিস মজুমদার জানান, গ্রামবাসীরা যদি লিখিতভাবে জানায় তাহলে ঘটনাস্থলে গিয়ে বিষয়টি দেখা হবে। তেহট্ট থানার পুলিশ এবং বিজ্ঞানমঞ্চ যদিও এই ঘটনার মধ্যে সত্যতা খুঁজে পাচ্ছে না। পুরোটাই গুজব বলেই দাবি বিজ্ঞানমঞ্চের।