সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ইয়েমেনের জেলে মৃত্যুর প্রমাদ গুনছেন কেরলের নার্স নিমিশা প্রিয়া। 'ব্লাড মানি' বা 'মৃত্যুর দাম' সংক্রান্ত আলোচনায় তাঁর ফাঁসি পিছিয়ে গেলেও এবার বেঁকে বসলেন মৃত তালাল মেহেদির ভাই আবদুল মেহেদি। স্পষ্ট ভাষায় তিনি জানিয়ে দিয়েছেন, কোনও আলোচনা নয়, ব্লাড মানিও নেব না। আমরা নিমিশার মৃত্যুদণ্ড চাই।
গত ১৬ জুলাই ফাঁসি হওয়ার কথা ছিল নিমিশার। তবে ভারত সরকারের উদ্যোগে ব্লাড মানির মাধ্যমে তাঁকে বাঁচাতে জন্য ফাঁসির তারিখ পিছিয়ে দেওয়া হয়। ব্লাড মানি সংক্রান্ত আলোচনায় নিমিশার পরিবার তালালের ভাই আবদুলের সঙ্গে যোগাযোগ করে। নিমিশার প্রাণরক্ষায় সাড়ে ৮ কোটি টাকা দেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়। তবে আবদুল নিমিশার পরিবারের সঙ্গে কনওরকম আলোচনা করতে রাজি হননি। তাঁর বক্তব্য, বিচার পক্রিয়ায় দেরি হলেও ফাঁসির দাবিতে অনড় তাঁরা। বিবিসিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, "নিমিশার পরিবার ওঁর প্রাণ বাঁচাতে ব্লাড মানির প্রস্তাব দিলেও আমরা ওঁকে ক্ষমা করতে রাজি নই। এই অপরাধের ক্ষমা নেই। ব্লাড মানিও নেব না।''
উল্লেখ্য, তালাল মেহেদিকে হত্যার অপরাধে ২০১৭ সাল থেকে ইয়েমেনের জেলে বন্দি রয়েছেন নিমিশা। ২০১৮ সালে এই মামলায় তাঁকে মৃত্যুদণ্ডের সাজা শোনায় ইয়েমেনের আদালত। তাঁর প্রাণ বাঁচাতে এত বছর ধরে আইনি লড়াই চালিয়ে এসেছে নিমিশার পরিবার। প্রবাসী ভারতীয় ওই যুবতীর প্রাণভিক্ষার আবেদন রাষ্ট্রপতির কাছে পৌঁছলে তা খারিজ করে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের নির্দেশ দেন সে দেশের প্রেসিডেন্ট রশিদ মহম্মদ আল আলিমি। এই পরিস্থিতিতে প্রিয়ার মৃত্যুদণ্ড রদ করতে তৎপর হয় বিদেশমন্ত্রক। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ভারত সরকারের সেই চেষ্টাও ব্যর্থ হয়।
কেরলের পালাক্কড় জেলার বাসিন্দা নিমিশা প্রিয়া ২০০৮ সাল থেকে ইয়েমেনের এক হাসপাতালে কাজ করতেন। ২০১৪ সালে তাঁর স্বামী ও কন্যা ভারতে ফিরে এলেও নিমিশা সেখানে থেকে যান। উদ্দেশ্য ছিল ইয়েমেনে ক্লিলিক খোলা। সেখানে তালাল আবদো মেহদি নামে এক ব্যক্তির সঙ্গে আলাপ হয় তাঁর। দুজন মিলে সেখানে এক ক্লিনিক খোলেন। পরে এই ক্লিনিকের অংশীদারিত্ব নিয়ে অশান্তি বাধে দুজনের মধ্যে। নিমিশার পাসাপোর্ট কেড়ে নেয় সে। পুলিশে অভিযোগ জানিয়ে কোনও ফল না হওয়ায়। অন্য পথে হাঁটেন তিনি। ২০১৭ সালের ২৫ জুলাই ওই ব্যক্তিকে ঘুমের ইঞ্জেকশন দেন নিমিশা প্রিয়া। উদ্দেশ্য ছিল, অভিযুক্ত ঘুমিয়ে পড়লে পাসপোর্ট উদ্ধার করবেন। তবে ওষুধের ওভারডোজের কারণে মৃত্যু হয় ওই ব্যক্তির। এই অবস্থায় অন্য একজনের সাহায্য নিয়ে মেহদির দেহ টুকরো করে জলের ট্যাঙ্কে ফেলে দেন নিমিশা। এবং ইয়েমেন থেকে পালানোর সময় ধরা পড়ে যান। বিচারপর্বে ২০১৮ সালে ইয়েমেনের আদালত নিমিশাকে মৃত্যুদণ্ড দেয়। তাঁর প্রাণরক্ষায় সবরকম চেষ্টা করেন নিমিশার মা প্রেমা কুমারী। ভারত সরকারও তাঁর পাশে দাঁড়ায়। এমনকি সাজার বিরুদ্ধে বিগত কয়েক বছর ঘরে অনেকগুলি আন্তর্জাতিক সংগঠন লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে।
