সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: যৌবনে ভরপুর চেহারা। ঝরঝর ধারা, খরস্রোতা গতি। এমন যৌবনবতীর সামনে দাঁড়িয়ে বিস্ময়ে আবিষ্ট হওয়া ছাড়া সুন্দরের পূজারিদের আর কিছু করার থাকে না। কিন্তু প্রকৃতির সেই সৌন্দর্য ধীরে ধীরে নষ্ট করে দেয় মানুষের অযত্ন, খামখেয়ালিপনা। তাই জলপ্রপাতের অপমৃত্যুতে মন কাঁদলেও, তার প্রাণ ফেরানোর উপায় নেই। বিশ্বের সর্ববৃহৎ জলপ্রপাত দক্ষিণ আফ্রিকার ভিক্টোরিয়া সেভাবেই মৃত্যুর দিকে ঢলে পড়েছে। কারণ হিসেবে উঠে আসছে গত ২৫ বছরের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ খরা।
জাম্বিয়া এবং জিম্বাবোয়ের মাঝে ভিক্টোরিয়া জলপ্রপাত বিশ্বের অন্যতম বিস্ময়ের। নায়াগ্রার চেয়ে দ্বিগুণ উচ্চতা থেকে জাম্বেই নদীতে ঝাঁপিয়ে পড়ছে অনন্ত জলরাশি। পাহাড়ের খাঁজে জলের সেই ধাক্কা খাওয়া চারপাশে ধোঁয়ার মতো মেঘাবরণ তৈরি করেছে। এর সামনে দাঁড়ালে মনে হয়, প্রকৃতি সমস্ত সৌন্দর্য যেন ঢেলে দিয়েছেন এখানে। ৩০ মাইল দূর থেকে ভিক্টোরিয়াকে দেখতে ভিড় জমান পর্যটকরা। ছবি তোলার জন্য হুড়োহুড়ি পড়ে যায়।
[ আরও পড়ুন: পরিবেশ সম্মেলনে হাজির গ্রেটা থুনবার্গকে ঘিরে জনতার ঢল, বিরক্ত কিশোরী]
কিন্তু সম্প্রতি চেহারা পালটে গিয়েছে ভিক্টোরিয়া ফলসের। শীর্ণ থেকে শীর্ণতর হয়েছে সে। ২০১৯ এর গোড়া থেকে শেষ পর্যন্ত এতটা বদল সকলেরই ধারণার বাইরে। বিশ্ব উষ্ণায়ন ভিক্টোরিয়ার সৌন্দর্য কেড়ে নিয়েছে। জিম্বাবোয়ের প্রেসিডেন্ট ইমারসন ন্যানগাগওয়া সতর্কবার্তা দিয়ে জানিয়েছেন যে এখনই কোনও ব্যবস্থা না নিলে খুব দ্রুত পুরোপুরি শুকিয়ে যেতে পারে ভিক্টোরিয়া জলপ্রপাত। বিন্দু বিন্দু জল উবে পাথুরে পাহাড়ের জমিই কেবল জেগে থাকবে জিম্বাবোয়ে-জাম্বিয়ার সীমান্তে। জাম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট এডগার লুঙ্গুর মতে, এই পরিস্থিতি স্রেফ ‘ম্যানমেড’। স্কাই নিউজকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি জানিয়েছেন, ”জলবায়ু পরিবর্তন হচ্ছে, এটা ঘটনা। আমরা ধীরে ধীরে তার প্রভাব লক্ষ্য করছি। কিন্তু আমাদের দেশে আর ভিক্টোরিয়া জলপ্রপাত নেই – এটা কি গ্রহণ করা যায়? ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে কী উত্তর দেব?”
[ আরও পড়ুন: গেছো ব্যাঙের ‘গোত্র’ বাতলে ইতিহাসে পাঁচ বাঙালি গবেষক]
সম্প্রতি দক্ষিণ আফ্রিকার অধিকাংশ দেশ খরায় কাবু। বলা হচ্ছে, গত ২৫ বছরের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ পরিস্থিতি। তীব্র খাদ্যাভাব, বিদ্যুতের সংকট, যার জেরে কলকারখানায় উৎপাদনও ব্যাহত। ভিক্টোরিয়ার এই চেহারা চিন্তায় ফেলেছে জিম্বাবোয়ের পর্যটন দপ্তরকে। পর্যটকরা মুখ ফিরিয়ে নেবেন, এই আশঙ্কায় সর্বদাই কাঁটা সে দেশের পর্যটন মন্ত্রী এলিসা মোয়ো। তাঁর কথায়, ”এটা খুব চিন্তার বিষয়। হয়ত আর এক বছকরের মধ্যেই ভিক্টোরিয়ায় আর একফোঁটাও জল থাকবে না।” উষ্ণায়নের অভিশাপ এতখানিই হতে পারে। যা প্রকৃতির একটা সম্পদকে মুছে দিতে পারে পুরোপুরি। এরপরও সচেতন না হলে, ভবিষ্যত যে আরও কতটা অভিশপ্ত, সেই আঁচ টেরই পাওয়া যাবে না।
The post উষ্ণায়নের কোপ, উধাও বিশ্বের বৃহত্তম জলপ্রপাত ভিক্টোরিয়ার বিপুল জলরাশি! appeared first on Sangbad Pratidin.