সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: জল্পনা সত্যি করে আবার ক্ষমতা বদল ঝালদা পুরসভার। কংগ্রেসের কাছ থেকে ছিনিয়ে নিয়ে পুরুলিয়ার ঝালদা পুরসভা দখল করল শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস। বুধবার রাতে পুরুলিয়ার বাঘমুন্ডির তৃণমূল বিধায়ক সুশান্ত মাহাতোর কার্যালয়ে নির্দল পুরপ্রধান শিলা চট্টোপাধ্যায় -সহ কংগ্রেসের ৪ কাউন্সিলর সদলবলে তৃণমূল যোগদান করেন। এই ঘটনার প্রেক্ষিতে ফের প্রদেশ কংগ্রেস নেতৃত্বকে নিশানা করলেন কৌস্তভ বাগচি। তাঁর কথায়, “তৃণমূলের সঙ্গে ঘর করা আর বিষধর সাপের সঙ্গে ঘর করা একই।”
এদিন তাঁদের হাতে দলীয় পতাকা তুলে দেন এই যোগদানের নেতৃত্ব দেওয়া বাঘমুন্ডির তৃণমূল বিধায়ক তথা রাজ্য যুব তৃণমূলের সহ-সভাপতি সুশান্ত মাহাতো, পুরুলিয়া জেলা তৃণমূলের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট তথা পুরুলিয়া জেলা পরিষদের সহ-সভাধিপতি সুজয় বন্দ্যোপাধ্যায়। তৃণমূলে যোগ দেওয়া কংগ্রেসের ৪ কাউন্সিলরের নাম নিহত কংগ্রেস কাউন্সিলর তপন কান্দুর ভাইপো মিঠুন কান্দু, বিজয় কান্দু, পিন্টু চন্দ্র ও সোমনাথ (রঞ্জন) কর্মকার। বিধায়ক বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উন্নয়নের কর্মযজ্ঞে শামিল হতে চেয়েছিলেন কংগ্রেসের ৪ কাউন্সিলর-সহ নির্দল পুরপ্রধান। দলীয় নির্দেশ মেনে আমরা তাঁদেরকে তৃণমূলে গ্রহণ করলাম।”
[আরও পড়ুন: সংরক্ষিত আসনে টেট পাশের ন্যূনতম নম্বর কত? স্পষ্ট করে দিল হাই কোর্টের তৃতীয় বেঞ্চ]
এই নির্দল পুরপ্রধান শিলা চট্টোপাধ্যায় ২০২২ সালে পুর নির্বাচনে ফলাফলের দিনই জয়ী হয়ে তৃণমূলের পতাকা ধরেন। ফলে তৃণমূলের পাঁচ কাউন্সিলর পুর নির্বাচনে জয়লাভ করলেও ওই নির্দল কাউন্সিলর দলে আসায় তাদের আসন সংখ্যা বেড়ে হয়েছিল ৬। কংগ্রেস পেয়েছিল পাঁচটি আসন। পরবর্তীকালে আরেক নির্দল কাউন্সিলর সোমনাথ কর্মকারের সমর্থন নিয়ে তৃণমূল কংগ্রেস ঝালদার পুর বোর্ড গঠন করে। দলীয় নির্দেশের বিরুদ্ধে সোমনাথ কর্মকার পুর নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করায় তৃণমূল তাঁকে সাময়িক সাসপেন্ড করেছিল।
পুরপ্রধান হন তৃণমূলের সুরেশ আগরওয়াল। উপপুরপ্রধানের চেয়ার পান শাসকদলের সুদীপ কর্মকার। কিন্তু ছ’মাস পার হতে না হতেই পুরপ্রধানের বিরুদ্ধে অনাস্থা আনেন কংগ্রেসের পাঁচ কাউন্সিলর। তাঁকে সমর্থন করেন দুই নির্দল কাউন্সিলর শিলা চট্টোপাধ্যায় ও সোমনাথ কর্মকার। তবে এর আগেই শিলা দলীয় স্তরে জানিয়ে শাসকদলের সঙ্গ ত্যাগ করেন। এরপর নানান টানাপোড়নের পর হাই কোর্টের নির্দেশে চলতি বছরে পুরপ্রধান হন নির্দলের শিলা চট্টোপাধ্যায়। উপপ্রধানের চেয়ার পান কংগ্রেসের পূর্ণিমা কান্দু। পুরপ্রধান শীলা চট্টোপাধ্যায়ের স্বামী কালিপদ চট্টোপাধ্যায় ও নির্দল কাউন্সিলর সোমনাথ কর্মকার কংগ্রেসে যোগদান করেন। কিন্তু শিলা নির্দল হয়েই থাকেন।
[আরও পড়ুন: ইন্ডিয়া-ভারত বিতর্কে মুখ খোলা নয়, সনাতন ধর্ম নিয়ে সরব হন, মন্ত্রীদের নির্দেশ মোদির]
এদিকে কংগ্রেসের সুখের সংসার আবার তাসের ঘরের মতো ভেঙে গেল। গত জুলাই মাস থেকে জল্পনা চলছিল শিলা সহ কংগ্রেসের একাধিক কাউন্সিলর তৃণমূলে যোগ দেবেন। নির্দল পুরপ্রধান শিলা চট্টোপাধ্যায় জুলাই মাসের শেষের দিকে কলকাতায় থাকায় জল্পনা আরও বাড়ে। ফের তিনি তৃণমূলে এসে জানান, “কংগ্রেসের সমর্থনে ঝালদা পুরবোর্ডে কাজ করা যাচ্ছিল না। তাই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উন্নয়নের শরিক হতে এবং ঝালদা পুর শহরের উন্নতির কারণেই তৃণমূলে ফিরলাম। ” এই বিষয়ে প্রতিক্রিয়া নিতে পুরুলিয়া জেলা কংগ্রেস সভাপতি তথা প্রাক্তন বিধায়ক নেপাল মাহাতোকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি কোন সাড়া দেননি। এই যোগদানের ফলে কংগ্রেসের আসন সংখ্যা কমে হল মাত্র দুই। এই যোগদানের ফলে শাসকদলের আসন সংখ্যা বেড়ে হল ১০।