এবছর করোনা আবহেই পুজো। স্বাস্থ্যবিধি মেনে ক্লাবগুলিতে চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি৷ কলকাতার বাছাই করা কিছু সেরা পুজোর সুলুকসন্ধান নিয়ে হাজির sangbadpratidin.in৷ আজ পড়ুন হিন্দুস্তান ক্লাবের পুজোর প্রস্তুতি৷
সুলয়া সিংহ: ফুসফুস। জীবনীশক্তির অমৃতসুধা ও দিন যাপনের ক্লান্তির গরলের কুরুক্ষেত্র শরীরের এই অঙ্গ। বাতাসের কোলে চেপে একদিকে যখন প্রকৃতির অমৃত পৌঁছে যায় সেই ফুসফুসে, তখন অন্যদিকে ক্লান্তির গরল প্রশ্বাস বায়ু হয়ে মিশে যায় অনাবিক সবুজে। আরও গভীরভাবে দেখলে, এই ফুসফুসেই যেন দশভূজার প্রাণ বায়ু ও মহিষাসুরের মৃত্যুর হাতছানির অদৃশ্য যুদ্ধ চলে প্রতিনিয়ত। বিশ্বজুড়ে অতিমারীর মধ্যে যা আরও প্রকট হয়ে উঠেছে। আর এমন সংকটের মুহূর্তে প্রাণ বায়ুর সন্ধান দিতেই সেজে উঠছে হিন্দুস্তান ক্লাব। যাদের এবারের বিষয়ভাবনা প্রাণ বায়ু, Wind of Life।
গড়িয়াহাট মোড় থেকে দেশপ্রিয় পার্কের দিকে এগিয়ে যাওয়ার সময় ডানহাতে পড়ে এই পুজোটি। প্রতিবছরই দর্শনার্থীদের নতুন সৃষ্টি উপহার দেয় এই পুজো। তাই প্রত্যাশাও থাকে তুঙ্গে। এবার কোভিড পরিস্থিতিতে একবুক প্রাণ বায়ুর প্রশান্তিই শারদীয়ার নিবেদন শিল্পী অয়ন সাহার। মানব সমাজের লাগামহীন ভোগ-বিলাসে আজ বিধ্বস্ত দুনিয়া। প্রযুক্তির অতিরিক্ত ব্যবহার আর বিলাশবহুল জীবনযাপনই যেন মরণফাঁদ পেতে রেখেছে। প্রতিমুহূর্তে বিপদের হাতছানি। তাই এই পরিস্থিতিতে প্রয়োজন নিশ্চিন্ত প্রাণ বায়ুর। মণ্ডপের শুরুতেই সেই প্রাণের স্পন্দন অনুভূত হবে। আর অন্দরে প্রতিমাশিল্পী মোহন মণ্ডলের হাতে গড়া মমতাময়ী মা দুর্গা নিজের আঁচলে করে আগলে রেখেছেন জীবনধারা।
[আরও পড়ুন: ক্রান্তিকালে নতুন করে মানবতার বন্ধনকে চিনতে শেখাবে সল্টলেকের এই পুজো]
মণ্ডপসজ্জার উপকরণেও রয়েছে কঠিন সময়ে সাধারণ মানুষের পরিশ্রম-হাহাকার-যন্ত্রণার কথা। গোটা প্যান্ডেলই মূলত তৈরি বস্তা দিয়ে। যে বস্তাগুলিই সংকটের দিনে মানুষের কাছে খাদ্যসামগ্রী পৌঁছে দিয়েছিল। নানা রঙের সেই বস্তা দিয়েই তৈরি হয়েছে বিরাট ফুসফুস। বস্তার পাশাপাশি ব্যবহার করা হয়েছে বাঁশ ও শাড়ি। তবে এবার দুর্গা দর্শন করতে হবে বাইরে থেকেই। দিনে ড্রাইভ ইন দর্শনের ব্যবস্থা করছে ক্লাব।
মহিলা পরিচালিত ক্লাবের অন্যতম সদস্যা বীথি বাসু বলছিলেন, “কোভিড প্রোটোকল থেকে মেনে এবার বন্ধ ভোগের আয়োজনও। অঞ্জলি দেওয়ার নিয়মও বদলে যাচ্ছে। তাছাড়া অন্যান্য মতো সবাই মিলে এবার সিঁদুর খেলাও হবে না। আর এবারের মতো কার্নিভাল বাতিল হয়ে যাওয়ায় একাদশীতেই হবে মায়ের বিসর্জন। প্রার্থনা একটাই। মায়ের আশীর্বাদেই যেন সতেজ প্রাণ বায়ুর সন্ধান মেলে।” মহামারী পরিস্থিতিতে একবুক প্রাণ বায়ুর খোঁজে আপনি আসছেন তো?
