shono
Advertisement

নেশার অন্ধকার থেকে পথভোলা শিশুদের আলোয় ফেরাচ্ছেন বাঙালি যুবক

সব ভুলে বই-ই এখন সব কচিকাঁচাদের। The post নেশার অন্ধকার থেকে পথভোলা শিশুদের আলোয় ফেরাচ্ছেন বাঙালি যুবক appeared first on Sangbad Pratidin.
Posted: 07:10 PM Dec 25, 2017Updated: 02:31 PM Sep 18, 2019

তন্ময় মুখোপাধ্যায়: ঝলমলে হওয়ার বয়সে ফ্যাকাসে হয়ে গিয়েছিল মুখগুলো। ডেন্ড্রাইটের নেশায় পথ হারিয়েছিল শৈশব। কখনও গুদাম, কখনও স্টেশনে কাটাতে কাটাতে জীবনের মানে পালটে গিয়েছিল একরত্তিদের। বড়দিনের আগে তাদের সেই আঁধার অনেকটা ঘুচল। জুটল আস্তানা। শেওড়াফুলি স্টেশনে তথাকথিত ভবঘুরে রুমজা, নুরজুনদের চোখে-মুখে এখন কত স্বপ্ন।

Advertisement

[স্বচ্ছ ভারত প্রচারে এবার শামিল গব্বর সিংও]

বছর খানেক আগেও রুমজারা হুগলি নদীতে পয়সা কুড়োত, কিংবা স্টেশনে ভিক্ষা করত। আর ফাঁক পেলে ডেন্ড্রাইটের নেশায় ডুবে যেত। পথভোলা এই শৈশবের পাশে আচমকা দাঁড়িয়ে পড়েন এক স্বপ্নসন্ধানী। যার না আছে চাকরি, না পকেটের জোর। শ্রীরামপুরের বাসিন্দা শুভঙ্কর পোল্লে যাতায়াতের পথে নূরজাহান, রুমজানদের এই অবস্থা দেখেছিলেন। কৌতূহলে একদিন এই কলেজ পড়ুয়া বাচ্চাদের কাছে যান। সাহস করে কচিকাঁচাদের বলে ফেলেন, তোরা পড়াশোনা করবি। ওরা পড়তে চায় শুনে শুভঙ্করকে পায় কে! এবছরের জানুয়ারি মাস নাগাদ নূরজাহান, রুমজান, বর্ষা নামের তিন কন্যাকে নিয়ে শুরু হয় অসম লড়াই। শুভঙ্কর জানতে পারেন ওদের আগেও কেউ কেউ পড়াত। তবে তা বিক্ষিপ্তভাবে। উদ্যমী যুবক ঠিক করেন সপ্তাহে ৬ দিন পড়াবেন।

[জাগতিক জগতের মায়া কাটিয়ে মৃত্যুলোকে পাড়ি দিল বাঙালির ‘বগলা’]

সেই থেকে রবিবার বাদে রোজ বিকেলে শুভদার কাছে পড়তে বসে ওই কচিকাঁচারা। রুমজাদের দেখে আস্তে আস্তে শেওড়াফুলি স্টেশনে থেকে অন্যান্য বাচ্চারা পাঠশালায় নাম লেখাতে থাকে। এইভাবে সংখ্যাটা এখন ১৬ জন। রেলের গুমটির মধ্যে তাদের শিক্ষাদানের ব্যবস্থা করেন শুভঙ্কর। শুরুর দিকে নিজেই বাচ্চাদের জন্য বইপত্রর ব্যবস্থা করে দেন। এরপর সোশ্যাল মিডিয়ার তার এই উদ্যোগ দেখে অনেকে এগিয়ে আসেন। এমনই একজন সুতমা পাল। চাকরি সামলে ওই ভদ্রমহিলা নানাভাবে পড়ুয়াদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। এভাবেই তাদের সঙ্গে যোগাযোগ হয় কলকাতার বাসিন্দা শুভদীপ মুখোপাধ্যায়ের। বর্তমানে অফিসের কাজে সুইডেনে রয়েছেন শুভদীপ। ওখানেই তিনি শুভঙ্করের নাছোড় লড়াইয়ের কথা জানতে পারেন। শুভঙ্কর খবর পান যেহেতু স্টেশনে থাকা ওই শিশুদের কোনও পরিচয়পত্র নেই তাই তাদের কেউ ভাড়াও দিচ্ছে না। পাশাপাশি শীতের কামড়ও তাদের খেতে হচ্ছে। একরত্তি শিশুদের যাতে অসুবিধা না হয় তার জন্য বিশেষ ধরনের তাঁবু পাঠিয়েছেন শুভদীপ। যে তাঁবুতে চার-পাঁচজন শিশু থাকতে পারে। ঝড়ঝঞ্ঝা বা দুর্যোগ হলেও ওই আস্তানায় নিরাপদ থাকবে শিশু ও তার পরিবার।

[আরও একটা জন্মদিন, কেমন আছেন ভারতীয় রাজনীতির ‘ভীষ্ম’?]

তিন থেকে এখন ষোলোজনের সংসার। শুভঙ্করের দায়িত্ব বাড়ছে। চাকরির পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নেওয়া শ্রীরামপুরের এই যুবকের পিছুটানও কম নয়। ঘরের খেয়ে কেন বনের মোষ তাড়ানো হচ্ছে? এই গঞ্জনাও নিয়মিত শুনতে হচ্ছে। হাজার পিছুটানেও লক্ষ্যে স্থির শুভঙ্কর। তার এই আন্তরিকতা দেখে শেওড়াফুলি আরপিএফ শিশুদের পড়ার জন্য আলাদা ঘরের ব্যবস্থা করেছে। শুভঙ্করের উদ্যোগে এদের অনেকেই স্কুলে পড়ছে। একরত্তি শিশুদের আধার কার্ডের ব্যবস্থাও করছেন শুভঙ্কর। এত ঝড়ঝাপটা সামলে ক্লান্ত লাগছে না। সহাস্য শুভঙ্কর বলে যান ওদের জন্য আরও অনেক দূর যেতে হবে। জানুয়ারি মাসে একটি অনুষ্ঠানের পরিকল্পনা রয়েছে তাঁর। যেখানে অন্যান্য স্টেশনের পথভোলা শিশুরা যোগ দেবে। বই পড়া ও তাঁবুতে থাকার পর রুমজাদের মুখের খুশির ঝিলিক তার সব পরিশ্রম ভুলিয়ে দেয়।

The post নেশার অন্ধকার থেকে পথভোলা শিশুদের আলোয় ফেরাচ্ছেন বাঙালি যুবক appeared first on Sangbad Pratidin.

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement
toolbarHome ই পেপার toolbarup মহানগর toolbarvideo শোনো toolbarshorts রোববার