আর্জেন্টিনা ৩ (মেসি–হ্যাটট্রিক)
বলিভিয়া ০
সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: আর্জেন্টিনার (Argentina) প্রাণভোমরা তিনি। বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফুটবলারও। অথচ সবুজ গালচেতে নীল-সাদা জার্সিধারীদের ছন্দপতন হলেই সমালোচকদের নখ-দাঁতে ক্ষতবিক্ষত হতেন তিনিই। সবাই ভুলে যেত ফুটবল দলগত খেলা। একা একজনকে দিয়ে একটা-দুটো ম্যাচ জেতা যায়। সব ম্যাচ জিতে নেওয়া যায় না। মানুষ ভুলে যেত, লিওনেল আন্দ্রেজ মেসি (Lionel Messi) মহামানব নন। তিনিও আমাদের মতোই রক্তমাংসের মানুষ। তাঁর একদা সতীর্থ একসময়ে তো বলেই ফেলেছিলেন, “ওহে বালক, খেলায় তোমায় মন নেই।” সে সব অবশ্য অনেকদিন আগের কথা।
নিন্দুকরা বলতেন, ছেলেটা বেগুনি রংয়ের বার্সেলোনার জার্সিতে নিজেকে উজাড় করে দিলেও দেশের নীল-সাদা জার্সিতে পুরোদস্তুর ফ্লপ। এরকম কত সমালোচনা ধেয়ে এসেছে খর্বকায় বাঁ পায়ের জাদুকরের দিকে তার ইয়ত্তা নেই। সেই মেসি এখন তাঁর সমালোচক-নিন্দুকদের মুখ বন্ধ করার জন্য দেশের জার্সিতে নিজেকে আগের থেকেও বেশি করে মেলে ধরছেন। যে মারাকানা স্টেডিয়ামে বিশ্বকাপ ফাইনালে হেরে গিয়ে চোয়াল শক্ত করে মাঠ ছেড়েছিলেন, সেই মাঠেই ব্রাজিলকে হারিয়ে কোপা আমেরিকা জিতেছেন মাসকয়েক আগে। এবার বিশ্বকাপের যোগ্যতা পর্বের ম্যাচে বলিভিয়ার (Bolivia) বিরুদ্ধে দুরন্ত হ্যাটট্রিক করলেন। দলকে জেতালেন। খেলার শেষে স্কোরলাইন বলছে, আর্জেন্টিনা ৩ বলিভিয়া ০। গোলগুলো করলেন ১৪, ৬৪ ও ৮৮ মিনিটে। স্কোরলাইন দেখেই বোঝা যাচ্ছে আর্জেন্টিনার দাপট ছিল ম্যাচে। গোটা বিশ্ব জানে, যেদিন মেসি ঝলসে ওঠেন, সেদিন তাঁর প্রতিপক্ষরা স্রেফ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখেন মহানায়কের ধ্বংসলীলা। বলিভিয়াকে চূর্ণ করে জাতীয় দলের জার্সিতে মেসি নিজের গোলসংখ্যা নিয়ে গেলেন ৭৯-তে। ছাপিয়ে গেলেন ফুটবল-সম্রাট পেলেকেও (Pele)। ব্রাজিলীয় কিংবদন্তির গোল ছিল ৭৭টি। গোলসংখ্যার নিরিখে মেসি অতিক্রম করলেন ব্রাজিলের বিখ্যাত ১০ নম্বর জার্সিধারীকেও। দক্ষিণ আমেরিকার ফুটবল ইতিহাসে সর্বোচ্চ গোলদাতার নাম আজ থেকে লিও মেসি।
[আরও পড়ুন: Sourav Ganguly Biopic: ‘আমার জীবনের সফর নিয়ে ছবি তৈরি হচ্ছে’, বায়োপিকের ঘোষণায় রোমাঞ্চিত সৌরভ]
ইদানীং মাঠে এবং মাঠের বাইরে আবেগী হয়ে পড়ছেন বিশ্ব ফুটবলের রাজপুত্র। বার্সেলোনা ত্যাগ করে প্যারিস সাঁ জাঁ-য় যাওয়ার আগে সাংবাদিক বৈঠকে চোখের জল সামলাতে পারেননি তিনি। এদিনও পেলেকে ছাপিয়ে যাওয়ার পরে আবেগের কাছে হার মানলেন। চোখ দিয়ে নামল জলের ধারা। কেন কাঁদলেন মেসি? কেন বারংবার আবেগের কাছে হার মানছেন এলএম ১০? জবাবটাও দিলেন তিনি।
ম্যাচের শেষে সাক্ষাৎকারে বললেন, “মনুমেন্তালের দর্শকদের সামনে এই রেকর্ডটা করতে পেরে ভাল লাগছে। এর থেকে ভাল আর কী হতে পারে!” মেসির রেকর্ড গড়ার দিনে স্ট্যান্ডে ছিলেন তাঁর মা ও ভাই। কাঁপা গলায় মেসি বললেন, “আমার মা-ভাই স্ট্যান্ডে রয়েছে। ওঁরা আমার জন্য অনেক ত্যাগ করেছে। অনেক কষ্ট করেছে। ওঁদের সামনে এই রেকর্ড গড়তে পেরে আমি খুশি।”
বিশ্বকাপের বাছাইপর্বে বহুদিন পর ঘরের মাঠে খেলতে নেমেছিল মেসির আর্জেন্টিনা। করোনার ভয়কে দূরে ঠেলে মাঠে দেখা গিয়েছিল দর্শকদেরও। তাঁদেরকে নিরাশ করেননি মেসি। নিজেও পেলেকে ছোঁয়ার মাহেন্দ্রক্ষণের দিকে হয়তো তাকিয়েছিলেন। তাই মেসিকে বলতে শোনা গিয়েছে, “আমি এই মুহূর্তটা উপভোগ করতে চেয়েছিলাম। রেকর্ড ভাঙার স্বপ্ন দেখতাম। দীর্ঘ অপেক্ষার পরে রেকর্ডটা করতে পেরেছি। দুর্দান্ত মুহূর্ত।”
[আরও পড়ুন: টি-২০ বিশ্বকাপে টিম ইন্ডিয়ার মেন্টর হওয়া নিয়ে বিতর্কে ধোনি, উঠল স্বার্থের সংঘাতের অভিযোগ]
সময়টা ভাল যাচ্ছে মেসির। কোপা জিতেছেন। এবার পেলেকেও টপকে গেলেন। কনমেবলের ইতিহাসেও সর্বোচ্চ গোলদাতা তিনিই। লিওনেল মেসি কি সমালোচকদের মুখ বন্ধ করার খেলায় নেমেছেন? উত্তরগুলো তোলা থাকুক অন্য কোনও দিনের জন্য। বিতর্ক থাকুক দূরে। আজ শুধু মেসির দিন।