অর্ণব দাস, বারাকপুর: সেনাবাহিনীতে থাকাকালীন শিখেছিলেন স্যালুট করতে। সেই স্য়ালুটই ঘরে ফিরিয়ে দিল মৃত সৈনিককে! ২৪ বছর পর বাড়ি ফিরছেন উত্তরপ্রদেশের (Uttar Pradesh) ‘জওয়ান’। নিরুদ্দেশ থাকার সাত বছর পর সেনাবাহিনীর নিয়মমাফিক ছেলে সেরে ফেলেছিলেন বাবার পারলৌকিক কাজও। স্বামীকে হারানোর কষ্ট বুকে চেপে পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করেছিলেন স্ত্রীও। কিন্তু ভাগ্য়ে লেখা ছিল অন্য কিছু। আর সেই লেখা খণ্ডাবে কে!
এ যেন ঠিক সিনেমার গল্প! গত কয়েক বছর ধরে বারাকপুর সেনা এলাকার চারপাশে ঘুরে বেড়াতেন এক ভবঘুরে। দাড়ি-গোঁফের জঙ্গল। মুখে হিন্দু বুলি। অল্পতেই রাগ। তবে কেউ ভালোবেসে খাবার দিলে কোনওদিন স্য়ালুট করতে ভুলতেন না ওই ভবঘুরে বৃদ্ধ। তাঁর নাম-পরিচয় জানা ছিল না। কিন্তু সেই স্য়ালুটই চিনিয়ে দিল তাঁকে। ফিরিয়ে দিল পরিবারের কাছে।
[আরও পড়ুন: বারাণসীর আদলে এবার কলকাতায় দেব দীপাবলি পালন, আমন্ত্রিত মুখ্যমন্ত্রী]
ওই চত্বরে চা খেতে আসতেন হ্যাম রেডিও সংগঠনের সম্পাদক অম্বরীশ নাগ বিশ্বাস। খাবার দেওয়ার সময় ভবঘুরে বৃদ্ধের সঙ্গে ভাব জমিয়েছিলেন। খাপছাড়া কথাবার্তার মধ্যে থেকেই উঠে এসেছিল দেউড়িয়া জেলার কথা। ইন্টারনেটে খোঁজাখুঁজি করতেই মিলে যায় হদিশ। অম্বরীশবাবু জানতে পারেন, উত্তরপ্রদেশের গোরক্ষপুরের পাশের জেলা দেউড়িয়া। গল্পের ছলে জানতে পেরেছিলেন, তাঁর মেয়ের নাম অনিতা। তবে তিনি ডাকতেন সীতা বলে। একের পর এক ক্লু জুড়ে শুরু হয়েছিল খোঁজ। তবে সবচেয়ে জোরাল ক্লু ছিল সেনার কায়দায় স্যালুটের কায়দা। একের পর এক ক্লু জুড়ে অবশেষে খোঁজ মিলল ভবঘুরের পরিবারের।
১৯৯৯ সালে অসমের তেজপুরে সেনাবাহিনীর এমইএসে কর্মরত ছিলেন দেউড়িয়া জেলার রাধে। কিন্তু আচমকাই নিখোঁজ হয়ে যান তিনি। প্রতি ছুটিতে বাড়ি যাওয়ার আগে চিঠি লিখতেন। সেবার চিঠি পৌঁছলেও রাজকুমার বাড়ি যাননি। পরে বাহিনী থেকে চিঠি দিয়েও জানানো হয়, তিনি কাজে যোগ দেননি। এর পর আর খোঁজ মেলেনি তাঁর। এর পর কেটে গিয়েছে ২৪ বছর। নিখোঁজ থাকার সাত বছর পর সেনাবাহিনীর নিয়ম মেনে পুতুলকে বাবা ভেবে পারলৌকিক কাজ সেরেছিলেন ছেলে রাজকুমার চৌরাসিয়া। স্বামী বেঁচে থাকতেও বিধবার জীবন কাটিয়েছিলেন স্ত্রী। স্বামীকে হারানোর শোক বুকে নিয়েই মৃত্যুও হয়েছে তাঁর। প্রায় আড়াই দশক হ্যাম রেডিওর হাত ধরে পর বাবার খোঁজ পেলেন ছেলে। তাঁকে ঘরে ফেরানে ইতিমধ্যে উত্তরপ্রদেশ থেকে বারাকপুরের উদ্দেশ্যে রওনা হয়ে গিয়েছেন রাজকুমার। তবে তাঁর আক্ষেপ, “আর কিছুদিন আগে কেন খোঁজ পেলাম না! বাবা জীবিত থাকতেও মা তাঁকে হারানোর শোক বয়ে বেড়িয়েছেন। আমিও বাবার স্নেহ থেকে বঞ্চিত হয়েছি।”