সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: লোকসভা ভোটের মুখে কুড়মিরা তিনদিনের মহাজড়ুয়াহি কর্মসূচির মধ্য দিয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন তাদের পরবর্তী পদক্ষেপ কী হবে। আদিবাসী তালিকাভুক্ত করার দাবিতে তাদের আন্দোলন কোন পথে যাবে এই তিনদিনের বৈঠক বা সমাবেশে যেমন সিদ্ধান্ত হবে, তেমনই লোকসভা ভোটে তাদের অবস্থান কী হবে এই বৈঠক তা চূড়ান্ত করবে।
একদিক থেকে দেখতে গেলে ভোটের আগে আদিবাসী কুড়মি সমাজের ডাকে ৮-১০ মার্চ ‘ঐতিহাসিক কুড়মালি জিয়াউ মহাজড়ুয়াহি’ জঙ্গলমহলের শক্তি প্রদর্শনেরও কর্মসূচি। তারা এই কর্মসূচি থেকে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কাছে কার্যত বার্তা রাখবেন তাদের দাবি পূরণের। জঙ্গলমহলে তারা যে একটা বড় ফ্যাক্টর সেই বার্তাও তারা দেবেন। এই সমাবেশে কুড়মি জনজাতির ২০ লক্ষ মানুষ জমায়েত হবেন বলে তাদের দাবি।
[আরও পড়ুন: মোদির সভার দিন ১৫টি ছাত্র সংগঠনের মিছিল শহরে, তীব্র যানজটের আশঙ্কা]
গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে জঙ্গলমহলের জেলাগুলিতে খানিকটা হলেও শাসক দল-সহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলিকে চাপে ফেলে আদিবাসী কুড়মি সমাজ সহ এই জনজাতির আরও এক- দুটি সংগঠন। এই সংগঠনগুলি বাইরে থেকে নির্দল প্রতীকে দাঁড়ানো কুড়মি জনজাতির প্রার্থীদের সমর্থন করে। তবে তারা এককভাবে পঞ্চায়েতে বোর্ড গঠন করতে না পারলেও একাধিক আসন পান তারা। পুরুলিয়া জেলা পরিষদের যে সকল আসনগুলিতে আদিবাসী কুড়মি সমাজের সমর্থন ছিল সেই সব আসন মিলিয়ে নির্দলের প্রতীকে কুড়মি প্রার্থীদের মোট প্রাপ্ত ভোট ছিল ৬৮ হাজার ১৯৮।
আদিবাসী কুড়মি সমাজের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি শশাঙ্কশেখর মাহাতো জানান, “আদিবাসী তালিকাভুক্তের দাবিতে সেই ২০১৭ সাল থেকে আমাদের আন্দোলন চলছে। একাধিক গুরুত্বপূর্ণ কর্মসূচি নিয়েছি আমরা। কিন্তু রাজ্য সরকার এই বিষয়ে এখনও কোনও কমেন্ট- জাস্টিফিকেশন পাঠায়নি। সেই কারণেই আমরা এই মহাজড়ুয়াহি-র মধ্য দিয়ে সিদ্ধান্ত নেব আমাদের এই আন্দোলন কোন পথে যাবে। আগামী লোকসভা নির্বাচনে আমাদের অবস্থান কী হবে তা আমরা চূড়ান্ত করব।” আদিবাসী কুড়মি সমাজ আগেই জানিয়েছিল, তারা সরাসরি ভোটের রাজনীতিতে যাবেন না। তারপরও গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে যেভাবে এই সামাজিক সংগঠন নির্দলের প্রতীকে দাঁড়ানো কুড়মি জনজাতির প্রার্থীদের সমর্থন করে পরোক্ষভাবে ভোটের প্রচার করে তা নজিরবিহীন। লোকসভা ভোটেও তারা যে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নেবে তা মনে করছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল-ই। তবে এই বিষয়ে ওই রাজনৈতিক দলগুলি এখনই কিছু বলতে চাইছে না।
[আরও পড়ুন: সব বিচার রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত! বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়কে তোপ কল্যাণের]
এই কর্মসূচি সফল করতে জঙ্গলমহল জুড়ে মাস তিনেক ধরে তাদের প্রচার চলছে। ৮ ও ৯ মার্চ তাদের অভ্যন্তরীণ বৈঠক। যার নাম দেওয়া হয়েছে ‘ঘারুয়া’। এবং ১০ মার্চ তাদের প্রকাশ্য সমাবেশ। ওই কর্মসূচির নাম দিয়েছেন তারা ‘সদরিয়া’। এই সমাবেশে কুড়মি জনজাতিদের ‘হরমিতান’ অর্থাৎ তাদের সহযোগী জাতিদেরও আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে তাদের জনজাতির সমস্ত রাজনৈতিক দলের জনপ্রতিনিধি সহ বুদ্ধিজীবী মানুষজনকে।