shono
Advertisement

কৃষি আইন প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত কেন্দ্রের, ফিরে দেখা আন্দোলনের সালতামামি

দীর্ঘদিন ধরেই বিতর্ক ঘনিয়ে উঠেছিল তিন কৃষি আইনকে ঘিরে।
Posted: 02:13 PM Nov 19, 2021Updated: 08:56 PM Nov 19, 2021

সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: বিতর্কিত তিন কৃষি আইন (Farm Law) প্রত্যাহার করেছে কেন্দ্র। গুরু নানকের জন্মদিনে বিরাট ঘোষণা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির (PM Modi)। আইন প্রত্যাহারের পরই আন্দোলনরত কৃষকদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রীর অনুরোধ, ‘এবার আপনারা বাড়ি ফিরে যান।’ প্রধানমন্ত্রী জানিয়ে দিয়েছেন, সংসদের আসন্ন অধিবেশনেই এই তিনটি বিতর্কিত আইন (Farm Laws) প্রত্যাহারের আইনি প্রক্রিয়া শুরু হবে। গত এক বছরেরও বেশি সময় ধরেই নানা বিতর্ক ঘনিয়ে উঠেছিল তিন কৃষি আইনকে ঘিরে। সংক্ষেপে দেখে নেওয়া যাক কৃষি আইনের সময় সারণী।

Advertisement

জুন ২০২০: তিন কৃষি আইনের প্রস্তাব কেন্দ্রের। শুরুতেই এই তিন বিলের প্রতিবাদ করে ভারতীয় কিষান মোর্চা। তাদের তরফে একটি বিবৃতি দিয়ে এই বিলের প্রতিবাদ জানিয়ে দাবি করা হয়, এর ফলে ফসলের এমএসপি তথা ন্যূনতম সহায়ক মূল্য ব্যবস্থার অবসান হবে। তা নিয়ন্ত্রণ করবে বড় সংস্থাগুলি।

সেপ্টেম্বর ২০২০: সংসদে পেশ করা হল কৃষি বিল। লোকসভায় তা পাশ হওয়ার পরে রাজ্যসভাতেও ধ্বনিভোটে পাশ হয়ে যায়। যাকে ঘিরে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করে পাঞ্জাবের কৃষকরা। তাঁরা তিন দিনের ‘রেল রোকো’ শুরু করেন।

[আরও পড়ুন: Farm Laws: এখনই আন্দোলন থামছে না, কৃষি আইন প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত ঘোষণার পরও অনড় কৃষকরা]

অক্টোবর ২০২০: নয়া কৃষি আইনের বিরোধিতা করে সুপ্রিম কোর্টে জমা পড়ে বেশ কিছু পিটিশন। তার পরিপ্রেক্ষিতে কেন্দ্রের কাছ থেকে প্রতিক্রিয়া জানতে চায় শীর্ষ আদালত। নয়া আইনের প্রতিবাদে পদত্যাগের হুঁশিয়ারি দেন পাঞ্জাবের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী অমরিন্দর সিং।

নভেম্বর ২০২০: গোটা দেশে শুরু হয় কৃষি আইন বিরোধী বিক্ষোভ। ২৫ নভেম্বর দিল্লি অভিযানের ডাক দেন পাঞ্জাব ও হরিয়ানার কৃষকরা। কিন্তু রাজধানীর সীমান্তে তাঁদের আটকে দেয় দিল্লি পুলিশ। ছোঁড়া হয় কাঁদানে গ্যাস, জলকামান। এরপর ২৮ নভেম্বর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ কৃষকদের সঙ্গে কথা বলতে চাইলেন। তাঁর সেই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করলেন কৃষকরা। বিক্ষোভকারীরা জানিয়ে দেন, যন্তর মন্তরে বিক্ষোভ চালিয়ে যাবেন তাঁরা। ২৯ নভেম্বর ‘মন কি বাত’ রেডিও অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি দাবি করলেন, সমস্ত রাজনৈতিক দলগুলি কৃষকদের কাছে নানা প্রতিশ্রুতি দিলেও তা পালন করেননি। কিন্তু তাঁর সরকার কথা রেখেছে।

[আরও পড়ুন: বন্দুক হাতে ভরা আদালত কক্ষে বিচারকের উপর ‘হামলা’ পুলিশকর্মীর, চাঞ্চল্য বিহারের মধুবনীতে]

ডিসেম্বর ২০২০: ৩ ডিসেম্বর প্রথমবার মুখোমুখি বৈঠকে বসতে দেখা গেল কৃষক পক্ষ এবং কেন্দ্রকে। দু’দিন পরই হল দ্বিতীয় বৈঠক। কিন্তু রফা সূত্র রইল অধরাই। ৮ ডিসেম্বর ভারত বন্ধের ডাক দিলেন কৃষকরা। ফেরালেন আইন সংশোধনের প্রস্তাব। ১১ ডিসেম্বর তিন কৃষি আইনের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হল ভারতীয় কিষান ইউনিয়ন। ওই মাসেই আরও কয়েকটি কৃষক-কেন্দ্র বৈঠকের পরে ৩০ ডিসেম্বর কিছুটা নরম হল কেন্দ্র। কৃষি আইনে কোনও পরিবর্তন করতে রাজি না হলেও বিদ্যুৎ সংশোধনী বিল ২০২০ -তে পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত থেকে সরে এল মোদি সরকার। পাশাপাশি ফসলের নষ্ট অংশ পোড়ানোর অভিযোগে কৃষকদের জরিমানাও করা হবে না বলে জানিয়ে দেয় কেন্দ্র।

জানুয়ারি ২০২১: ৪ ডিসেম্বর সপ্তম দফার আলোচনাও ব্যর্থ হল। ১২ জানুয়ারি তিন কৃষি আইন বলবৎ করায় স্থগিতাদেশ দিল সুপ্রিম কোর্ট। ২৬ জানুয়ারি সাধারণতন্ত্র দিবসে কৃষকদের ট্র্যাক্টর মিছিল ঘিরে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ হয় বিক্ষোভকারীদের। লাল কেল্লায় নিশান সাহিবের পতাকা উত্তোলন করে বিক্ষোভকারীরা। সংঘর্ষে মৃত্যু হয় এক বিক্ষোভকারীর।

ফেব্রুয়ারি ২০২১: মার্কিন পপ তারকা রিহানা, পরিবেশকর্মী গ্রেটা থুনবার্গের মতো পশ্চিমের সেলিব্রিটিরা কৃষক আন্দোলন নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় সরব হন। গ্রেটার বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করল দিল্লি পুলিশ।

মার্চ ২০২১: ৫ মার্চ পাঞ্জাবের বিধানসভায় রাজ্য থেকে কৃষি আইন প্রত্যাহারের প্রস্তাব পাশ হয়।

মে ২০২১: ২৭ মে কৃষকদের বিক্ষোভের ৬ মাস পূর্ণ হওয়ায় কালা দিবস পালন করলেন কৃষকরা। ২০২৪ পর্যন্ত আন্দোলন চালানোর হুঁশিয়ারি দিলেন বিক্ষোভকারীরা।

জুলাই ২০২১: ২২ জুলাই সংসদের বাদল অধিবেশ শুরুর দিনেই দিল্লির যন্তর মন্তরে শুরু হল কিষান সংসদ। সেখানে সমান্তরাল বাদল অধিবেশনে কৃষি আইন প্রত্যাহার আন্দোলন নিয়ে বৈঠক করলেন কৃষকরা।

আগস্ট ২০২১: ৭ আগস্ট কিষান সংসদে যোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন দেশের ১৪টি বিরোধী দলের নেতা। ২৮ আগস্ট হরিয়ানার কার্নালে কৃষকদের উপরে লাঠিচার্জ পুলিশের।

সেপ্টেম্বর ২০২১: ৭ সেপ্টেম্বর কার্নালে পৌঁছন বিপুল সংখ্যক বিক্ষোভকারীরা। ১১ সেপ্টেম্বর নিজেদের অবস্থান থেকে পিছু হটে তদন্তের আশ্বাস দিল হরিয়ানা সরকার।

অক্টোবর ২০২১: ৩ অক্টোবর উত্তরপ্রদেশের লখিমপুরে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী অজয় মিশ্রের ছেলে আশিস মিশ্রর গাড়ির চাকায় পিষ্ট হয়ে মৃত্যু চার কৃষকের। ঘটনায় মৃত্যু হয় আর চারজনের। ১০ অক্টোবর অভিযুক্ত আশিসের ১৪ দিনের বিচার বিভাগীয় হেফাজতের নির্দেশ।

নভেম্বর ২০২১: ১৯ নভেম্বর অবশেষে কৃষকদের বিক্ষোভকে মেনে নিয়ে আইন প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত কেন্দ্রের। এইদিনই জাতির উদ্দেশে ভাষণে প্রধানমন্ত্রী জানিয়ে দেন, সংসদের আসন্ন অধিবেশনেই এই তিনটি বিতর্কিত আইন (Farm Laws) প্রত্যাহারের আইনি প্রক্রিয়া শুরু হবে।

 

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement