লো কস্ট থেকে অরগ্যানিক-সুস্থসবল ঋতুযাপন আমার-আপনার সকলের। তাতে সঙ্গী প্যাডউওমেন। নিজেদের কাজের মধ্যে দিয়ে যাঁরা প্রত্যেক মহিলার স্বাস্থ্যসম্মত রজস্রাবের স্বপ্ন দেখেন। তেমনই কিছু মহিলাদের কথা। বর্ণিনী মৈত্র চক্রবর্তী
অক্ষয়কুমারের ছবির জনপ্রিয়তার খাতিরে ‘প্যাডম্যান’ শব্দটি আর নতুন নেই। রিল এবং রিয়েল দুই জগতের প্যাডম্যান বেশ জনপ্রিয়। অরুণাচলম মুরুগানান্থমকে চেনে না এখন এমন মানুষ বিরল। তাঁর সৃষ্টির জন্য আজ বহু মহিলা সুস্থ, পরিচ্ছন্ন ঋতুযাপন করতে পারছেন। তাঁরই মতো বেশ কয়েকজন ‘প্যাডউওম্যান’ এখন কাজ করছেন। তাঁদের হাত ধরেও এই দিনগুলোতে অনেক মহিলাই পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখতে সক্ষম হচ্ছেন। ফলত সংক্রমণ কমছে। ক্রমে ঋতুস্রাব ঘিরে যে নিষেধের বেড়াজাল বেষ্টন করে আছে মননে, তাও ভাঙছে। রইল এমনই কয়েকজন প্যাডউওম্যানের কথা।
মায়া বিশ্বকর্মা
মধ্যপ্রদেশের নরসিংহপুর জেলার বাসিন্দা মায়া নিজেই ২৬ বছর বয়স পর্যন্ত কোনওদিন কোনও স্যানিটারি ন্যাপকিন ব্যবহার করেননি। প্রথম যখন তাঁর পিরিয়ড শুরু হয়, তখন তাঁর এক আত্মীয় তাঁর হাতে কাপড় তুলে দেন। ফলত নানা ধরনের সংক্রমণের কবলে পড়েন তিনি। শরীরও খারাপ হতে থাকে। নিজের জীবনের তিক্ত অভিজ্ঞতা থেকেই তিনি ঠিক করেন এই সংক্রান্ত যাবতীয় নিষেধাজ্ঞা বা মেন্টাল ব্লকের জন্য তিনি লড়বেন। মায়া চাষি পরিবারের মেয়ে। অনেক কষ্ট সত্ত্বেও তাঁর মা-বাবা তাঁর পড়াশোনা চালিয়ে যান। জব্বলপুরের একটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বায়োকেমিস্ট্রি নিয়ে পড়াশোনা করেন মায়া। দিল্লির এইম্স-এ গবেষণা করতে করতে ইউ. এস. চলে যান লিউকেমিয়া নিয়ে রিসার্চ করতে। ভারতে ফিরে আসার বছর দুয়েকের মধ্যে শুরু করেন ‘সুকর্মা ফাউন্ডেশন’। নিজের তাগিদে লো কস্ট প্যাড তৈরি করে মহিলাদের মধ্যে তা বিতরণ করতে থাকেন। প্যাডম্যান মুরুগানান্থম-এর সঙ্গে দ্যাখা করে তাঁর পুরো সেট-আপটি সরজমিনে দেখে আসেন। সেই অনুপ্রেরণায় শুরু করেন লো কস্ট প্যাড মেকিং।
[আরও পড়ুন : সাবধান, কুকুরের লোমের চেয়েও বেশি জীবাণুর বাস আপনার দাড়িতে]
সুহানি মোহন
বিত্তশালী পরিবারের কন্যা সুহানি বুঝতেই পারতেন না কেন মহিলারা রজস্রাবে স্যানিটারি ন্যাপকিন ব্যবহার না করে কাপড় ব্যবহার করেন। মুম্বই নিবাসী সুহানির জীবনের লক্ষ্যই পুরো পাল্টে যায় ‘গুঞ্জ এনজিও’-র প্রতিষ্ঠাতা আনসু গুপ্তা-র সঙ্গে কথা বলে। ক্রমে সুহানি বুঝতে পারেন যে, শুধু একই কাপড় ব্যবহার নয়, ঋতুস্রাব নিয়ে মহিলাদের মনে নানা দ্বন্দ্ব, নানা ধরনের নেতিবাচক চিন্তাভাবনা রয়েছে, যা একেবারে শিকড়ে গেঁথে রয়েছে। এই মানসিকতা বদলানোর প্রয়োজন। মাত্র তেইশ বছর বয়সে কম মূল্যে স্যানিটারি ন্যাপকিন তৈরি করার লক্ষ্যে এগিয়ে চলেন। এই উদ্দেশ্য নিয়ে অরুণাচলম মুরুগানান্থম-এর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। সেখানে গিয়ে দ্যাখেন, যে মেশিন তিনি ব্যবহার করছেন, তাতে দশ জন মহিলা মিলে খুব বেশি হলে পঞ্চাশটি প্যাড উৎপাদন করতে পারছেন। তাঁর প্রয়োজন আরও বেশি। এরপর ২০১৫ সালে আইআইটি কানপুরের ছাত্র কার্তিক মেহতার সঙ্গে তাঁর সাক্ষাৎ হয়। কার্তিক তাঁকে এই ব্যাপারে সাহায্য করেন। নিজেদের পুঁজি ও সংগ্রহ করা কিছু অর্থ দিয়ে তৈরি করেন ‘সরল ডিজাইন্স’ নামক এক সংস্থা। কার্তিক এমন একটি মেশিন বানান, যেখান থেকে প্রতিদিন প্রায় ৫০,০০০ প্যাড তৈরি হয়। প্রথমে মুম্বইয়ের বিভিন্ন বস্তিতে গিয়ে ৩টে প্যাড দশ টাকায় বিক্রি করতেন। কিন্তু এখানেও বাদ সাধল ‘অ্যাবজর্বেন্সি’ অর্থাৎ কম দামের প্যাডগুলির শোষণ করার ক্ষমতা কম। এরপর একদম কমপ্লিট ড্রাই প্যাড উৎপাদন করতে থাকে এই সংস্থা। ক্রমে ঘরে ঘরে মহিলাদের হাতে পৌঁছতে থাকে সুস্থ থাকার চাবিকাঠি। মোহন-মেহতা দ্বৈতভাবে এখন মহারাষ্ট্রের বাইরে বিভিন্ন জায়গায় তাঁদের বানানো মেশিনও বিক্রি করছেন।
[আরও পড়ুন : মনের অসুখে হোমিওই অব্যর্থ, জানেন কীভাবে?]
প্রীতি রামাদোস
প্লাস্টিক ফ্রি, বায়োডিগ্রেডেব্ল স্যানিটারি ন্যাপকিন বানানোর সুবাদে তাঁকে তামিলনাড়ুতে প্যাডউওম্যান বলা হয়। চেন্নাইয়ের আন্নামালাই বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণার স্কলার প্রীতির গবেষণার বিষয়ও এটি। তাঁর দাবি একমাসের মধ্যেই এই জীবাণুবিয়োজ্য প্যাডগুলি ডিগ্রেড করে যায়। তাঁর মতে, বাজারে উপলব্ধ প্রোডাক্টগুলোতে প্রচুর পরিমাণে কাঠের পাল্প ব্যবহার করা হয়। তার বদলে সেলুলোজ ডেরিভেটিভ্স, প্রাকৃতিক নিয়মে তৈরি পলিস্যাকারাইড্স, পলিমারস ব্যবহার করা হয় তাঁর তৈরি স্যানিটারি ন্যাপকিনগুলোতে। তাঁর এই প্যাড গ্রোথ সেন্টারের সমস্ত পরীক্ষাতে উত্তীর্ণও হয়েছে। এর লিকুইড ধরে রাখার ক্যাপাসিটিও খুব ভাল। প্রীতির গবেষণার উদ্দেশ্যই ইকো-ফ্রেন্ডলি এবং পকেট-ফ্রেন্ডলি প্যাড উৎপাদন করা।
The post দেশের এই ‘প্যাডউওম্যান’দের গল্প জানলে গর্ব হবে আপনার appeared first on Sangbad Pratidin.