সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: লাদাখের লেহ শহর থেকে ৪৫ কিলোমিটার দূরে ছোট্ট গ্রাম হেমিস। যার বুক চিরে ঝিকমিকিয়ে বয়ে যাচ্ছে সিন্ধু নদী। আর চারপাশে বাদামি রঙের নেড়া পাহাড়। তেমনই এক পাহাড়ের গায়ে কেউ যেন বসিয়ে দিয়েছে বৌদ্ধ মঠটাকে। সেই মঠের বিরাট উঠোনেই উঁচু স্টেজ বানিয়ে চলছে এক সমাবর্তন উৎসব।
‘থ্রি ইডিয়টস’-এর মতো কোনও ছবির শুটিং নয়। ১৩ হাজার ফুট উচ্চতায়, পাহাড়ে ঘেরা পরিবেশে, সপ্তদশ শতকের বৌদ্ধমঠের উঠোনে, সাদা-লাল-হলুদ পতাকা ঘেরা মঞ্চে সত্যি সত্যিই জড়ো হয়েছেন ৫২ জন কৃতী ছাত্র। যাঁরা হিমালয় অঞ্চলে বাণিজ্য, পরিবেশ, শিক্ষা এবং এলাকার বাসিন্দাদের বেকারত্ব সমস্যা নিয়ে সৃষ্টিশীল এবং একইসঙ্গে বাস্তবমুখী উপায় বের করেছেন। আর এঁদেরই সম্মান জানানোর জন্য বেছে নেওয়া হয়েছে খোদ হিমালয়ের কোলে এই ছবির মতো এলাকা। যা আগে দেশের কোনও সমাবর্তন উৎসবে হয়নি।
[আরও পড়ুন: চন্দ্রপৃষ্ঠে বাঙালি বিজ্ঞানীর নাম খোদাই! চন্দ্রযানের পাঠানো ছবি দেখে উচ্ছ্বসিত ইসরো]
১৩ হাজার ফুট উচ্চতায় ওই বিশাল মঞ্চে উঠে কৃতীদের অভিনন্দন জানিয়ে তাই নারোপা ফেলোশিপের প্রতিষ্ঠাতা দ্রুকপা থুকসে রিনপোসে বলেন, “এমন ছবির মতো সুন্দর জায়গায়, যা দেখতে দেখতে বাকরহিত হয়ে যেতে হয়, হয়তো কখনও কোনও সমাবর্তন উৎসব হয়নি। তাই আপনারা যাঁরা আজ এই ফেলোশিপে স্নাতক হলেন।” তাঁদের কাছে নিঃসন্দেহে এই মঞ্চ আরও একটা বড় পাওনা। যেখানে এই ফেলোশিপের মূল উদ্দেশ্যের মতোই রয়েছে অভিনবত্ব। আর সেই অভিনবত্বের গভীরে অন্তর্নিহিত রয়েছে হিমালয়। আর হিমালয় অঞ্চলের ভাল থাকা। হিমালয়কে রক্ষা করে তার সুব্যবহারের উপায় বাতলে একরকম বীরত্বই দেখিয়েছেন এই কৃতীরা। তাই এঁদের হিমালয়ের ‘হিরো’ বা বীরও বলা যেতে পারে।
এই প্রথম হিমালয় এলাকার উন্নয়ন এবং প্রাকৃতিক সংরক্ষণ সংক্রান্ত এই পাঠ্যক্রমে নারোপা ফেলোশিপের অধীনে স্নাতক হলেন এই ৫২ জন। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বেছে নেওয়া এই ৫২ জন কৃতীর এক-তৃতীয়াংশ লাদাখেরই। অনুষ্ঠানে এঁরা সমাবর্তনের প্রথাগত জোব্বা গায়ে চাপিয়ে শংসাপত্র নিলেন। তাৎপর্যপূর্ণভাবে সেই জোব্বা বা রোবের রংটিও ছিল মেরুন। যা বুদ্ধ সন্ন্যাসীদের পেশাকের রং। নারোপা ফেলোশিপের আর এক প্রতিষ্ঠাতা প্রমথ রাজ সিনহা, যিনি অশোকা বিশ্ববিদ্যালয়েরও প্রতিষ্ঠা করেছেন, উপস্থিত ছিলেন অনুষ্ঠানে। ছিলেন অশোকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য রুদ্রাংশু মুখোপাধ্যায়। সমাবর্তন উৎসবের এলাকা চয়ন প্রসঙ্গে তিনিও বলেন, “আজ আপনাদের যেমন অভিজ্ঞতা হচ্ছে, কিছুটা একই অভিজ্ঞতা হয়েছিল বিখ্যাত চিত্র পরিচালক সত্যজিৎ রায়ের। যখন তিনি কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শান্তিনিকেতনে গিয়েছিলেন বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করতে। আপনাদেরও আজ সেরকমই অভিজ্ঞতা হল।”
[আরও পড়ুন: জেটলির শেষকৃত্যে চুরি গেল একগুচ্ছ মোবাইল, স্মার্টফোন খোয়ালেন বাবুলও]
The post ১৩ হাজার ফুট উচ্চতায় অভিনব সমাবর্তন, সম্মানিত ৫২ জন কৃতী appeared first on Sangbad Pratidin.