সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: দুবছর পেরিয়েও জারি রয়েছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। অন্যদিকে, গাজায় হামাসের বিরুদ্ধে লড়াই ইজরায়েল। প্রাণ ঝরছে হাজার হাজার মানুষের। এর মাঝেই গৃহযুদ্ধে জ্বলছে সিরিয়া। প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের সেনার সঙ্গে বিদ্রোহী গোষ্ঠীর লড়াইয়ে ক্ষতবিক্ষত আলেপ্পো, হোমসের মতো প্রধান শহরগুলো। এবার বিদ্রোহীরা অগ্রসর হয়েছে রাজধানী দামাস্কাসের উদ্দেশে। সেখানে সেনাবাহিনীর সঙ্গে তুমুল লড়াই চলছে বন্দুকধারীদের।
আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গিয়েছে, সিরিয়ার এই বিদ্রোহীদের নেতৃত্ব দিচ্ছে হায়াত তাহরির আল-শাম (এইচটিএস) ও তাদের সহযোগী জইশ আল ইজ্জা। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে, এই তাহরির আল-শাম আল কায়দার শাখা সংগঠন হিসেবেই পরিচিত। অর্থাৎ, গণতন্ত্র ফেরানোর লড়াই এখন কার্যত জেহাদিরা হাইজ্যাক করে নিয়েছে। সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটসের পরিচালক রামি আবদুল রহমানের কথায়, লড়াই ছাড়াই অনেক জায়গায় সরকারি বাহিনী পিছু হটেছে। যেমনটা ঘটেছে বিশ্বের অন্যতম প্রাচীন শহর আলেপ্পোয়। আসাদের সেনাকে প্রায় পর্যদুস্ত করে আলেপ্পোর বড় অংশ দখল করে নেয় বিদ্রোহীরা। সিএনএন সূত্রে খবর, একইভাবে হোমস, দারা, হামা মতোর সামরিক কৌশলগত দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ শহরগুলো কবজা করে নিয়েছে আল-শামের নেতৃত্বাধীন বিদ্রোহীরা।
জানা গিয়েছে, আজ এই বিদ্রোহীরা জানিয়েছে যে, তারা দামাস্কাস ঘেরাও করার চেষ্টা করছে। কিন্তু পালটা লড়াই জারি রেখেছে সেনা। ইতিমধ্যেই প্রাণহানি ঘটেছে শতাধিক মানুষের। প্রাণভয়ে সিরিয়া ছেড়ে পালাচ্ছেন নাগরিকরা। বিদ্রোহীদের হামলায় উত্তর সিরিয়ায় ঘরছাড়া প্রায় ২ লক্ষ ৮০ হাজার মানুষ। বিশ্লেষকদের মতে, পরিস্থিতি যে দিকে গড়াচ্ছে তাতে বিদ্রোহীদের হাতেই প্রেসিডেন্ট আসাদের পতন হতে পারে। এদিকে, সিরিয়ায় থাকায় নাগরিকদের বাঁচাতে সেনাবাহিনীকে তৈরি থাকার নির্দেশ দিয়েছেন ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু। দুশ্চিন্তা বাড়ছে সেদেশে থাকা ভারতীয়দের নিয়ে। তাই শুক্রবার মাঝরাতেই নির্দেশিকা জারি করে ভারতের নাগরিকদের যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সিরিয়া ছাড়ার নির্দেশ দিয়েছে বিদেশমন্ত্রক। নাগরিকদের সিরিয়া থেকে দ্রুত ফিরে নির্দেশ দিয়েছে রাশিয়াও।
উল্লেখ্য, ২০০০ সাল থেকেই শক্ত হাতে সিরিয়া শাসন করছেন আসাদ। তবে জলঘোলা হতে শুরু করে ২০১১ সালে। আরব বসন্তের হাওয়ায় উত্তাল হয়ে ওঠে মরুপ্রদেশটি। আকাশ বাতাস কেঁপে ওঠে একনায়ক হঠাও, গণতন্ত্র ফেরাও স্লোগানে। শুরু হয়ে যায় গৃহযুদ্ধ। আসাদকে গদিচ্যুত করতে ময়দানে ঝাঁপিয়ে পড়ে বিদ্রোহীদের যৌথমঞ্চ ‘সিরিয়ান ডেমোক্র্যাটিক ফোর্সেস’ (এসডিএফ)। কুর্দ বাহিনী পিপলস প্রোটেকশন ইউনিটের (ওয়াইপিজি) নেতৃত্বে আরম্ভ হয় এক অসম যুদ্ধ। শুরুর দিকে লড়াইয়ে আলেপ্পো হাতছাড়া হলেও, ২০১৬ সালে তা পুনরোদ্ধার করে আসাদ বাহিনী। পাশাপাশি, ইরান ও রাশিয়ার মদতে বিদ্রোহীদেরও কোণঠাসা করে দেওয়া হয়। তবে সময়ের সঙ্গে মার্কিন ও পশ্চিমের দেশগুলির মদতে সিরিয়ার সেনাবাহিনীকে জবরদস্ত পালটা মার দিতে শুরু করে বিদ্রোহীরা। সবমিলিয়ে. রাশিয়া, আমেরিকা, ইরানের মতো শক্তিগুলোর আধিপত্য বিস্তারের খেলায় বোড়ে হয়ে দাঁড়িয়েছে সিরিয়া।
