অর্ণব আইচ: তার না আছে স্বাদ, না কোনও গন্ধ। শুধু পানীয়র সঙ্গে কয়েক ফোঁটা তরল বা সাদা গুঁড়ো মেশালেই হল। পানীয়র গ্লাস শেষ হতে না হতেই নারীর চোখে প্রথমে চোখে নীল নেশা। তার পর হুঁশ হারাবেন। এর পর কেউ তাকে ধর্ষণ বা যৌন নিগ্রহ করলেও বাধা দেওয়ার শক্তিটুকু তাঁর থাকবে না। জ্ঞান ফেরার পর সেই নারী বুঝতে পারবেন যে, তাঁর সর্বনাশ হয়েছে। কিন্তু কে তাঁর সর্বনাশ করেছে, সেই বিষয়ে কিছুই মনে থাকবে না।
কী সেই জিনিস? নাম ‘ডেট রেপ ড্রাগ’। গোয়েন্দাদের মতে, যেভাবে কলকাতায় ছড়িয়ে পড়েছে কোকেন, এলএসডি, এক্সট্যাসি বা ইয়াবার মতো মারাত্মক বিদেশি মাদক, তাতে এবার ‘ডেট রেপ ড্রাগ’ও এজেন্ট বা পাচারকারীদের হাত ধরে ঢুকে পড়তে পারে শহরে। এখনও পর্যন্ত এই মাদকের সন্ধান গোয়েন্দারা না পেলেও কোকেন, এলএসডি-র সন্ধান মেলার পর তিন রকমের ‘ডেট রেপ ড্রাগ’ রোহিপনল, গামা হাইড্রক্সিবিউটাইরিক বা জিএইচবি ও কেটামাইনের খোঁজ চালানোর চেষ্টা চলছে।
[ম্যাসাজ পার্লারের আড়ালে মধুচক্রের রমরমা ব্যবসা, ধৃত ৬]
গোয়েন্দাদের মতে, এই মাদক একবার কলকাতায় ঢুকলে তার ফল হতে পারে মারাত্মক। শীতের শহরে অনেক বাড়িতেই প্রাইভেট পার্টি বা রেভ পার্টির আয়োজন করা হয়। পার্টি চলাকালীন কোনও ব্যক্তি কোনও মহিলার যৌন নিগ্রহ করার জন্য ব্যবহার করতে পারে এই ধরনের মাদক। এমনকী, নাইট ক্লাবে ‘ডেট রেপ ড্রাগ’ প্রয়োগ করার পর কোনও মহিলাকে ‘অসুস্থ’ বলে বাইরে বের করে নিয়ে এসে তাঁকে কোথাও নিয়ে গিয়ে যৌন নিগ্রহ করার চেষ্টা হতে পারে, এমন সম্ভাবনাও গোয়েন্দারা উড়িয়ে দিচ্ছেন না। এই মাদকগুলির মধ্যে রোহিপনল পাওয়া যায় ট্যাবলেটের চেহারায়। এর অন্য নাম সার্কেলস, ফরগেট পিল, রোপ, হোয়াইটিস। আবার জিএইচবি সাধারণত তরল ও পাউডারের আকারে মেলে। এর ডাক নাম এনার্জি ড্রিঙ্ক, জি-জুস, লিকুইড এক্স বা সোপ। কেটামাইন হচ্ছে সাদা পাউডার। কে, কিট ক্যাট, ব্ল্যাক হোল, বাম্প নামে পরিচিত এই মাদক।
[মাদকচক্রের পর্দাফাঁস, রেভ পার্টির আগে পার্ক স্ট্রিটের নাইটক্লাবের ডিজে-সহ ধৃত ৩]
গোয়েন্দারা জানিয়েছেন, পার্টি চলার সময় কোনও মহিলার পানীয়র সঙ্গে মাদক তরল বা পাউডার মিশিয়ে দিলেই হল। সাধারণত আধঘণ্টার মধ্যে সেই মহিলা চেতনা হারাবেন। সেই সুযোগে কেউ তাঁর উপর যৌন অত্যাচার শুরু করলেও তিনি বাধা দিতে পারবেন না। কিন্তু তিনি বুঝতে পারবেন যে, তাঁর উপর অত্যাচার চালানো হচ্ছে। আবার মাদকের প্রভাবে তাঁর মনে হতে পারে, স্বপ্ন দেখছেন তিনি। এই মাদকের প্রভাব পুরো একদিন বা তারও বেশি থাকতে পারে। শেষ পর্যন্ত ঘুমিয়ে পড়বেন ওই মহিলা। কিন্তু ঘুম থেকে ওঠার পর তাঁর মনে থাকবে না যে, কে তাঁর উপর যৌন অত্যাচার চালিয়েছে। এমনকী, মদের সঙ্গে বেশি পরিমাণ এই মাদক মেশালে সেই মহিলা কোমায় চলে যেতে পারেন। মৃত্যুও হতে পারে তাঁর।
[শহরে মাদক চোরাচালানের রমরমা, অনলাইনে বিকোচ্ছে চরস-কোকেন!]
তাই ‘ডেট রেপ ড্রাগ’ থেকে শহরের মহিলাদের সতর্ক করছেন গোয়েন্দারাও। সতর্কবার্তা হিসাবে গোয়েন্দারা জানিয়েছেন, অন্যদের হাত থেকে পানীয়র গ্লাস না নেওয়াই ভাল। পানীয় সারাক্ষণ যেন হাতেই থাকে। এমনকী, বাথরুমে গেলেও যেন পানীয়র গ্লাস সঙ্গে নিয়ে যান মহিলারা। বার টেন্ডার গ্লাসে পানীয় ঢালার সময় তাঁর হাতের দিকে নজর রাখতে বলা হয়েছে। মহিলাদের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে, তাঁরা যেন বার টেন্ডারের কাছ থেকে নিজের হাতেই পানীয়র গ্লাস নেন। যদি কোনওভাবে সন্দেহ হয়, সেই পানীয় ফেলে দেওয়ারও পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। ‘ডেট রেপ ড্রাগ’ রুখতে এবার শহরের এজেন্টদের উপর নজরদারি রাখা হচ্ছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। গোয়েন্দাদের মতে, কোকেন, এলএসডি, এক্সট্যাসি বা ইয়াবার মতো মারাত্মক বিদেশি মাদকের পাশাপাশি ‘ডেট রেপ ড্রাগ’ও এজেন্ট বা পাচারকারীদের হাত ধরে ঢুকে পড়তে পারে শহরে।
[৬০০ টাকার বাইক বুকিংয়ে ঘুষ ১৬০০ টাকা, ক্লার্কের কুকীর্তিতে মাথা হেঁট রেলের]
The post বর্ষবরণের পার্টিতে লালসা মেটাতে মহিলাদের ডেট রেপ ড্রাগ, সতর্ক গোয়েন্দারা appeared first on Sangbad Pratidin.