Russia-Ukraine Crisis: ইউক্রেনেই থামবে রুশ আগ্রাসন? নাকি আরও বড় প্ল্যান পুতিনের? কী বলছেন বিশেষজ্ঞরা

11:07 PM Feb 25, 2022 |
Advertisement

সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভে (Kyiv) কান পাতলেই শোনা যাচ্ছে রুশ সেনার বুটের শব্দ। বাতাসে বারুদের পোড়া গন্ধ। ইউক্রেন (Russia-Ukraine Crisis) জুড়ে চাপা আতঙ্ক আর বুকচাপা কান্নার আবহ। হুমকি-চোখ রাঙানি-নিষেধাজ্ঞা কোনও কিছুই দমাতে পারেনি রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে। ইউক্রেন জয়ের লক্ষ্যে অটল তিনি। কিন্তু এখানেই কি শেষ হবে পুতিনের উচ্চাকাঙ্খা? থামবে রুশ আগ্রাসন? ব্যাপারটা অত সহজ নয়, বলেই মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল। রুশ প্রেসিডেন্টের লক্ষ্য অনেক বড়।

Advertisement

ঠাণ্ডা যুদ্ধের শেষে তদানীন্তন সোভিয়েত ইউনিয়নের পতন নাড়া দিয়েছিল ভ্লাদিমির পুতিনকে। মেনে নিতে পারেনি রাশিয়া-রাজের এহেন হাল। বারবার তাঁর বক্তব্যে সে কথা উঠে এসেছে। পুনরায় সোভিয়েত ইউনিয়ন গঠনের স্বপ্নও দেখেন পুতিন। সে কথা প্রকাশ্যেই স্বীকার করেছেন রুশ প্রেসিডেন্ট। ইউক্রেন দখল সেই স্বপ্নপূরণের প্রথম ধাপ বলেই মনে করছে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞরা। ফলে এর পর যদি রুশ প্রেসিডেন্ট বলকান এলাকার দেশগুলিকে রাশিয়ায় অন্তর্ভুক্ত করতে চান, অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।

[আরও পড়ুন: ‘আর আগে এত ক্ষতি হয়নি রাশিয়ার’, হাজার রুশ সেনাকে খতম করে হুঙ্কার ইউক্রেনের]

এ প্রসঙ্গে মতামত প্রকাশ করতে গিয়ে ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনের সিনিয়র গবেষক ভ্লাদিমির পাশতুহভ পুতিনের সঙ্গে ইরানের ‘সর্বময় কর্তা’ আয়াতোল্লার সঙ্গে পুতিনের তুলনা করেন। বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে, “সম্ভব হলে ইউক্রেনের বাইরে থাবা বসাতে পারে রাশিয়া।” এক সময় ইউক্রেনের মার্কিন রাষ্ট্রদূত ছিলেন উইলিয়াম টেলর। তিনি বলছেন, “মনে হচ্ছে না রাশিয়া এবার ইউক্রেনেই থেমে যাবে বলে। ইউক্রেনে রুশ ট্যাঙ্কার, প্যারা ট্রুপারস এবং পদাতির বাহিনীপ দাপাদাপি দেখেই বুকে কাঁপুনি ধরেছে সোভিয়েত ইউনিয়নের অংশ পোলান্ড, রোমানিয়া এবং চেক প্রজাতন্ত্রেরও।” ২০০৪ সালে বাল্টিক দেশগুলি আমেরিকার নেতৃত্বাধীন ন্যাটোগোষ্ঠীতে যোগ দিয়েছিল। সাম্প্রতিক পরিস্থিতিতে রুশ আগ্রাসনের বিরোধিতা রপে তারা ইউক্রেনের পাশে দাঁড়িয়েছিল। তাই মস্কোর যুদ্ধংদেহী মনোভাব বাল্টিক দেশগুলির নেতাদের মনেও ভয় ধরিয়েছে। যদি তাদের দেশেও থাবা বসায় পুতিনের বাহিনী?

Advertising
Advertising

চাথ্যাম হাউজের রাশিয়া এবং ইউরেশিয়া প্রোগ্রামের প্রধান জেমস নিকসের আশঙ্কা বলকান অঞ্চল নিয়ে। তাঁর আশঙ্কা, রাশিয়ার পরবর্তী টার্গেট হতে পারে বলকান অঞ্চলের সার্বিয়া এবং হাঙ্গেরি। কারণ পশ্চিমী দেশগুলি এতদিন এদের নিয়ে মাথা ঘামায়নি। তাদের দিকে নজর দেয়নি। মলডোভা এলাকায়ও হতে পারে রুশ আগ্রাসন।

নিরাপত্তার নামে দেশ দখলের চেষ্টা, রাশিয়ার পুরনো ‘খেলা’। ২০০৮ সালে জর্জিয়ার শাসকের বিরুদ্ধে স্বেচ্ছাচারের অভিযোগ এনেছিল মস্কো। সে দেশে গণহত্যার হাত থেকে ওসেইটিয়ানসদের রক্ষার নামে হামলা চালিয়েছিল। যদিও রাশিয়ার সেই যুক্তি ধোপে টেকেনি। ব্যর্থ হয়েছিল তাদের অভিযান। এর পর ২০১৪ সালে ক্রিমিয়াকেও নিজেদের অংশ বলে দাবি করে রাশিয়া। উল্লেখ্য, ইউক্রেনকে আলোচনার টেবিলে আনতে পুতিন সমস্ত শর্ত রেখেছেন, তার মধ্যে অন্যতম হল, ক্রিমিয়াকে রাশিয়ার অংশ বলে স্বীকার করতে হবে কিয়েভকে।

[আরও পড়ুন: ভেঙে পড়ল শেষ প্রতিরোধ! ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভে ঢুকল রুশ বাহিনী]

সোভিয়েত ইউনিয়ন গড়তে এক অনবদ্য ছক কষেছে রুশ সেনাবাহিনী। নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক কিছু প্রাক্তন সেনা সেই ছক ফাঁস করেছে আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমে। দেশ দখলের সেই পরিকল্পনার তিনটি ধাপ রয়েছে। এক, বিদ্রোহীদের অধিকৃত অঞ্চলকে স্বাধীন হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া। দুই, সেখানে নিরাপত্তার অজুহাতে রুশ সেনা পাঠানো। তিন, ওই অঞ্চলে গণভোটের আয়োজন করা, সেই ভোটের মাধ্যমে অঞ্চলটিকে রাশিয়ার অংশ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা। এই অঙ্কেই হারিয়ে যাওয়া সোভিয়েত ইউনিয়নকে পুনরুদ্ধারের স্বপ্ন দেখছে পুতিনের রাশিয়া। পশ্চিমী দেশগুলি যথাযথ ব্যবস্থা না নিলে রাশিয়ার এহেন আগ্রাসন যে এখানেই থামবে না, তা একপ্রকার স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে।

Advertisement
Next