সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: কয়েকমাস আগেই ইরানে খুন হয়েছিলেন হামাসের রাজনৈতিক প্রধান ইসমাইল হানিয়েহ। তার জায়গায় প্যালেস্টাইনের জঙ্গি সংগঠনটির নতুন প্রধান হয়েছিল ইয়াহিয়া সিনওয়ার। গত বছরের ৭ অক্টোবর ইজরায়েলের বুকে হওয়া ভয়ানক হামলার মূলচক্রী কুখ্যাত এই জঙ্গি। গাজায় ইজরায়েলি সেনার বোমাবর্ষণে খতম হয়েছে সিনওয়ার! কুখ্যাত এই জেহাদির শেষ মুহূর্তের ভিডিও প্রকাশ করে এমনটাই দাবি করেছে ইজরায়েলি ডিফেন্স ফোর্সেস (আইডিএফ)।
এক বছর পেরিয়ে গিয়েছে যুদ্ধের। হামাস নিধনে গাজায় রক্তগঙ্গা বইয়ে দিচ্ছে ইজরায়েল। যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে তেল আভিভের টার্গেটে রয়েছে হামাসের শীর্ষনেতারা। হানিয়েহর পর নিশানায় ছিল সিনওয়ারও। বৃহস্পতিবার আইডিএফের তরফে এক বিবৃতি দিয়ে জানায়, ‘গাজায় ইজরায়েলি হামলায় তিন জঙ্গি নিকেশ হয়েছে। আইডিএফ খতিয়ে দেখছে সেই তিনজনের মধ্যে একজন সিনওয়ার কিনা।' এর পরই একটি ড্রোন ফুটেজ এক্স হ্যান্ডেলে প্রকাশ করে হামাস প্রধান সিনওয়ারের নিকেশ হওয়ার খবর জানানো হয় আইডিএফের তরফে। যদিও এখনও প্যালেস্টাইনের জঙ্গি সংগঠন হামাস সিনওয়ারের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেনি।
কী রয়েছে সেই ফুটেজে? ভিডিওতে দেখা গিয়েছে একটি বহুতল ইজরায়েলি বোমায় কার্যত ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। ভিতরের দেওয়ালগুলো ভেঙে পড়েছে। আগুনে পুড়ে গিয়েছে কংক্রিটগুলো। ধুলোয় ঢেকেছে ঘরগুলো। সেখানেই একটি ঘরে সর্বাঙ্গে ধুলো মেখে সোফায় বসে রয়েছে হামাস প্রধান সিনওয়ার। কিন্তু স্কার্ফ দিয়ে তার মাথা-মুখ সম্পূর্ণ ঢাকা। ড্রোন ফুটেজ দেখে মনেই হচ্ছে সেসময় সিনওয়ার গুরুতর আহত ছিল। কিন্তু ইজরায়েলি সেনার ড্রোন দেখে কাঁপা কাঁপা হাতে একটি লাঠি ছুড়ে মারে। তার পরই একটি বোমা এসে পড়ে সেখানে। আর তাতেই খতম হয় হামাস প্রধান।
সিনওয়ারের মৃত্যু নিয়ে আইডিএফের মুখপাত্র রিয়ার অ্যাডমিরাল ড্যানিয়েল হাগারি জানান, "গাজায় আমাদের অভিযানের লক্ষ্য সফল হয়েছে। খতম হয়েছে হামাস প্রধান ইয়াহিয়া সিনওয়ার। ইজরায়েলের ইতিহাসে রক্তাক্ত দিন ৭ অক্টোবর। আমাদের দেশের বুকে হওয়া এই হামলার জন্য দায়ী সিনওয়ার। সেদিন হামাস জঙ্গিরা গাজা থেকে ইজরায়েলে এসে আমাদের নাগরিকদের বাড়িঘর ধ্বংস করেছে। আমাদের মেয়েদের ধর্ষণ করেছে। বহু পরিবারকে জীবন্ত পুড়িয়েছে। পুরুষ-মহিলা-শিশু হল ২৫০ জনকে অপহরণ করে নিয়ে যায়। ১০১ জন এখনও গাজায় হামাসের ডেরায় বন্দি। সিনওয়ার পালানোর অনেক চেষ্টা করেছিল। কিন্তু আমরা ওর বিচার করেছি।" এদিকে, সিনওয়ারের মৃত্যুর পর ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু জানান, "আমরা শয়তানের কোমর ভেঙে দিয়েছি।"
উল্লেখ্য, হামাসের সঙ্গে ইজরায়েলের যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকেই গাজায় আত্মগোপন করে ছিল সিনওয়ার। গত ডিসেম্বর মাসে তার গোপন ডেরায় হামলা চালিয়েছিল ইজরায়েলি ফৌজ। সিনওয়ারের জন্ম গাজার খান ইউনিয়ের একটি শরণার্থী শিবিরে। ২০১৭ সালে গাজাতেই তাকে হামাসের নেতা হিসাবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। এর আগে দীর্ঘ ২৩ বছর ইজরায়েলের একটি জেলে বন্দি ছিল এই জেহাদি। জুলাই মাসের শেষে হানিয়েহর মৃত্যুর পর আগস্ট মাসে নতুন প্রধান হিসাবে সিনওয়ারকে বেছে নেয় হামাস। ফলে এবার কাকে প্রধান হিসাবে বেছে নেয় হামাস সেদিকে নজর রয়েছে ইজরায়েলের।