সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি এখনও হয়নি আমেরিকার। এরই মাঝে, ভারতের কৃষিক্ষেত্রে মার্কিন অনুপ্রবেশের চেষ্টায় রেড সিগন্যাল দেখিয়ে দিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। থমকে গিয়েছে বাণিজ্য চুক্তি। ভারতীয় আমদানিতে (Indian Goods Tariff) মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আকাশছোঁয়া ৫০ শতাংশ শুল্কের পর এবার ফের নতুন আক্রমণের মুখে ভারত। বিশ্বব্যাপী বাণিজ্য যুদ্ধের নয়াদিল্লির বিরুদ্ধে নতুন ফ্রন্ট খুলেছে আরেকটি দেশ। বুধবার, মেক্সিকোর সেনেটে ভারত, চিন এবং অন্যান্য বেশ কয়েকটি এশীয় দেশ থেকে আমদানি করা পণ্যের উপর ৫০ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। রাজনৈতিক মহলের ধারণা, এই সবই ট্রাম্পকে খুশি করার জন্য করা হয়েছে।
নতুন বছরের ১ জানুয়ারী থেকে এই শুল্ক কার্যকর হবে বলে জানা গিয়েছে। এই শুল্ক বৃদ্ধির ফলে মেক্সিকোর সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি না থাকা দেশগুলি থেকে আসা গাড়ি, গাড়ির যন্ত্রাংশ, জামাকাপড়, প্লাস্টিক এবং ইস্পাতের মতো পণ্যের উপর ৫০ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপ করা হবে। এর অর্থ ভারত, দক্ষিণ কোরিয়া, চিন, থাইল্যান্ড এবং ইন্দোনেশিয়ার মতো দেশগুলির উপর এর প্রভাব পড়বে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। জানা গিয়েছে আসন্ন বছরে রাজস্ব হিসেবে ৩.৭৬ বিলিয়ন ডলার অর্থাৎ প্রায় ৩৩.৯১০ কোটি টাকা অতিরিক্ত আয় করার পরিকল্পনা করছে মেক্সিকোর সরকার।
মেক্সিকোর তরফে জানানো হয়েছে, দেশের প্রেসিডেন্ট ক্লদিয়া শেইনবম দেশীয় উৎপাদন বৃদ্ধিতে জোর দেওয়ার চেষ্টা করছেন। তবে বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই পদক্ষেপ আসলে মার্কিং প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে সন্তুষ্ট করার একটি প্রচেষ্টা। জানা গিয়েছে, কিছুদিনের মধ্যেই আমেরিকা-মেক্সিকো-কানাডা বাণিজ্য চুক্তি (USMCA) পর্যালোচনা করবে ওয়াশিংটন। এর মাধ্যমে মেক্সিকোর বৃহত্তম বাণিজ্যিক অংশীদার যুক্তরাষ্ট্র। তাই এর আগেই ট্রাম্পকে তুষ্ট করতে আসরে নেমেছেন ক্লদিয়া। এই বছরের শুরুতেই চিনা পণ্যের উপর শুল্ক বৃদ্ধি করে মেক্সিকো। এরপরে নতুন করে এই শুল্ক আরোপের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। গত কয়েক মাস ধরেই মেক্সিকো সম্পর্কে ট্রাম্প উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। গত কয়েক মাস ধরে ধারাবাহিকভাবে শেইনবম সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়েছেন তিনি।
গত কয়েক সপ্তাহ ধরে, ট্রাম্প মেক্সিকোর ইস্পাত এবং অ্যালুমিনিয়ামের উপর ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপের হুমকি দিয়েছেন। পাশাপাশি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ওপিওয়েড ফেন্টানিল ঢোকা বন্ধ নান করার অভিযোগে অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের হুমকি দিয়েছেন। এর উপরে আরও পাঁচ শতাংশ শুল্ক চাপানোর দাবি করেছেন। তাঁর দাবি, ১৯৪৪ সালে আমেরিকা এবং মেক্সিকোর মধ্যে জল ব্যবহারের চুক্তি হয়। এই চুক্তির মধ্যে দিয়ে মার্কিন কৃষকরা মেক্সিকোর জল ব্যবহারের সুযোগ পেতেন। ট্রাম্প জানিয়েছেন, মেক্সিকো এই চুক্তি লঙ্ঘন করেছে। এই কারণেই তাঁদের উপর এই অতিরিক্ত শুল্ক চাপানো হয়েছে।
ভারতের উপর মেক্সিকোর ৫০ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপের পদক্ষেপ দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের উপর বড় প্রভাব ফেলতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। ২০২৪ সালে দুই দেশের মধ্যে মানিজ্যের পরিমাণ সর্বকালের সর্বোচ্চ হয়। সেই সময় বাণিজ্যের পরিমাণ ১১.৭ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছায়। অন্যদিকে, মেক্সিকোর পণ্য রপ্তানির তালিকায় ভারত নবম স্থানে রয়েছে। বর্তমানে, মেক্সিকোর সঙ্গে ভারতের বাণিজ্যের পরিমাণ উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। জানা গিয়েছে, ২০২৪ সালে মেক্সিকোতে ভারতের রপ্তানি ছিল প্রায় ৮.৯ বিলিয়ন ডলার। সেখান থেকে আমদানির পরিমাণ ছিল ২.৮ বিলিয়ন ডলার। এরফলে নয়াদিল্লির পক্ষে উল্লেখযোগ্য বাণিজ্য ভারসাম্য তৈরি হয়েছে। ২০২৪ সালে, মেক্সিকোতে ভারতের রপ্তানি করা প্রধান পণ্য ছিল মোটর গাড়ি, অটো যন্ত্রাংশ এবং অন্যান্য যাত্রীবাহী যানবাহন। কিন্তু নতুন নির্দেশে, মেক্সিকো এই পণ্যগুলির উপর অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করায়, ভারতের রপ্তানিতে আগামী বছর গুরুতর ক্ষতি হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
