সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: খুব বেশি দিন আর নেই! দেখতে দেখতে পাড়ায় পাড়ায় বেজে উঠবে ঢাক। সঙ্গে বোল তুলবে কাঁসর। শুরু হয়ে যাবে বাঙালির জাতীয় উৎসব। মণ্ডপে, বাড়িতে আসন পাতবেন মহিষাসুরমর্দিনী দুর্গা। তাঁর অসুর বধের ইতিবৃত্ত ধ্বনিত হবে শ্রীশ্রীচণ্ডীর পবিত্র পাঠে। এভাবেই বছরের পিঠে বছর যায়। আর ভক্তরা ফিরে দেখেন দেবীর জয়গাথার ইতিহাস।
কিন্তু যদি সশরীরে দর্শন করতে হয় দেবীর অসুর বধের স্থান? যদি দেবীকে শ্রদ্ধা জানানোর ইচ্ছা থাকে তাঁরই গৃহে গিয়ে?
তবে, এবারের দুর্গাপুজোয় গন্তব্য হোক উত্তর প্রদেশের বিন্ধ্যাচল পর্বত। দেবী ভাগবত পুরাণ, দেবীমাহাত্ম্য বা শ্রীশ্রীচণ্ডী, মার্কণ্ডেয় পুরাণ এবং অন্য সব দেবীগাথা বলছে, এই সেই স্থান যেখানে অবতীর্ণ হয়েছিলেন দুর্গা। এই বিন্ধ্যাচলেই তিনি মহাপরাক্রমশালী দানববীরদের সংহার করেন। এবং, ত্রিলোকের মঙ্গলের জন্য বাসও করেন এখানে। ভারতের অন্য সব পীঠস্থান তাঁর মন্দিরমাত্র! কিন্তু, গৃহ এই বিন্ধ্যাচলই!
পুরাণ মতে, দেবী বিন্ধ্যাচলকে তাঁর আবাসরূপে বেছে নেন কংসকে প্রতারণার পরই! ভাদ্র মাসের অষ্টমী তিথিতে গোকুলে নন্দপত্নী যশোদার গর্ভে জন্ম নিয়েছিল এক অপরূপ লাবণ্যবতী কন্যা। বসুদেব নিজের পুত্র কৃষ্ণকে রেখে সেই কন্যাটিকে নিয়ে আসেন মথুরার কারাগারে। তুলে দেন কংসের হাতে। কংস যখন সেই শিশুটিকে কারাগারের দেওয়ালে আছড়ে হত্যা করতে যায়, তখনই তার হাত পিছলে সেই শিশু চলে যায় শূন্যে। দেখতে দেখতে ধারণ করে অষ্টভুজা রূপ। এবং, কংসকে কে বধ করবে- সে কথা জানিয়ে চলে যায় বিন্ধ্যাচলে। সেই থেকে অষ্টভুজারূপে দেবী বিন্ধ্যাচলে অবস্থান করেন। তাঁর এই অষ্টভুজা রূপটিকে দেবীভাগবত এবং ভাগবত বলছে যোগমায়া। কিন্তু, বিন্ধ্যাচলে তিনি পূজিতা হন মহাসরস্বতী রূপে। বিন্ধ্যবাসিনী মন্দির থেকে ৩ কিলোমিটার দূরত্বে পর্বতের উপরে এই অষ্টভুজা মন্দির। সঙ্কীর্ণ গুহাপথে দর্শন করতে হয় দেবীকে।
দুর্গা বিন্ধ্যাচলে জনপ্রিয় বিন্ধ্যবাসিনী নামে। মহিষাসুর বধের জন্য দেবতাদের তেজে তিনি আবির্ভূতা হয়েছিলেন এই পর্বত শিখরেই। তার পর, মহিষাসুরকে বধ করে তিনি দেবতাদের জানান, দুর্গা নামে দশভুজারূপে তিনি চিরস্থিতা হচ্ছেন বিন্ধ্যাচলে। এই বিন্ধ্যবাসিনী দেবীই পরবর্তীকালে এই পর্বতাঞ্চলেই বধ করেছিলেন শুম্ভ, নিশুম্ভকে। আদ্যাশক্তির কোষ থেকে উৎপন্ন হওয়ায় তাঁর আরেক নাম কৌষিকী। বিন্ধ্যাচলের মন্দিরে এই দেবীকে পূজা করা হয় মহালক্ষ্মী রূপে।
শুম্ভ-নিশুম্ভ বধের সময় দেবী কৌষিকীর ভ্রুকুটি থেকে আবির্ভূতা হয়েছিলেন কালী। চণ্ড-মুণ্ড বধের জন্য যিনি চামুণ্ডা নামেও পরিচিতা। এছাড়া, রক্তবীজ বধের সময়েও তার রক্ত পান করে তাকে বধযোগ্য করেছিলেন চামুণ্ডাই! সেই চামুণ্ডা দেবীও সশরীরে বিরাজ করেন বিন্ধ্যাচলে। পূজা পান মহাকালী রূপে। তাঁর মন্দিরটির নাম কালীখোহ। এখানে দেবী হাঁ করে আছেন! জনশ্রুতি, যুদ্ধে রক্তবীজের পাপরক্ত পানে তাঁর সর্বাঙ্গে জ্বালা ধরে গিয়েছিল! তাই শরীরের অভ্যন্তরে শীতল বায়ু গ্রহণের জন্য হাঁ করে থাকেন বিন্ধ্যাচলবাসিনী চামুণ্ডা! ভক্তরাও নারকেলের শীতল জল দেবীর মুখগহ্বরে দিয়ে তাঁর তৃষ্ণা নিবারণ করেন।
লোকবিশ্বাস, এই তিন মন্দির দর্শন করলেই ত্রিলোকের পরিক্রমা সম্পন্ন হয়। বিন্ধ্যাচলে যা মহাত্রিকোশ পরিক্রমা নামে খ্যাত।
এবারের পুজোয় তাই গন্তব্য হতেই পারে বিন্ধ্যাচল। মণ্ডপে দেবীর যুদ্ধগাথার আস্বাদন ভাল, না কি সশরীরে সেই স্থান দর্শন?
সিদ্ধান্ত অবশ্যই আপনার!
কী ভাবে যাবেন: ট্রেন ধরে চলে আসুন বেনারস। সেখান থেকে ভাড়ার গাড়িতে পৌঁছানো যায় বিন্ধ্যাচল।
কোথায় থাকবেন: বেনারসেই থাকুন। সেক্ষেত্রে বেনারস ভ্রমণটাও সাঙ্গ হয়ে যায়! বেনারসে আর যাই হোক, পকেটসই ঘরের অভাব নেই!
The post বিন্ধ্যাচল: যেখানে দানববীরদের সংহার করেন দুর্গা appeared first on Sangbad Pratidin.