সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: রুশ হামলা রুখে দিয়েছে ইউক্রেন। টুইটারে এমনটাই দাবি করলেন ইউক্রেন প্রেসিডেন্ট ভ্লোদিমির জেলেনস্কি। আটঘাঁট বেঁধে ইউক্রেনে (Russia Ukraine War) হামলা চালানোর পর তিনদিন কেটে গিয়েছে। তার পরও এখনও দেশটির দখল নিতে পারেনি রাশিয়া। রাজধানী কিয়েভে ঢুকে পড়লেও গোটা শহর এখনও মস্কোর হাতের বাইরে। কোন ছকে বিশাল রুশ বাহিনীকে রুখে দিচ্ছে ইউক্রেনীয় সেনা?
যুদ্ধ বিশারদরা বলছেন, সোভিয়েত ইউনিয়নের পূর্বতন রাষ্ট্রনায়ক স্তালিনের পথে হেঁটেই পুতিন বাহিনীকে মাত দিচ্ছে ইউক্রেন সেনা। স্তালিনের শেখানো ‘পোড়ামাটি নীতি’ আঁকড়ে হামলার গতি শ্লথ করছে ইউক্রেনীয় সেনা। কী এই ‘পোড়ামাটি নীতি’ বা স্কর্চড আর্থ নীতি?
শত্রুর হামলার গতি শ্লথ করাই হল ‘পোড়ামাটি নীতি’র মূল কথা। শত্রু সেনাকে বিপারে ফেলতে দেশীয় পরিকাঠামো অর্থাৎ সেতু, রাস্তা, শস্য, জলের উৎস ধ্বংস করে দেওয়া। যাতে শত্রু সেনা তাদের গন্তব্য পৌঁছনোর জন্য পদে পদে সমস্যা পড়ে। দ্রুত সামরিক সাহায্য তাদের কাছে পৌঁছে না যায়। শত্রু সেনার গতি শ্লথ হলে পরবর্তী প্রতিরোধ গড়ে তোলার সময় পাওয়া যায়। বারবার বাঁধা পেলে শত্রু সেনার মনোবল ভাঙলে বাধ্য। প্রথম দিনের পর থেকেই এই নীতি নিয়েছে ইউক্রেনীয় বাহিনী।
[আরও পড়ুন: ‘আশ্রয় নয়, অস্ত্র চাই’, বাইডেনকে সপাট জবাব ইউক্রেন প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কির]
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় হিটলারের কায়দায় ইউক্রেনে হামলা করে রুশ বাহিনী। ডনবাস, ক্রিমিয়া এবং বেলারুশ-তিনদিক থেকে ঘিরে ইউক্রেনে হামলা চালিয়েছিল রাশিয়া। ঝড়ের গতিতে এগিয়ে দ্বিতীয় দিনে কিয়েভের কাছাকাছি পৌঁছেও গিয়েছিল তারা। কিন্তু তার পর থেকে আর বিশেষ অগ্রগতি হয়নি রুশ বাহিনীর। উলটে কড়া প্রতিরোধের মুখে পড়তে হয়েছে তাদের। জানা গিয়েছে, ক্রিমিয়ার কাছে খারসন অঞ্চলের (Kherson region) হেনিসচেক ব্রিজ (Henichesk Bridge) টপকে ফেললেই স্থানীয় শহরটির দখল নিয়ে ফেলত রুশ সেনা (Russian Troop)। রুশ বাহিনীর সাঁজোয়া গাড়ি ব্রিজ টপকে শহরে ঢুকে পড়তে দেখে ভাইটালি সাকুন ভলোডমায়রোভিচ তখনই শরীরে বোমা বেঁধে ব্রিজের উপরে উঠে টিপে দেন মারণ ট্রিগার। বিস্ফোরণের আঘাতে মুহূর্তে ভেঙে পড়ে হেনসচেক ব্রিজ। এটাই দেখেই বোঝা যায় পোড়ামাটি নীতি নিয়েছে ইউক্রেনের বাহিনী।
প্রসঙ্গত, খিষ্টপূর্ব পঞ্চম শতকে চিনা যুদ্ধবিশারদ সান ঝু তাঁর ‘আর্ট অফ ওয়ার’-এ প্রথম এই কৌশলের কথা লিখেছিলেন। নেপোলিয়নের রাশিয়া আক্রমণের সময় জার প্রথম আলেকজন্ডারের সেনা প্রথম সেই নীতি প্রয়োগ করেছিল। হিটলার বাহিনীর হামলাও একই কায়দায় ঠেকিয়েছিলেন সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রেসিডেন্ট জোশেফ স্তালিন। এ বার রুশ বাহিনীর ত্রিমুখী হানা ঠেকাতে সেই কৌশলই বেছে নিন ইউক্রেন সেনা।