অভিরূপ দাস: ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে থাকত। রা কাড়ত না কোনও। এমন শিশুই এখন দিব্যি সুস্থ। আধো আধো স্বরে বলছে নিজের নামও। তাদের সারিয়ে তুলে ল্যাজ নাড়ছেন চিকিৎসকও। এই ডাক্তারবাবু চারপেয়ে! নিবাস সল্টলেকে। শহরের একাধিক অটিস্টিক এবং সেরিব্রাল পলসিতে আক্রান্ত শিশুদের প্রতিষ্ঠান নিয়ে গিয়েছে ‘ম্যাগি’কে। ‘ডক্টর ডগ’- ম্যাগির সংস্পর্শে নয়া জীবন পেয়েছে শিশুরা। বিদেশে এমন চিকিৎসার কথা আকছার শোনা যায়। পোশাকি নাম ‘ডগ থেরাপি।’ সেই থেরাপিই দেয় সল্টলেকের সুকন্যা দের পোষ্য ম্যাগি। আদতে কিছুই না। তার মাথায় হাত বোলায় শিশুরা। বিশেষ চাহিদা সম্পন্নদের না বলা কথা বুঝে নেয় সারমেয়। এভাবেই গড়ে ওঠে পারস্পরিক সম্পর্ক।
দেশি কুকুর। রাস্তা থেকে কুড়িয়ে এনে তাকে ঘরে তুলেছিলেন সুকন্যা। পূর্ব কলকাতার বাসিন্দা পশুপ্রেমী সুকন্যা প্রথম ইন্টারনেটে পড়েন ‘ডগ থেরাপি’ নিয়ে। জানতে পারেন, মানসিক চাপ কমানোর জন্য ‘ডগ থেরাপি’ অন্যতম দাওয়াই। চারপেয়েদের সঙ্গে দীর্ঘক্ষণ থাকলে শুধু ফুরফুরে মেজাজই নয়, রক্তচাপও স্বাভাবিক থাকে। এরপর নিজেই যোগাযোগ করেন বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের হোমে। মেন্টাল হেলথ রিসার্চ সেন্টারের মনোবিদ ডা. সাগ্নিক মুখোপাধ্যায় জানিয়েছেন, অটিস্টিক শিশুদের মধ্যে ‘রেসিপ্রোকাল রিলেশনশিপ’ দেখা যায় না। পারস্পরিক অনুভূতি তাদের মধ্যে গড়ে ওঠে না। এই শিশুদের ভাব বিনিময় ক্ষমতা কম। বাড়িতে তারা গুম মেরে থাকে। সারমেয়র সঙ্গে থাকলে এদের ব্যবহারে একটা পরিবর্তন আসে। পারস্পরিক অনুভূতি গড়ে ওঠে।
সুকন্যার কথায়, “সেরিব্রাল পলসির শিশুদের অনুষ্ঠানের নাম দেওয়া হয়েছিল ডক্টর ডগ। অটিস্টিক শিশুরা সকলের সঙ্গে মেলামেশা করতে পারে না। অনেকক্ষেত্রে তারা একগুঁয়ে, জেদি। এমন বাচ্চাদের হোমেই যায় ম্যাগি। বাচ্চারা তার গায়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়। দীর্ঘক্ষণ সময় কাটানোর পর শিশুদের ব্যবহারে অনেকটাই পরিবর্তন এসেছে। এদেশে এখনও ‘ডগ থেরাপি’ তেমন পসার জমায়নি। তবে ইটালির ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ হেলথ ছাড়াও নানা দেশের নামজাদা স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠান এমন চিকিৎসায় সিলমোহর দিয়েছেন।
[আরও পড়ুন: মৃ্ত্যুকে হারিয়ে দেওয়ার গল্প, আশা দেখাচ্ছেন কলকাতার ক্যানসার বিশেষজ্ঞরা]
মনোবিদ সাগ্নিক মুখোপাধ্যায় জানিয়েছেন, “মানসিক অসুখের চিকিৎসায় কুকুরদের ‘সামাজিক অনুঘটক’ হিসেবে দেখা হয়। যে অনুঘটক মনের গভীর বিষাদ কাটাতে সাহায্য করে। অনেক সময়ই দেখা গিয়েছে, শেষ বয়সে প্রবীণরা যখন পরিবারের থেকে বিচ্ছিন্ন, অসম্ভব খিটখিটে হয়ে গিয়েছেন, সারমেয়র সঙ্গে থাকতে থাকতে তাদের স্বভাবেও অনেকটাই পরিবর্তন দেখা যায়। একই ফল মিলেছে অটিজম ডিজঅর্ডারে ভোগা শিশুদের ক্ষেত্রেও।”
কুকুরদের সঙ্গে সময় কাটানোর পর অনেকটাই স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে অটিজমে আক্রান্ত শিশুরা। আমেরিকার ‘কমপ্লিমেন্টারি মেডিসিন’ জার্নালে এ নিয়ে একাধিক রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, এএসডি অথবা অটিজম স্পেকট্রাম ডিজঅর্ডারে ভুগতে থাকা শিশুদের মধ্যে অনেক সময় প্রচণ্ড রাগ দেখা যায়। অভিভাবকের কথাও শোনে না। এটা সেটা ছুঁড়ে ফেলে দেয়। কিন্তু সারমেয়র সঙ্গে সময় কাটানোর পর তাদের এই ‘অ্যাগ্রেসন’ বা রাগ অনেকটাই কমে যায়।
The post ৫০০ শিশুকে নতুন জীবন দিয়েছে সল্টলেকের এই ‘থেরাপি ডগ’ ম্যাগি appeared first on Sangbad Pratidin.