অর্ণব আইচ : সই জাল করে তৈরি হয় স্কুলে চাকরির সুপারিশপত্র। কয়েকজন এসএসসি (SSC) কর্তার অজান্তে তাঁদের স্ক্যান করা সই ব্যবহার করেই সুপারিশ পত্রগুলি পাঠানো হয় মধ্যশিক্ষা পর্ষদের (West Bengal Secondary Educaton) দপ্তরে। ওই সুপারিশ পত্রগুলির ভিত্তিতেই তৈরি হয় ৩৮১টি নিয়োগপত্র। সিবিআইয়ের (CBI) অভিযোগ, এভাবেই এসএসসি ‘সি’ গ্রুপের দুর্নীতি হয়, যার পুরোটাই জানতেন প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় (Partha Chatterjee)। যদিও সিবিআইয়ের জেরার মুখে ক্রমাগত দায় এড়ানোর চেষ্টা করছেন পার্থবাবু। তাঁর দাবি, এই ‘জাল’ সুপারিশপত্র বা নিয়োগপত্রের ব্যাপারে তিনি কিছুই জানেন না। তাঁকে না জানিয়েই এগুলি পাঠানো হয়েছিল মধ্যশিক্ষা পর্ষদে। যদিও এই দাবি বিশ্বাস করছেন না সিবিআই আধিকারিকরা।
সূত্রের খবর, একইভাবে মধ্যশিক্ষা পর্ষদের প্রাক্তন সভাপতি কল্যাণময় গঙ্গোপাধ্যায়ও পর্ষদের কয়েকজন আধিকারিকের উপর দায় চাপিয়ে বলতে থাকেন, তাঁরাই তাঁর সই স্ক্যান করে নিয়োগপত্রে বসিয়েছেন। তাঁদের হেফাজতে ছিল ‘ভুয়া’ নিয়োগপত্রগুলি। এবার এই বিষয়গুলি যাচাই করতে চায় সিবিআই। তাই মধ্যশিক্ষা পর্ষদের কয়েকজন আধিকারিক ও কর্মীও এবার সিবিআইয়ের জিজ্ঞাসাবাদের মুখে। কয়েকজনকে সিবিআই তলবও করতে পারে। এই মামলায় উঠে এসেছে এসএসসি-র তৎকালীন প্রোগ্রামার ও চেয়ারম্যানের নাম। তাঁদের বিরুদ্ধেও দায়ের হয়েছে অভিযোগ। এবার দুই কর্তার বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে বলে সিবিআই সূত্রের খবর।
[আরও পড়ুন: পুজোয় কলকাতায় ব্যাপক যানজটের আশঙ্কা, ভিড় সামলানোই চ্যালেঞ্জ পুলিশের]
এদিকে, এর আগেও দেখা গিয়েছে যে, পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে জোকা ইএসআই হাসপাতালে (ESI Hospital) মেডিক্যাল পরীক্ষার জন্য নিয়ে গেলে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। তাই রবিবার পার্থবাবুকে আর সিবিআই দপ্তরের বাইরে বের করা হয়নি। দুপুরে সিবিআইয়ের পক্ষ থেকেই নিজাম প্যালেসে নিয়ে আসা হয় কেন্দ্রীয় সরকারির স্বাস্থ্য স্কিমের দুই চিকিৎসককে। তাঁরা প্রায় আড়াই ঘণ্টা ধরে সিবিআইয়ের হেফাজতে থাকা পার্থ চট্টোপাধ্যায় ও কল্যাণময় গঙ্গোপাধ্যায়ের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করেন। বেরিয়ে চিকিৎসকরা জানান, দু’জনেরই শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল। জানা গিয়েছে, দু’জনকে আলাদা দু’টি ঘরে রাখা হয়েছে। পার্থবাবুকে ওষুধ দেওয়া হচ্ছে। এইমসের ডায়েট চার্ট মেনেই তাঁকে ক্যান্টিন থেকে খাবার দিচ্ছে সিবিআই।
সিবিআইয়ের সূত্র জানিয়েছে, এসএসসি-র ‘সি’ গ্রুপের নিয়োগ দুর্নীতির তদন্তে দেখা গিয়েছে যে, ২০১৯ সালের আগস্ট মাসের পর থেকে অযোগ্য চাকরিপ্রার্থীদের জাল সুপারিশ পত্র তৈরির প্রক্রিয়া শুরু হয়। প্রকাশ করা হয় ভুয়ো মেমো। নিয়ম অনুযায়ী, এই সুপারিশপত্র দেবেন এসএসসি-র ‘রিজিওনাল’ বা আঞ্চলিক কমিশনের চেয়ারপার্সনরা। অভিযোগ, জালিয়াতির জন্য ওই চেয়ারপার্সনদের সই পাঠাতে বলা হয়। তাঁদের অজান্তেই সইগুলি স্ক্যান করে বসানো হয় সুপারিশ পত্রে। যাঁদের সই পাওয়া গিয়েছে, তাঁদেরও সিবিআই জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করছে। নিয়ম ভেঙে সুপারিশপত্রগুলি মধ্যশিক্ষা পর্ষদের নিয়োগ বিভাগে না পাঠিয়ে সরাসরি পাঠানো হয় পর্ষদের তৎকালীন সভাপতি কল্যাণময় গঙ্গোপাধ্যায়ের কাছে। তারই ভিত্তিতে চাকরির নিয়োগপত্র তৈরি করা হয়। কিন্তু নিয়ম অনুযায়ী চাকরিপ্রার্থীদের নাম এসএসসি-র কেন্দ্রীয় কমিশনের ওয়েবসাইটে তুলে তাঁদের তথ্য যাচাই করার সুযোগ দেওয়া হয়নি। ফলে পাস করা যোগ্য প্রার্থীরা নিয়োগপত্রগুলি সংগ্রহ করার সুযোগই পাননি। পার্থবাবু এদিন জেরায় এই তথ্যগুলি এড়িয়ে যেতে চাইলেও বেশ কিছু তথ্য ও হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজ তাঁর সামনে হাজির করা হয়। জালিয়াতির অভিযোগ অস্বীকার করতে চাইলেও ওই স্ক্যান করা সই-সহ পুরো প্রক্রিয়া পার্থবাবুর নির্দেশেই হয়েছিল বলে অভিযোগ সিবিআইয়ের।
[আরও পড়ুন: দুর্গাপুজো নিয়ে ফের পরিকল্পনা বদল বিজেপির, শাহ-নাড্ডাকে দিয়ে উদ্বোধনের ভাবনা]
এদিকে, কল্যাণময়বাবুর দাবি, তাঁর স্ক্যান করা সই দিয়ে নিয়োগপত্র তৈরি হয়েছিল। সিবিআইয়ের পাল্টা অভিযোগ, তিনি তাঁর অধীনে থাকা পর্ষদের টেকনিক্যাল অফিসারকে নির্দেশ দিয়েছিলেন, তাঁর সই স্ক্যান করে জাল নিয়োগপত্র তৈরি করতে। সেগুলি পর্ষদের কয়েকজন আধিকারিক ও কর্মীর সহযোগিতায় তৈরি হয় ও তাঁদের হেফাজতেই রাখা হয়। কিন্তু পুরোটাই হয় কল্যাণময়বাবুর নির্দেশে, যা পুরোটাই জানতেন পার্থবাবু ও ধৃত এসএসসি-কর্তা শান্তিপ্রসাদ সিনহা। তাঁদের মুখোমুখি বসিয়ে জেরা করে সিবিআই আরও তথ্য জানার চেষ্টা করছে। এই ক্ষেত্রে মধ্যশিক্ষা পর্ষদের টেকনিক্যাল অফিসার-সহ অন্যদের কী ভূমিকা ছিল, তা জানতে এবার তাঁদেরও জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে ও প্রয়োজনে আইনি ব্যবস্থাও নেওয়া হবে বলে জানিয়েছে সিবিআই।