কষ্ট করলে কেষ্ট মেলে। এই প্রবাদ সর্বজনবিদিত। অর্থনীতির দুনিয়াতেও তা প্রযোজ্য। আপনার টার্গেট যা-ই হোক, লক্ষ্যভেদ করতে হলে পরিশ্রমের কোনও বিকল্প নেই। মৌলিক যেটুকু তথ্য সকলের না জানলেই নয়, তালিকাবদ্ধ করলেন সুখেন্দু চক্রবর্তী
স্বপ্নের বাড়ি, গাড়ি, বিদেশ ভ্রমণ, একটা থ্রি বিএইচকে ফ্ল্যাট, সন্তানের উচ্চ শিক্ষা এবং অবসরের প্ল্যানিং। এই সমস্তটাই আমাদের আর্থিক লক্ষ্য হতেই পারে। কিন্তু আমরা যদি সেই লক্ষ্যে পৌঁছতে চাই, তার জন্য কী চেষ্টা করা উচিত? কারণ স্বপ্নগুলো বাস্তবমুখী হবে আমাদের কঠোর পরিশ্রমের মধ্য দিয়েই। ইনভেস্টমেন্টের ক্ষেত্রে এই স্বপ্নগুলি হল উন্নতমানের রিটার্ন, পারফরম্যান্সের ধারাবাহিকতা, মাঝেমধ্যে প্রফিট টেকিং করার সুযোগ।
মিউচুয়াল ফান্ড মানেই ইকুইটি নয়
মিউচুয়াল ফান্ড প্রসঙ্গে প্রথমেই যা শোনা যায়, তা হল ইকুইটি ফান্ড। আমরা অনেকেই ভাবি মিউচুয়াল ফান্ডে মানে শুধুই বুঝি ইকুইটি ফান্ড। কিন্তু বাস্তবটা অন্য। মিউচুয়াল ফান্ড মানেই স্টক নয়, কেবল শেয়ার মার্কেটেই তা আবদ্ধ নয়। ডেট ইনস্ট্রুমেন্টের জন্যও ফান্ড আছে। এগুলি সরকারি বা কর্পোরেট বন্ড, ডিবেঞ্চার বা মানি মার্কেটের মতো ফিক্সড ইনকাম সিকিওরিটিজ-এ লগ্নি করে। এগুলি হল ডেট ফান্ড। ডেট ফান্ডের ক্ষেত্রটি যথেষ্ট বিস্তৃত। ডাইভারসিফিকেশন এখানেও পাওয়া সম্ভব।
ডাইভারসিফিকেশন অফ পোর্টফোলিও
আমরা কোথায় লগ্নি করব: ইকুইটি ফান্ডে, না কি ডেট ফান্ডে? যে কোনও একটা কি বেছে নেব না কি দু’টোই? এমন প্রশ্ন আমাকে প্রায়শই করে থাকেন পরিচিত ব্যক্তিরা। ইকুইটি ফান্ড ভাল রিটার্ন দেয়, আর ডেট ফান্ড দেয় স্থিতিশীলতা। এই দু’য়ের ‘কম্বিনেশন’ ভাল। আমাদের বিনিয়োগের যে কোনও ভাল স্ট্র্যাটেজিতে এই দুই গোত্রের লগ্নিই থাকে। এভাবেই ডাইভারসিফিকেশন অফ পোর্টফোলিও, যা অনেক সাবধানী লগ্নিকারীর কাছে মূলমন্ত্র সমান, পাওয়া সম্ভব হয়।
সেবির সংজ্ঞা অনুযায়ী
লার্জ-ক্যাপ, মিড-ক্যাপ এবং স্মল ক্যাপের স্পষ্ট ধারণা না থাকলে শেয়ার বাজারে খুচরো লগ্নিতে সমস্যা হয়। সমস্যা হয় মিউচুয়াল ফান্ডের ক্ষেত্রেও। কারণ ফান্ড সংস্থাগুলি মার্কেট ক্যাপিটালাইজেশনের ভিত্তিতে বাজারে বহু প্রকল্প আনে। আবার একাধিক ‘কম্বিনেশন’ও অসম্ভব নয়। যেমন ধরা যাক মাল্টিক্যাপ। নাম শুনেই বুঝতে পারছেন, এখানে পাঁচমিশালি এক মিশ্রণের কথা
বলা হচ্ছে।
# লার্জ-ক্যাপ: শেয়ার মূলধনের নিরিখে বাজারে প্রথম ১০০টি সংস্থার শেয়ার।
# মিড-ক্যাপ: শেয়ার মূলধন অনুযায়ী ১০১ থেকে ২৫০-তম সংস্থার শেয়ার।
# স্মল-ক্যাপ: ২৫১-তম থেকে শুরু করে বাকি সংস্থার শেয়ার।
লগ্নি কীভাবে করা উচিত
ভারতের বাজার এখন উৎসাহে ফুটছে। ক্রমাগত নতুন রেকর্ড গড়ে চলেছে দুই সূচক – সেনসেক্স, নিফটি। রিস্ক আর রিটার্নের মধ্যে ভারসাম্য রাখার জন্য ডেট ফান্ড থেকে এসটিপি-র মাধ্যমে ইকুইটিতে লগ্নি করা একটা ভাল বিকল্প। এতে মূলধন সবসময় অক্ষত থেকে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এছাড়া ব্যালান্সড অ্যাডভান্টেজ শ্রেণীর বা ব্যালান্সড ফান্ডে বিনিয়োগ করা যেতে পারে। সেক্ষেত্রে রিস্ক আর রিটার্নের ভারসাম্য রেখে বিনিয়োগ করা যায়। বিনিয়োগের সব সময় অর্ধেক ডেট ফান্ডে যদি থাকে, তাহলে রিস্ক আর রিটার্নের ভারসাম্য বজায় থাকবে।
নিজের বিনিয়োগ নিয়ে চিন্তাভাবনা করুন। যদি রিস্ক প্রোফাইল মেনে চলেন, গণ্ডির বাইরে না বেরিয়ে যান, তাহলে ঠকবেন না। সাধারণ মানুষ হিসাবে আমরা চাই ভারসাম্য, চাই রিটার্নের অনিশ্চয়তা থেকে দূরে থাকতে। যথাযথ অ্যাসেট অ্যালোকেশনই আমাদের সামনে সুযোগের দরজা খুলে দেবে।
(লেখক লগ্নি পরামর্শদাতা, সাফল্য ও সমৃদ্ধি এলএলপি)
সতর্কীকরণ
লগ্নির যাবতীয় সিদ্ধান্ত একমাত্র বিনিয়োগকারীর নিজের, দায়িত্বও তাঁর। ‘সংবাদ প্রতিদিন’—এর এতে কোনও ভূমিকা নেই। লগ্নি-জনিত ফলাফল বিনিয়োগকারীর সিদ্ধান্তের উপর সম্পূর্ণভাবে নির্ভরশীল, তাই বাজারের ঝঁুকির ব্যাপারে সব জেনে নিয়েই পদক্ষেপ করবেন।