সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: তবে কী সত্যিই হাতি ও ড্রাগনের নাচ দেখতে চলেছে বিশ্ব? এশিয়ার দুই মহাশক্তিধর সংঘাত ভুলে এক হতে চলেছে। মার্কিন পডকাস্টার লেক্স ফ্রিডম্যানকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির তরফে চিনের প্রশংসার পর এবার পালটা বিবৃতি এল বেজিংয়ের তরফে। যেখানে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর প্রশংসার পাশাপাশি আরও একবার বেজিং ও নয়াদিল্লিকে একজোট হওয়ার বার্তা দিলেন চিনের প্রতিরক্ষামন্ত্রকের মুখপাত্র মাও নিং। চিরকাল আগ্রাসনের পথে হাঁটা চিন জানাল, 'দুই দেশের সহযোগিতাই শান্তি আনবে বিশ্বে'।

সোমবার বেজিংয়ে সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে মাও নিং বলেন, ''প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি যা বলেছেন তা নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়। উনি ভারত ও চিনের সম্পর্ককে আরও শক্তিশালী করতে একে অপরের সহযোগিতার কথা বলেছেন। তাঁর এই বার্তাকে সমর্থন করে চিন। আমরাও মনে করি একে অপরের সাফল্যে অবদান রাখা উচিত দুই দেশের। হাতি ও ড্রাগনের সহযোগিতাই দুই দেশের জন্য সঠিক বিকল্প।'' মাও বলেন, "গতবছর রাশিয়ায় ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক হয় প্রেসিডেন্ট শি জিংপিংয়ের। সেই বৈঠকেই দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্কের উন্নতিতে ইতিবাচক আলোচনা হয় দুই রাষ্ট্রপ্রধানের।" মোদির বক্তব্যের প্রেক্ষিতে চিনের তরফে আরও জানানো হয়, "২ হাজার বছরেরও বেশি সময় ধরে ভারত ও চিনের পারস্পরিক যোগাযোগ ও বন্ধুত্বপূর্ণ সহযোগিতা বজায় রেখেছে। দুই দেশই একে অপরের থেকে শিখেছে। দুই বৃহত্তম উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে ভারত ও চিনের হাতে হাত রেখে পথ চলা একে অপরের জন্য ভাল। দুই দেশের সহযোগিতাই শান্তি আনবে বিশ্বে।"
উল্লেখ্য, সম্প্রতি মার্কিন পডকাস্টারকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ভারত ও চিনের সম্পর্কের কথা তুলে ধরেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। ২০২০ সালে গালওয়ানের ঘটনা প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হলে মোদি বলেন, “ভারত ও চিনের সম্পর্ক নতুন নয়। উভয় দেশের প্রাচীন সংস্কৃতি রয়েছে। বিশ্বে দুই দেশের আলাদা ভূমিকা রয়েছে। শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে আমরা একে অপরের থেকে অনেক কিছু শিখেছি। প্রাচীনকালে আমাদের সম্পর্ক অত্যন্ত শক্তিশালী ছিল। কোনও সংঘাতের ইতিহাস ছিল না। ভবিষ্যতেও এই সম্পর্ককে শক্তিশালী রাখা উচিত। আমরা প্রতিবেশী ফলে ঠোকাঠুকি লাগেই। যে কোনও পরিবারে এটা ঘটে। তবে আমরা চাই মতপার্থক্য যেন সংঘাতে না পরিণত হয়। সমস্যা হলে আলোচনার মাধ্যমে যেন তা মেটানোর উপর জোর দেই। এটা আমাদের দুই দেশের জন্যই মঙ্গলজনক।”
মোদির সেই বার্তার পর প্রধানমন্ত্রীর প্রশংসা করে চিনের বিবৃতি নিঃসন্দেহে তাৎপর্যপূর্ণ। অবশ্য ইউরোপকে টক্কর দিতে ভারতের হাতে হাত রাখার বার্তা আগেই দিয়েছিল চিন। চিনের বিদেশমন্ত্রী ওয়াং ই জানিয়েছিলেন, “আধিপত্যবাদ ও পেশিশক্তির রাজনীতির বিরুদ্ধে ভারত ও চিন উভয় দেশকে একত্রে নেতৃত্ব দিতে হবে। ফলে হাতি (ভারত) ও ড্রাগনের (চিন) নাচকে বাস্তবে পরিণত করাই একমাত্র সঠিক পথ।” তবে প্রবাদ আছে, 'চিন যা বলে তা করে না, যা করে তা বলে না'। গালওয়ানের ঘটনা ভারতের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে কীভাবে মুহূর্তে দাঁত-নখ বের করে থাবা বসাতে পারে ড্রাগন। তাই বেজিংয়ের শান্তি বার্তা যে বাস্তবে পরিস্থিতির বদল ঘটাবে তা নিয়ে যথেষ্ট সংশয় রয়েছে।