shono
Advertisement

সদর দরজায় থাকা দেবীর কাঠামোয় পুজো শুরু এই জমিদার বাড়িতে

জমিদার গিন্নির দেওয়া কথাতেই হয় ভোগ নিবেদন। The post সদর দরজায় থাকা দেবীর কাঠামোয় পুজো শুরু এই জমিদার বাড়িতে appeared first on Sangbad Pratidin.
Posted: 08:35 PM Oct 31, 2018Updated: 08:35 PM Oct 31, 2018

সন্দীপ মজুমদার, উলুবেড়িয়া: আদালতের রায় পরোক্ষভাবে নির্ধারণ করে দিয়েছিল জমিদার বাড়ির কালীপুজোর ভবিষ্যৎ। তৎকালীন জমিদার গিন্নির নির্দেশানুসারে আজও কলাগাছের থোড় কুচানো দিয়েই হয় মায়ের ভোগ। ঘটনাস্থল উলুবেড়িয়ার জয়পুর থানার থলিয়ার মজুমদার বাড়ি। দিনটা ছিল সিপাহী বিদ্রোহের দু’বছর আগের একটি সকাল। ১৮৫৫ সালের কালীপুজোর ঠিক আগের দিন। হাওড়া জেলার অধুনা জয়পুর থানার অন্তর্গত থলিয়া গ্রামে তখন বসবাস করতেন দোর্দণ্ডপ্রতাপ জমিদার রূপনারায়ণ (রাও দে সরকার) মজুমদার। আশপাশের চারটি বিশালাকার গ্রাম নিয়ে ছিল তাঁর জমিদারি। সেদিন সকালে জমিদার গিন্নি বাড়ির বাইরে বেরিয়ে দেখেন, সদর দরজার পাশে কারা কালী ঠাকুরের খড়ের কাঠামো বসিয়ে দিয়ে গিয়েছে। পরের দিনই ছিল আলোর উৎসব দীপাবলি। তাই দেবীর কাঠামো দেখে প্রথমটায় চমকে উঠেছিলেন জমিদার গিন্নি। তাহলে কী স্বয়ং মা মহাকালী তাঁর বাড়ি বয়ে এলেন? নাকি এটা কারও কোনও দুরভিসন্ধি? ভেবে পাচ্ছিলেন না তিনি।

Advertisement

উল্লেখ্য, জমি সংক্রান্ত বিষয়ে পার্শ্ববর্তী এলাকার জমিদারের সঙ্গে মজুমদারদের সম্পর্ক ভাল নয়। ফৌজদারি মামলাও চলছিল। ঘটনাচক্রে সেদিনই ওই মামলার রায় ঘোষণার কথা ছিল। দেবীর খড়ের কাঠামো দেখে মজুমদার গিন্নি দৃপ্ত কণ্ঠে ঘোষণা করলেন, মামলার রায় যদি তাঁদের পক্ষে যায় তাহলে কলাগাছের থোড় কুচানো দিয়ে হলেও মা মহাকালীর পুজো করা হবে। আর যদি মামলার রায় তাঁদের বিরুদ্ধে যায় তাহলে ওই কাঠামো দামোদরের জলে ভাসিয়ে দেওয়া হবে। কাকতালীয়ভাবে সেদিন দুপুরেই আদালত থেকে জমিদার পক্ষের জয়লাভের খবর পৌঁছেছিল থলিয়ার মজুমদার বাড়িতে। জমিদার গিন্নিও অক্ষরে অক্ষরে তাঁর দেওয়া কথা রেখেছিলেন। তিনি  প্রতিজ্ঞার কথা জানিয়েছিলেন স্বামী রূপনারায়ণ মজুমদারকে। মামলায় জয়লাভের খবর পাওয়া মাত্রই জমিদার গিন্নির নির্দেশে প্রায় যুদ্ধকালীন তৎপরতায় দীপাবলি উৎসবের আয়োজন শুরু হয়ে যায়। কেউ ছোটেন মৃৎশিল্পীর খোঁজে, কেউ বেরিয়ে পড়েন পুরোহিত খুঁজতে। রাতারাতি দেবীর খড়ের কাঠামোয় মাটি ধরানোর কাজ শুরু হয়ে যায়। জমিদার বাড়িতে তখন উৎসবের পরিবেশ। গোটা বাড়িতে আলোর রোশনাই। রাত পোহাতেই ধুমধামের সঙ্গে শুরু হয় দীপাবলি। সেই উৎসবে অংশগ্রহণ করেন পার্শ্ববর্তী গ্রামের অগণিত মানুষ। রূপনারায়ণ মজুমদারের হাত ধরেই মা মহাকালীর পুজো শুরু হয়। আগেই জমিদার গিন্নি পুজোর উপকরণ হিসাবে থোড় কুচানোর কথা মুখে এনেছিলেন। তাই পুজোর অন্যান্য উপকরণের সঙ্গে সেদিন দেবীকে কুচানো থোড়ও উৎসর্গ করা হয়েছিল। আজ ১৬৩ বছর পরেও সেই রীতির পরিবর্তন হয়নি। এখনও বাড়ির কালী মন্দিরেই মায়ের মূর্তি গড়ে তোলেন মৃৎশিল্পীরা।

[খেলার ছলেই ৫৭ বছর আগে শুরু কুলটির ‘চানাচুর কালী’-র পুজো]

প্রাচীন ইতিহাস থেকে জানা যায়, আজ থেকে প্রায় ২৫০ বছর আগে এই এলাকা ছিল বর্ধমান জেলার অন্তর্গত। মজুমদার বাড়ির অন্যতম সদস্য অঞ্জন মজুমদার জানান, বর্ধমানের তৎকালীন মহারাজা তাঁদের পূর্বপুরুষকে একটি কষ্টিপাথরের রাধাকৃষ্ণের যুগল মূর্তি ও চারটি গ্রাম উপহার স্বরূপ প্রদান করেছিলেন। ওই মূর্তিকে “মুরলীধর” নামে ডাকা হয়। কালীপুজোর সন্ধ্যায় মুরলীধরের মন্দিরের সামনের মাঠে বসে দীপান্বিতা উৎসব। সেখানে আগে মুরলীধরের পুজো অনুষ্ঠিত হয়। সেই উৎসবে সারা গ্রামের মানুষ অংশগ্রহণ করেন। সুসজ্জিতা মহিলারা দীপালোকে উদ্ভাসিত করে তোলেন। মুরলীধরের পুজো শেষ হলে শুরু হয় মা মহাকালীর পুজো। রীতি মেনে এখনও মজুমদার বাড়ির পুজোর আয়োজন করে আসছেন বর্তমান বংশধররা। দ্বিতীয় দিনের পুজো সমাপ্তি ঘটলে সেই রাতেই মহাকালীকে চতুর্দোলায় চড়িয়ে কিছুটা দূরে দামোদরের তীরে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেই দামোদরের জলে হয় প্রতিমা নিরঞ্জন।

[৬০০ বছরের রীতি, কালীপুজোর সকালে এই মন্দিরে মায়ের চক্ষুদান হয়]

The post সদর দরজায় থাকা দেবীর কাঠামোয় পুজো শুরু এই জমিদার বাড়িতে appeared first on Sangbad Pratidin.

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement