shono
Advertisement

মণ্ডপজুড়ে মেলার আমেজ, উৎসবে অন্যকে আপন করে নেওয়ার গল্প বলছে এই পুজো

দুর্দিনে স্বজনের চেয়ে বড় প্রাপ্তি আর কী-ই বা হতে পারে!
Posted: 09:03 PM Oct 16, 2020Updated: 09:03 PM Oct 16, 2020

এবছর করোনা আবহেই পুজো। স্বাস্থ্যবিধি মেনে ক্লাবগুলিতে চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি৷ কলকাতার বাছাই করা কিছু সেরা পুজোর সুলুকসন্ধান নিয়ে হাজির sangbadpratidin.in৷ আজ পড়ুন বেলেঘাটা ৩৩ পল্লি র পুজোর প্রস্তুতি৷

Advertisement

সুলয়া সিংহ: দুর্গাপুজো (Durga Puja) বাঙালির সবচেয়ে বড় মিলনক্ষেত্র। রাগ-অভিমান-কষ্ট ভুলে একসঙ্গে উৎসবে মেতে ওঠা। কিন্তু নতুন জামা, আড্ডা-হইহুল্লোড়, প্যান্ডেল হপিং, রাতজাগার পাশাপাশি বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসবের একটি অন্য দিকও রয়েছে। তা হল বহু মানুষের রুজি রোজগারের দিক। চারদিনের এই বিরাট আয়োজনই অসংখ্য পরিবারের অন্ন সংস্থানের মঞ্চ হয়ে ওঠে। সমাজের নানা শ্রেণির মানুষ গোটা বছরটা অপেক্ষা করে বসে থাকেন এই চারটি দিনের জন্য। দুর্গাপুজোকে কেন্দ্র করেই খুলে যায় তাঁদের উপার্জনের পথ। ফুচকাওয়ালা থেকে নাগরদোলা চালক- প্রত্যেকের কাছে দেবী দুর্গা ধরা দেন অন্নপূর্ণা রূপে। কিন্তু মারণ করোনা ভাইরাস (Coronavirus) কেড়ে নিয়েছে জীবনের সেই স্বাভাবিক ছন্দ। মৃত্যুকেই বেছে নেওয়া সহজ মনে হয়েছে কর্মহারাদের। এবার তাই আড়ম্বরের প্রতিযোগিতার না হেঁটে সেই সর্বহারাদের মুখে হাসি ফুটিয়েই প্রকৃত অর্থে উৎসবকে সার্থক করতে আসরে নেমেছে বেলেঘাটা ৩৩ পল্লি।

[আরও পড়ুন: করোনাসুরের দাপটের মধ্যে একরাশ ‘প্রাণ বায়ু’র সন্ধান দেবে গড়িয়াহাটের এই পুজো]

বিগত বছরগুলিতে নিজের শৈল্পিক ভাবনা দিয়ে মণ্ডপ সাজিয়ে বহু প্রশংসা কুড়িয়েছেন শিল্পী শিবশংকর দাস। তবে এবার তাঁর মাথায় শুধু ঘুরেছে লকডাউনে রোজগার হারানো সেই মানুষগুলির কথা, যাঁদের কাছে পুজো মানে শুধুই উৎসব নয়, আয়ের পথও বটে। পুজোর চারটে দিন বিক্রি-বাটা থেকে হওয়া আয় দিয়েই দিনগুজরান করেন তাঁরা। তাই শিল্পী ঠিক করে ফেলেন, এবার তাঁরাই হবে তাঁর মণ্ডপের ‘প্রধান চরিত্র’। যেমন ভাবনা তেমন কাজ। ঠিক করে ফেলেন, মণ্ডপজুড়ে মেলার পরিবেশ তৈরি করবেন। ঠিক যেমন পুজোকে ঘিরে বিভিন্ন মেলাপ্রাঙ্গন গমগম করে, তেমন। যেখানে চুড়ি থেকে কানের দুল, পুতুল থেকে নাগরদোলা- সবই স্থান পাবে। শিবশংকর দাসের কথায়, “উৎসব মানেই তো মানুষের ঢল বা আড়ম্বর নয়, যদি পুজোয় কিছু মানুষের মুখে হাসি ফোটানো সম্ভব হয়, সেখানেই তো উৎসবের সার্থকতা। তাই তাঁদের স্বজন হয়ে ওঠার প্রচেষ্টাতেই এই আয়োজনের নাম রেখেছি স্বজন।”

নদিয়া, মুর্শিদাবাদ, বাঁকুড়া-সহ রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে নিজেদের পসরা সাজিয়ে বসেছেন দোকানিরা। আর সেই মেলার মাঝেই চলছে মায়ের আরাধনা। অর্থাৎ এই মণ্ডপের পরতে পরতে মেলার আমেজ। তবে হ্যাঁ, ভুল করেও টাকা বের করে কিছু কিনতে যাবেন না। দৃষ্টিনন্দন পরিবেশ দর্শনার্থীদের মুখে হাসি ফোটানোর জন্যই। আর এই পরিবেশের সঙ্গে উপড়ি পাওনা আবহে মীরের কণ্ঠস্বর।

সাধারণের পাশে দাঁড়ানোর মহৎ কাজে শিল্পীর পাশে দাঁড়ায় ক্লাবের পুজো উদ্যোক্তারাও। বরং আরও একধাপ এগিয়ে তাঁরা ঠিক করেন, যাঁরা এই মণ্ডপসজ্জার অংশ হয়ে উঠেছেন, আর্থিকভাবে সেই দোকানিদের পাশে দাঁড়াবেন। ক্লাবের তরফে সুশান্ত সাহা বলছিলেন, “অতিমারীর মধ্যে ধুমধাম করে দুর্গাপুজোর কথা যেন ভাবাই যায় না। কিন্তু এর মধ্যে দিয়ে যদি ওদের ঠোঁটের কোণে হাসি দেখতে পাই, সেটাই হবে বড় উপহার।” দুর্দিনে স্বজনের চেয়ে বড় প্রাপ্তি আর কী-ই বা হতে পারে!

[আরও পড়ুন: দুর্গা-মহিষাসুরের যুদ্ধের আড়ালে জীবন সংগ্রামের চিরন্তন কাহিনি তুলে ধরছে এই পুজো]

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement