সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ভাষা দিবসের অনুষ্ঠানে চিত্রশিল্পী শুভাপ্রসন্নর মন্তব্য নিয়ে বিতর্ক বেড়েই চলেছে। শুভাপ্রসন্নের মন্তব্যকে মঞ্চ থেকেই সংকীর্ণ মানসিকতার পরিচয় বলে কার্যত নস্যাৎ করে দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। তারপর সুবোধ সরকার, নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়ির মতো বিশিষ্টরাও বিঁধেছেন শুভাপ্রসন্নকে। এবার আরও খানিকটা সুর চড়াল তৃণমূল।
ঠিক কী বলেছিলেন শুভাপ্রসন্ন (Subhaprasanna)? মঙ্গলবার ভাষা দিবসের মঞ্চে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সামনেই চিত্রশিল্পী বলেন, “বাংলা ভাষার উচ্চারণ, বাংলা ভাষার তাৎপর্য, বাংলার ভাষার বৈশিষ্ট্য থেকে আমরা সরে আসছি। যে শব্দগুলোকে আমরা কখনও বাংলা বলি না, ভাবি না, সেই শব্দ এখন বাংলা ভাষায় ঢুকছে। আমরা কোনও দিন বাংলা ভাষায় পানি ব্যবহার করি না। আমরা কোনও দিন কখনও দাওয়াত দিই না। সুতরাং, ভাবতে হবে কোন ভাষা আমাদের ভাষা।”
[আরও পড়ুন: ভ্যালেন্টাইনস ডে-তে শাশুড়িকে নিয়ে পালাল জামাই, আদালতের দ্বারস্থ ‘হতভম্ব’ শ্বশুর]
ওই একই মঞ্চে দাঁড়িয়ে নাম না করে শুভাপ্রসন্নর ওই মন্তব্যকে সংকীর্ণ মানসিকতার বলে দেন মুখ্যমন্ত্রী। বিভিন্ন ভাষা থেকে আসা শব্দভাণ্ডারকে স্বাগত জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘জল বা ওয়াটারকে কেউ কেউ পানি বলে। এটা আপনাকে মেনে নিতে হবে। মাকে কেউ আম্মা বলে। এটাকে মেনে নিতে হবে। ওরা অতিথি সেবাকে দাওয়াত বলে। এটা বাংলাদেশের ভাষা। যাঁরা ও পার থেকে এ দেশে এসেছেন, তাঁরা এই ভাষাটাকে গ্রহণ করেছেন। আমি মাতৃভাষাকে চেঞ্জ করতে পারি না। যেটা শিখে এসেছে, সেটা চেঞ্জ করবে কী ভাবে।’’ শুভাপ্রসন্নর বক্তব্যকে যে তিনি মান্যতা দিচ্ছেন না তা ফুটে ওঠে চোখে-মুখে। নিজের বক্তব্যে মুখ্যমন্ত্রী ব্যক্তিগতভাবে শুভাপ্রসন্নকে শ্রদ্ধা করেন জানিয়েও বুঝিয়ে দেন, শুভাপ্রসন্ন যে সংকীর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে ভাষার প্রসারের কথা বলছেন তার সঙ্গে একমত নন স্বয়ং মমতা। ভাষা মানে যে আসলে যোগাযোগের মাধ্যম তা বোঝাতে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘ল্যাঙ্গুয়েজ মিনস কমিউনিকেশন।’’ অধ্যাপক নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়ী মুখ্যমন্ত্রীর আগেই তাঁর বক্তৃতায় বিভিন্ন ভাষার অজস্র শব্দের সংমিশ্রণে বাংলার শব্দভাণ্ডার বৃদ্ধির কথা বলেন। সেই প্রসঙ্গ টেনে শুভাপ্রসন্নকে নস্যাৎ করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘আমি নৃসিংহদার সঙ্গে একমত। যত বেশি বাংলা কথায় শব্দ বৃদ্ধি পাবে, তত বেশি বাংলা ভাষার বৃদ্ধি হবে। আমরা যদি হৃদয়টাকে ছোট করে রাখি, তা হলে হৃদয় কোনও দিনই বৃদ্ধি পাবে না। যত বেশি দেওয়া-নেওয়া হবে, মূল ঐতিহ্যটাকে ঠিক রেখেই আমি ভাষাটাকে বাড়াব।’’ শুভাপ্রসন্নকে তোপ দাগেন কবি সুবোধ সরকারও (Subodh Sarkar)।
[আরও পড়ুন: মুখ্যমন্ত্রীর হুঁশিয়ারির পরই পিছু হঠল বিনয়-বিমলরা! ২৩ ফেব্রুয়ারি বন্ধ হচ্ছে না পাহাড়ে]
এসব সত্ত্বেও শুভাপ্রসন্ন নিজের অবস্থানে অনড়। তিনি বুধবারও এক সংবাদমাধ্যমকে বলেন, মুখ্যমন্ত্রী হয়তো রাজনৈতিক বাধ্যবাধকতার জন্য একথা বলছেন। আমার তেমন কোনও বাধ্যবাধকতা নেই। আমার যা মনে হয়, তাই বলব। যারা যারা তাঁর মন্তব্যের বিরোধিতা করছেন, তাঁদের ‘তেলবাজ’ বলেও তোপ দেগেছেন তিনি। যার পালটা এসেছে তৃণমূলের তরফে। এদিন বিষয়টি নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষ (Kunal Ghosh) সুর আরও খানিকটা চড়িয়ে বলেন,‘‘জলের বহু প্রতিশব্দ রয়েছে। পানি বাংলা শব্দ। শুভাপ্রসন্ন কাক আঁকেন। ওঁর কাক জল খায়, না পানি খায় তা আমি বলতে পারব না। আমি বলব, আপনি কাক আঁকছেন আঁকুন। এসবের মধ্যে ঢুকতে যাবেন না।’’