অর্ণব দাস: বিধানসভা ভোট যত এগিয়ে আসছে রাজনৈতিক হিংসার ঘটনা তত বাড়ছে। এই প্রতিহিংসার রাজনীতির মাঝেই উলটো পথে হাঁটতে দেখা গেল বারাসত দুই নম্বর ব্লকের শাসনের তৃণমূল (Trinamool Congress) নেতা-কর্মীদের। রবিবার ব্রিগেড (Brigade) থেকে হারিয়ে যাওয়া ৭০ বছরের এক বৃদ্ধ BJP কর্মীকে আপ্যায়ন করে খাইয়ে বাড়ি পৌছে দেওয়ার জন্য পুলিশের হাতে তুলে দিল শাসনের তৃণমূলের নেতা কর্মীরা। সোমবার সকালে শাসন থানায় মুচলেখা দিয়ে বৃদ্ধকে নিয়েও যায় তাঁর পরিবারের লোকেরা।
নরেন্দ্র মোদির (Narendra Modi) ব্রিগেড সভায় যোগ দিতে উত্তরবঙ্গের কালিয়াগঞ্জ থেকে বহু কর্মী-সমর্থকরা ট্রেনে করে কলকাতা এসেছিলেন। সেই দলে ছিলেন কালিয়াগঞ্জের বাসিন্দা ৭০ বছরের বৃদ্ধ প্রধান বর্মন। ব্রিগেড সমাবেশে এসে তিনি কোন ভাবে তাঁর পরিচিতদের থেকে হারিয়ে যান। তাঁর এলাকা থেকে ব্রিগেড আসা পরিচিতদের খুঁজতে অচেনা শহরেই হাঁটতে শুরু করেন তিনি। এভাবেই হন্যে হয়ে ঘুরতে ঘুরতে রাজারহাট হয়ে অচেনা পথেই তিনি চলে আসেন বারাসত ২ নম্বর ব্লকের শাসন এলাকায়। আনুমানিক রাত ৯টা নাগাদ শাসনের বাজার এলাকায় ওই বৃদ্ধকে ঘুরতে দেখে এলাকার তৃণমূল কর্মীদের সন্দেহ হয়। তাঁরাই তখন বৃদ্ধকে জিজ্ঞাসা করলে ব্রিগেড থেকে হারিয়ে যাওয়ার ঘটনাটি জানতে পারে। এরপর ওই কর্মীরাই খবর দেন শাসনের ফলতি বেলিয়াঘাটার তৃণমূলের অঞ্চল সভাপতি মেহেদি হাসনকে। তিনি এলে প্রথমেই বৃদ্ধের রাতের খাবারের ব্যবস্থা করেন। তারপর মেহেদি বাবু ও তার দলের কর্মীরা মিলে প্রধান বর্মনকে নিয়ে যান শাসন থানায়। ব্রিগেডে আসার জন্য দলের একটা কার্ড ছিল বৃদ্ধের কাছে। কার্ডের ফোন নম্বরে ফোন করে তৃণমূল কর্মীরাই যোগাযোগ করেন প্রধান বর্মনের বাড়ির লোকেদের সাথে।
[আরও পড়ুন: পুলিশ সুপারের পদ থেকে অপসারিত তৃণমূল প্রার্থী লাভলি মৈত্রের স্বামী, কারণ কী?]
এরপর রবিবার রাতে শাসন থানাতেই কাটান বৃদ্ধ এই বিজেপি কর্মী। সোমবার সকালে বৃদ্ধর পরিচিত ও পরিবারের লোকজন শাসনে থানার পুলিশের কাছে মুচলেকা দিয়ে প্রধান বর্মনকে নিয়ে কালিয়াগঞ্জের উদ্দেশ্যে রওনা দেন। পুলিশ গোটা ঘটনাটিই ভিডিও রেকর্ড করে রাখে। সোমবার পরিবার ও পরিচিতদের সঙ্গে কালিয়াগঞ্জ যাওয়ার আগে বৃদ্ধ প্রধান বর্মন বলেন, তিনি ব্রিগেডে হারিয়ে যাওয়ার পর অচেনা জায়গায় ঘুরতে ঘুরতে শাসনে চলে এসেছিলেন। তৃণমূলের কর্মীরাই তাঁকে রাতে খাইয়ে পুলিশের কাছে নিয়ে এসেছে।
এদিন বৃদ্ধকে নিতে শাসনে আসেন কালিয়াগঞ্জ ব্লকের বিজেপির পৌরমন্ডলের নেতা ভবানী চরন সিংহ। তিনি বলেন, এলাকার তৃণমূল কর্মীরাই তাঁদের সাথে যোগাযোগ করেছিল। শাসনের তৃণমূল কর্মীদের সৌজন্যতার প্রশংসাও করেন তিনি। শাসনের ফলতি বেলিয়াঘাটা অঞ্চলের তৃণমূলের সভাপতি মেহেদি হাসান জানান, “আমরা তৃণমূল করি বলেই আমাদের মধ্যে রাজনৈতিক সংস্কৃতি রয়েছে। উনি একজন বৃদ্ধ মানুষ। ব্রিগেড থেকে হারিয়ে যান। রাজনৈতিক সৌজন্যতা ও কর্তব্যের থেকে তাঁকে খাইয়ে-দাইয়ে পুলিশের কাছে তুলে দিয়েছি। বৃদ্ধের বাড়িতেও খবর দিয়েছি।”