চঞ্চল প্রধান, হলদিয়া: ছোট থেকেই মেধাবী, আবার ছটফটেও। তাই ‘ফড়িং’ নামেই তাকে চিনত মহিষাদল। তখন কে-ই বা জানত, ‘লালগ্রহ’ মঙ্গলে (Mars) কপ্টার ওড়ায় নাম জড়িয়ে যাবে সেই একরত্তিরই! মঙ্গলগ্রহে ‘ইনজেনুইটি নামে প্রথম যে হেলিকপ্টার (Helicopter) উড়তে চলেছে, তার মূল কর্ণধার চিফ ইঞ্জিনিয়র জে বব বলরাম। আর লালগ্রহে কপ্টার ওড়ানোর সেই স্বপ্ন দেখা ও তার বাস্তবায়নের জন্য বলরামের সঙ্গে যে দুই বঙ্গসন্তানের নাম ইতিহাসে লেখা থাকবে, তাঁদেরই একজন বিজ্ঞানী অনুভব দত্ত ওরফে সেই ‘ফড়িং’। আর এক বঙ্গসন্তানের নাম সৌম্য দত্ত। বাড়ি বর্ধমানে। মেরিল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের এয়ারোডায়নামিক্স ও এয়ারোইলেকট্রিসিটি বিভাগের অধ্যাপক অনুভব। সাড়ে তিন দশক আগে যিনি তাঁর এই পরিকল্পনা প্রথম জানিয়েছিলেন একটি আন্তর্জাতিক সেমিনারে।
লাল গ্রহের কক্ষপথে পৌঁছনো মহাকাশযান থেকে মঙ্গলে নিরাপদে নামার জন্য যে প্যারাস্যুট বানানো হয়েছে, তা তৈরির সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে বঙ্গসন্তান সৌম্যর নাম। আর ঠিক ১৯ দিনের মাথায়, অর্থাৎ ১৮ ফেব্রুয়ারি মঙ্গলে মাটি ছোঁবে নাসার ‘ল্যান্ডার’। তারপরই লাল গ্রহে ল্যান্ডার থেকে বেরিয়ে পড়বে রোভার ‘পারসিভের্যান্স’। আকাশে চক্কর মারতে উড়বে হেলিকপ্টার ‘ইনজেনুইটি’।
[আরও পড়ুন: দেড় শতক পর প্রত্যাবর্তন! নিউইয়র্কে বিরল প্রজাতির পেঁচা দেখে মুগ্ধ নেটিজেনরা]
মঙ্গলে যে হেলিকপ্টার উড়তে চলেছে তার ওজন ১.৮ কিলোগ্রাম (৪ পাউন্ড)। যার মাথার উপরে রয়েছে দু’টি ব্লেড বা রোটর। প্রত্যেকটির ব্যাস ৪ ফুট বা ১.২ মিটার। রোভার পারসিভের্যান্স লালগ্রহের ‘জেজেরো ক্রেটারে’ পা ছোঁয়ানোর আড়াই মাস পর তার শরীর থেকে বেরিয়ে আসবে হেলিকপ্টার ‘ইনজেনুইটি’। তার পরের এক মাসে মোট পাঁচবার মঙ্গলের আকাশে উড়বে সেই হেলিকপ্টার। প্রতি বার দেড় মিনিটের জন্য। লাল গ্রহের পিঠ থেকে তা উড়বে সর্বাধিক ১০০ মিটার উচ্চতায়। অনুভবের এহেন কৃতিত্বের খবরে খুব খুশি তাঁর কাকা সঞ্জীব দত্ত-সহ মহিষাদলের মানুষ। উচ্চমাধ্যমিকে বাংলায় একাদশ স্থান পেয়েছিলেন অনুভব।
সঞ্জীববাবুর কথায়, “অনুভব মহিষাদলে জন্মগ্রহণ করলেও লেখাপড়া, বড় হয়ে ওঠা কলকাতায়। ছোট থেকেই খুব মেধাবী। খুব ছটফটে হওয়ায় নাম দেওয়া হয়েছিল ফড়িং। পুকুরে সাঁতার কাটার খুব নেশা ছিল। তাই সময় পেলেই কলকাতা থেকে মহিষাদলে নিজের গ্রামের বাড়িতে ছুটে আসত। তার তৈরি হেলিকপ্টার মঙ্গলগ্রহে উড়বে শুনে খুব আনন্দ লাগছে। ওর স্বপ্ন পূরণ হোক। আরও ভাল কিছু করুক, এটাই প্রার্থনা করি।”