shono
Advertisement

স্মরণ্য থেকে স্মরণ্যা হয়ে দারুণ সাফল্য, উচ্চমাধ্যমিকের মেধাতালিকায় প্রথম রূপান্তরিত ছাত্রী

মেধাতালিকায় সপ্তম স্থানাধিকারী হুগলির স্মরণ্যার লক্ষ্য সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় বসা।
Posted: 04:21 PM May 24, 2023Updated: 05:32 PM May 24, 2023

দিব্যেন্দু মজুমদার, হুগলি: উচ্চমাধ্যমিকে (Higher Secondary Exam 2023) মেধা তালিকায় সপ্তম স্থান। আর সেটাই বোধহয় স্মরণ্য থেকে স্মরণ্যা হয়ে ওঠার লড়াইয়ে প্রথম সাফল্য হুগলির (Hooghly) জনাই ট্রেনিং হাই স্কুলের কৃতীর। স্মরণ্য থেকে স্মরণ্যা হয়ে প্রথম রূপান্তরকামী নারী হিসেবে উচ্চমাধ্যমিকে মেধা তালিকায় স্থান পেল সে। আগামী দিনে সমস্ত লিঙ্গের মানুষের সসম্মানে বেঁচে থাকার অধিকার নিয়ে এগোতে চায় এই ছাত্রী। আর সে জন্যে সিভিল সার্ভিসে যোগ দেওয়া কিংবা অধ্যাপনা লক্ষ্য স্মরণ্যার। তার এই লড়াইতে বাবা-মা ছাড়াও পাশে থেকেছেন স্কুলের প্রধান শিক্ষক-সহ অন্যান্য শিক্ষক ও সহপাঠীরা। আজ সাফল্যের দিনে তাঁদের সকলকে কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছেন স্মরণ্যা।

Advertisement

করোনার (Coronavirus) কারণে জীবনের প্রথম বড় পরীক্ষা মাধ্যমিক দিতে পারেনি হুগলির এই ছাত্রী। তাই মনে একটা ক্ষোভ ছিল। তাই জীবনের প্রথম বড় পরীক্ষা উচ্চমাধ্যমিকে (Higher Secondary) রীতিমতো চ্যালেঞ্জ হিসেবে গ্রহণ করেছিল সে এবং সফলতাও পেয়েছে। উচ্চমাধ্যমিকে তার বিষয় ছিল বাংলায, ইংরেজি, ভূগোল, ইতিহাস, অর্থনীতি ও এডুকেশন। তবে তার এই চলার পথ কখনোই সুগম ছিল না, পুরো পথটাই ছিল কাঁটা বিছানো। স্মরণ্য ঘোষ নামে একজন পুরুষ পরীক্ষার্থী হিসেবে উচ্চমাধ্যমিকে তার নাম রেজিস্ট্রেশন হয়। দ্বাদশ শ্রেণিতে ওঠার পর নিজে একজন রূপান্তরকামী মহিলাতে পরিণত হয়। স্মরণ্য থেকে হয়ে ওঠে স্মরণ্যা।

[আরও পড়ুন: পাথিরানাকে খেলাতে ইচ্ছা করে সময় ‘চুরি’ করলেন ধোনি? প্লে অফের ম্যাচ ঘিরে বিতর্ক!]

কিন্তু উচ্চমাধ্যমিকে রেজিস্ট্রেশনে নাম হিসেবে স্মরণ্য থাকায় নাম পরিবর্তন করা সম্ভব হয়নি। স্মরণ্য হিসেবে পরীক্ষা দিলেও একজন রূপান্তরকামী ছাত্রী হিসেবে স্কুলের গর্ব স্মরণ্যা। ভবিষ্যতে ইন্ডিয়ান সিভিল সার্ভিস (Civil Service) কমিশনের পরীক্ষা দিতে চায় সে। যদি সেটা সম্ভব না হয় তবে অধ্যাপনাকে পেশা হিসেবে বেছে নেবে সে।

এই দুটি পেশা বেছে নেওয়ার কারণ হিসেবে স্মরণ্যা জানাচ্ছে, সিভিল সার্ভিস পাশ করলে হাতে ক্ষমতা থাকবে। সেক্ষেত্রে যে সমস্ত নারী-পুরুষ রূপান্তরিত রয়েছেন, তাদের অধিকার ও সম্মান রক্ষার জন্য লড়াই করাটা অনেক সহজ হবে। আর তা না হলে অধ্যাপনা বেছে নেবে। অধ্যাপনার মাধ্যমে উপযুক্ত শিক্ষায় শিক্ষিত করে তুলবেন সমাজের সর্বস্তরের মানুষকে। যাতে সমাজের সমস্ত লিঙ্গের মানুষ সসম্মানে মানে বেঁচে থাকতে পারে। স্মরণ্যা আরো জানায় রূপান্তরকামী হওয়ার দরুণ তাকে অনেক সময় অনেক কটু কথার শিকার হতে হয়েছে। কিন্তু তার বাবা, মা, ঠাকুরদা, স্কুলের প্রধান শিক্ষক-সহ অন্যান্য সহশিক্ষকরা এবং সহপাঠীরা তার পাশে থেকে সবসময় সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন।

[আরও পড়ুন: রাজনীতি-অর্থনীতি, সিভিল সার্ভিস, উচ্চমাধ্যমিকে প্রথম তিনে থাকা মেধাবীদের লক্ষ্য নানা পেশা]

স্মরণ্যার মতে, জীবনের খারাপটাকে ঝেড়ে ফেলে ভালটাকে গ্রহণ করলে সাফল্য আসতে বাধ্য। তাই জীবনের খারাপ দিকটা নিয়ে ভাবতে চায় না সে। সে জানাচ্ছে, রূপান্তরকামীদের জন্য আইন থাকলেও তা সমাজের কিছু সংস্কারাচ্ছন্ন মানুষের জন্য অনেক সময় বাস্তবায়িত হতে পারে না। এই সমস্ত শিশুদের জীবনের সঠিক পথ দেখানোর জন্য আগামী দিনে সে কাজ করবে। বাবা সৌরভ ঘোষ জনাইয়ের একটি প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষক। মা দেবস্মিতা ঘোষ গৃহবধূ।

স্মরণ্যার বাবা জানান, তারা কখনওই মেয়ের এই রূপান্তরকামী হওয়ার যে ইচ্ছা তাতে বাধা দেননি বরং জীবনে এগিয়ে যাওয়ার পথে সব সময় পাশে দাঁড়িয়েছেন। জনাই ট্রেনিং হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক রজত কুন্ডু বলছেন, ”স্মরণ্য এখন আমাদের কাছে স্মরণ্যা। অষ্টম শ্রেণিতে পড়াকালীন ও আমাদের স্কুলের প্রত্যাশা অনেকটাই বাড়িয়ে দেয়। গত দু’বছর ওর জীবনে অনেক ওঠাপড়া গিয়েছে। সেই জায়গা থেকে ও নিজেকে তুলে ধরতে পেরেছে দেখে আজ আমরা গর্বিত।” 

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement
toolbarHome ই পেপার toolbarup অলিম্পিক`২৪ toolbarvideo শোনো toolbarshorts রোববার