নন্দন দত্ত, সিউড়ি: রাতে ছিলেন সম্ভাব্য কংগ্রেস (Congress) প্রার্থী। সকালে লড়তে চাইলেন তৃণমূলের হয়ে। মুখ্যমন্ত্রীর ফোনেই মত বদলে ফেললেন মোশারফ হোসেন। ফলে বীরভূমের মুরারই বিধানসভা কেন্দ্রে নাটকীয়ভাবে বদল হতে চলেছে তৃণমূলের প্রার্থী। সম্ভাব্য প্রার্থী মোশারফ পেশায় শিশু বিশেষজ্ঞ। তাঁর বক্তব্য, “কংগ্রেসের প্রার্থী হতে চেয়ে আমি স্বাস্থ্য দপ্তরের কাছে ছুটি চেয়েছিলাম। কিন্তু বুধবার সকালে স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী আমাকে তাঁর দলের প্রার্থী হতে বলেন। আমি আর তাঁর কথা ঠেলতে পারিনি। তৃণমূলের প্রার্থী হতে চেয়ে ফের স্বাস্থ্য দপ্তরের কাছে ছুটি চাইলাম।”
এ প্রসঙ্গে তৃণমূলের জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল (Anubrata Mandal) জানান, তাদের ঘোষিত প্রার্থী আবদুর রহমান করোনায় আক্রান্ত। তাই তাঁর বদলে অন্য প্রার্থীর প্রয়োজন পড়েছিল। অন্যদিকে কংগ্রেসের জেলা সভাপতি মিলটন রশিদ জানান, তাদের প্রার্থী হতে চেয়ে তাঁর কাছে থেকে মোশারফ হোসেন চিঠি লিখিয়ে নিয়ে গিয়েছেন। কেউ যদি তাদের প্রার্থীকে অপহরণ করে তাহলে কী আর করা যাবে? আসলে গত বিধানসভা নির্বাচন থেকেই মোশারফ হোসেনকে প্রার্থী করা নিয়ে টানাপোড়েন শুরু হয় কংগ্রেস (Congress) ও তৃণমূলের মধ্যে। কারণ মোশারফ হোসেন মুরারইয়ের প্রয়াত কংগ্রেস নেতা মোতাহার হোসেনের ছেলে। যিনি কংগ্রেস আমলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন। চারবার বিধায়ক হিসাবে এলাকায় উন্নয়নে কাজ করেছেন। তাঁর বাবার পরিচিতি মুরারই এলাকায় মিথ হয়ে আছে। সেটাই কাজে লাগাতে চেয়েছে দুই দল।
[আরও পড়ুন: ‘মমতা জখম হলে নাটক, ওরা মার খেলে হামলা?’ বারাকপুরের অশান্তি নিয়ে বিজেপিকে তোপ মদনের]
প্রসঙ্গত, মুরারই (Murarai) কেন্দ্রটি কংগ্রেস ও তৃণমূলের কাছে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের কেন্দ্র। ২০১৬ বিধানসভা নির্বাচনে কংগ্রেস প্রার্থী আলি খান তৃণমূলের আবদুর রহমানের কাছে মাত্র ২৮০ ভোটে পরাজিত হয়েছিলেন। পরে আলি খান তৃণমুলে যোগ দেন। এবারে আলি খানকে বাদ দিয়ে আবদুর রহমানকে প্রার্থী করে তৃণমূল। প্রকাশ্যে কিছু না বললেও তৃণমূলের একাংশের ক্ষোভ ছিল সেটা নিয়ে। অন্যদিকে কংগ্রেস আশিফ ইকবালকে প্রার্থী করে। তিনি দেওয়াল লিখন থেকে প্রচার শুরু করে দেন। কিন্তু তাঁকে ঘিরে অসন্তোষ দেখা যায় হাত শিবিরেও। কার্যালয়ে তালা মেরে বিক্ষোভ শুরু হয়। তখন প্রদেশ কংগ্রেসের উদ্যোগে মোশারফ সাহেব কংগ্রেসের প্রার্থী হতে চেয়ে স্বাস্থ্য দপ্তরে ছুটি চান। তাঁকে ঘিরে দেওয়াল লেখা শুরু হয়ে যায়। যদিও মোশারফ সাহেব দাবি করেছেন, আমি কাউকে দেওয়াল লিখতে বলিনি।”
[আরও পড়ুন: ‘বিজেপির বিরুদ্ধে একত্রিত হোন’, একযোগে ১৫ জন বিরোধী নেতাকে চিঠি মমতার]
বুধবার সকালেই পরিস্থিতি পালটে যায়। দলীয় সূত্রের খবর, মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ পেয়েই মোশারফ সাহেব বোলপুরে তৃণমূল জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের বাড়িতে যান। তিনি মুরারই কেন্দ্রের প্রার্থী হিসাবে স্বাস্থ্য দপ্তরে ছুটির ক্ষেত্রে দলের তরফে একটি চিঠি লিখে দেন। যদিও অনুব্রতবাবু বলেন, মোশারফ সাহেবের সঙ্গে কলকাতা তৃণমূল দপ্তর যোগাযোগ রাখছে। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের দপ্তর তার বিষয়টি দেখছেন। তবে আবদুর সাহেব অসুস্থ হওয়ায় প্রার্থী বদল হচ্ছে মুরারইয়ে।
ছবি: সুশান্ত পাল