shono
Advertisement

পাড়ায় পাড়ায় কাঁদছে ‘দুর্গা’, দেবী প্রতিমার দর্শন আর হয় না

রাতদিন মৃত্যুর অপেক্ষায় এই 'দুর্গা'রা। The post পাড়ায় পাড়ায় কাঁদছে ‘দুর্গা’, দেবী প্রতিমার দর্শন আর হয় না appeared first on Sangbad Pratidin.
Posted: 02:00 PM Sep 29, 2019Updated: 02:03 PM Sep 29, 2019

শংকরকুমার রায়, রায়গঞ্জ: নিজেদের ঘরে বন্দি দুর্গারা। পাকা বাড়ির বারান্দায় জুতো রাখার মেঝের পাশে, কিংবা টিনচালা দেওয়া বাড়ির গুদাম ঘরের বদ্ধ কোণে, কখনও আবার বাড়ির চিলেকোঠার অন্ধকারাচ্ছন্ন একফালি ঘুপরির কোণে অবহেলায় দুর্গারা। পাড়ায় পাড়ার কান পাতলেই প্রায় সকল বাড়িতেই কান্নাকে বুকে নিয়ে টিঁকে থাকা একালের দুর্গাদের অস্তিত্ব টের পাওয়া যায় রোজই। রায়গঞ্জের উকিলপাড়া, কলেজপাড়া ও বীরনগরে খোঁজ মিলল এমনই তিন মহিলার। 

Advertisement

  আরও পড়ুন: দর্শনার্থীদের সুবিধার্থে পুজোর গাইড ম্যাপ প্রকাশ সুন্দরবন পুলিশের]

বাড়ির সবচেয়ে অবহেলার পাত্র হয়েও কোনও প্রতিবাদ নেই উকিলপাড়ার বীণাদেবীর। ছোটবেলায় মাকে হারান। নিজে পড়াশোনা করে প্রাথমিক স্কুলে শিক্ষকতার চাকরি করে ভাইবোনদের বড় করে তোলেন। এইসব সামলাতে গিয়ে বিয়ের ফুল আর ফোটেনি। চাকরি থেকে অবসর নিয়ে বোনের সংসারে আশ্রিতা হয়ে ওঠেন। রোজগারের সবটুকু টাকা সংসারে ঢেলে নিঃস্ব বীনাদেবীর যত্ন আত্তির কেউ নেই আর। অবসরকালীন পাওয়া লক্ষাধিক টাকাও বোনের ছেলেমেয়েদের জন্য খরচ করেছেন। কিন্তু কয়েক বছর ধরে অসুস্থ হয়ে প্রায় অন্ধকার ঘরের এককোণের বিছানায় কাটে সময়। নিজের উপার্জিত টাকাও আর হাতে নেই। পুজোয় বোনের ছেলেমেয়ে বউরা যখন কেনাকেটায় ধুম ব্যস্ত। তখন চিকিৎসার অভাবে বীণাদেবীর রাতদিন কাটছে মৃত্যুর অপেক্ষায়।

রায়গঞ্জেরই কলেজপাড়ার বাসিন্দা মিনতীদেবী। পুজো এলেই বাড়িঘর পরিস্কারে ব্যস্ত থাকতেন মিনতীদেবী। পুজোর শাড়ি থেকে তিন ছেলেমেয়ের জামা কাপড় কিনতে বাজার ঘাটে যেতেন। পাঁচ বছর আগের এই পুজোর মরশুমে স্বামীর মৃত্যু হয়। তারপর থেকে মানসিকভাবে এতটাই ভেঙে পড়েন আর দুর্গা ঠাকুর দেখেন না। অসুস্থ হয়ে শোওয়ার ঘরে খাটের বদলে শুধু মেঝেতে শুয়ে থাকেন। প্রায় ঘরবন্দি। স্বামীকে হারানোর পর থেকেই কার্যত দু’বেলা খাওয়াও ছেড়ে দিয়েছেন  মিনাদেবী। ছোট ছেলে দুই-এক গ্রাস মুখে তুলে দিলে সেটাই দিনের খাওয়া। না খাইয়ে দিলে সেদিন আর কিছু মুখে নেন না। এভাবেই দ্রুত ফুরিয়ে যাচ্ছেন স্বামী হারা মহিলা। চার ভাইয়ের পরিবারের বাস একবাড়িতে। দেওর জা-রা কেউ ফিরেও খোঁজ নেন না। ঠাকুর দেখার কথা জিজ্ঞাসা করলে শুধু ফ্যাল ফ্যাল করে চেয়ে থাকেন ছেলের দিকে।

[আরও পড়ুন: কাত্যায়ণী রূপে আটশো বছর ধরে ওপার বাংলায় পূজিত হচ্ছে মা ঢাকেশ্বরী]

পুজো এলেই স্বামীর সঙ্গে রায়গঞ্জ শহরের দোকানে নতুন জামা, শাড়ি কিনতে বের হতেন বীরনগরের দিপালীদেবী। ভরা সংসার। আত্মীয় পরিজনে বাড়ি গমগম করত। পুজোর সময় আত্মীয় স্বজনদের বাড়ি বাড়ি নতুন কাপড় বিলি করে বেড়াতেন। এমনকী কোনও আত্মীয়ের বাড়িতে আনন্দ অনুষ্ঠান হলেও ডাক পড়ত দিপালীদেবীর। রান্না থেকে খাবার পরিবেশন করতেন হাসি মুখে। কিন্তু গত বছর অকালে স্বামীকে হারান তিনি। একমাত্র মেয়ে বিয়ে হয়ে শ্বশুরবাড়িতে। এখন একেবারে একা। কেউ আর কোনও অনুষ্ঠানে নিমন্ত্রণ করেন না। চাল ফুটিয়ে কোনওরকমে খেয়ে ঘরের কোণে প্রায় বন্দি দশায় কাটে জীবন। পুজোর কোনও সুর আর কানে ভাসে না তাঁর। প্রতিমা দেখতে প্যান্ডেলে প্যান্ডেলে যাবেন না এবার, জিজ্ঞেস করতেই চোখের কোল জলে ভেসে যাচ্ছিল তাঁর।

The post পাড়ায় পাড়ায় কাঁদছে ‘দুর্গা’, দেবী প্রতিমার দর্শন আর হয় না appeared first on Sangbad Pratidin.

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement