সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: একুশের বিধানসভা নির্বাচনে জনতার কাছে অগ্নিপরীক্ষা দিয়েছেন। বিরোধীদের সঙ্গে লড়াই করে জয়ীও হন তাঁরা। এমনই এগারোজন বিধায়কের উপরেই ফের আস্থা রাখল তৃণমূল। তার মধ্যে মুকুটমণি অধিকারী বিজেপি ছেড়ে সদ্যই তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন। এবার দিল্লির লড়াইতেও জয়ের হাসিই হাসবেন বলে আত্মবিশ্বাসী প্রত্যেকে।
বিধানসভার পর এবার লোকসভাতেও অভিনেত্রী জুন মালিয়ার উপরই ভরসা রাখলেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দোপাধ্যায়। মেদিনীপুর কেন্দ্র থেকে প্রার্থী হচ্ছেন জুন মালিয়া। রবিবার ব্রিগেড ময়দান থেকে তাঁর নাম ঘোষণা হতেই উচ্ছ্বাসে মাতলেন মেদিনীপুরের তৃণমূল নেতাকর্মীরা। আর প্রার্থী হওয়ার পর জুন মালিয়ার প্রতিক্রিয়া, “যুদ্ধ ঘোষণা হয়ে গিয়েছে। লড়াইয়ে নেমে গিয়েছি। এবার উন্নয়নই কথা বলবে।”
২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে মেদিনীপুর তৃণমূলের প্রার্থী হয়েছিলেন বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ মানস ভুঁইয়া। তিনি প্রায় একলাখ ভোটে হেরে গিয়েছিলেন বিজেপির দিলীপ ঘোষের কাছে। তার আগে তৃণমূলের সাংসদ ছিলেন অভিনেত্রী সন্ধ্যা রায়। সেই অঙ্কেই এবার ফের অভিনেত্রীকেই প্রার্থী করলেন দলনেত্রী। তবে এর আগে বিধানসভায় রাজনীতিবিদ হিসেবে হাতেখড়ি হয়ে গিয়েছিল জুন মালিয়ার। বর্তমানে তিনি এই মেদিনীপুর কেন্দ্র থেকেই তৃণমূলের বিধায়ক।
[আরও পড়ুন: লোকসভা নির্বাচনে ৪২ আসনে তৃণমূলের প্রার্থী কারা, দেখে নিন তালিকা]
প্রয়াত মৃগেন মাইতির ছেড়ে যাওয়া আসনে তিনি বিধায়ক হয়েছিলেন ২০২১ সালে। এলাকায় বেশ জনপ্রিয় জুন। বেশ সক্রিয়। দল ও সরকারের বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করে ইতিমধ্যে নিজেকে প্রমাণও করেছেন। তাঁকেই এবার আসরে নামিয়ে মেদিনীপুর আসনটি পুনরুদ্ধার করতে মরিয়া তৃণমূল নেতৃত্ব। এর পাশাপাশি বিজেপি এখনও এই আসনে তাঁদের প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেনি। হেভিওয়েট তারকা প্রার্থী দাঁড়িয়ে পড়ায় চিন্তায় পড়েছে বিজেপি নেতৃত্বও। আসনটি তারা এবার ধরে রাখতে সক্ষম হবে কি না সেটাই এখন সবথেকে বড় চ্যালেঞ্জ বিজেপির সামনে।
পটাশপুরের বিধায়ক উত্তম বারিক এবার দিল্লির লড়াইয়েরও সৈনিক। ‘অধিকারী গড়’ হিসাবে পরিচিত কাঁথির প্রার্থী তিনি। তাঁর প্রতিপক্ষ সৌমেন্দু অধিকারী। এই প্রথমবার ভোটে তৃণমূলের প্রার্থী হননি অধিকারী পরিবারের কেউ। দক্ষ সংগঠক হিসাবে পরিচিত উত্তম বারিক জিততে পারেন কি না, সেটাই দেখার।
মেদিনীপুরের মতো উত্তর ২৪ পরগনারও তিন বিধায়ক পার্থ ভৌমিক, হাজি নুরুল ইসলাম এবং বিশ্বজিৎ দাসের উপর আস্থা রেখেছে ঘাসফুল শিবির। বারাকপুরের প্রার্থী পার্থ ভৌমিক। তারকা সাংসদ নুসরত জাহানের পরিবর্তে ভূমিপুত্র হাজি নুরুল ইসলামকে লোকসভা নির্বাচনে বসিরহাট কেন্দ্র থেকে বেছে নিয়েছে তৃণমূল। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, তারকা সাংসদে ক্ষুব্ধ স্থানীয়রা। আবার সংখ্যালঘু ভোটও বসিরহাটে বড় ফ্যাক্টর। এই দুই কারণে দক্ষ সংগঠক হাজি নুরুল ইসলামেই ভরসা তৃণমূলের। বাগদার বিধায়ক ‘দলবদলু’ বিশ্বজিৎ দাস এবার লোকসভা ভোটে বনগাঁ থেকে টিকিট পেয়েছেন।
বাঁকুড়ায় বিজেপিতে গোষ্ঠীকোন্দল তীব্র। সেখানে গেরুয়া শিবিরের মুখ সুভাষ সরকার। ওই আসনটিকে পুনরুদ্ধারের দায়িত্ব পেয়েছেন বাঁকুড়ার তালড্যাংরার বিধায়ক অরূপ চক্রবর্তী। তিনি দক্ষ সংগঠক হিসাবেই পরিচিত।
বিজেপি ছেড়ে সদ্য তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন মুকুটমণি অধিকারী। তিনি রানাঘাট দক্ষিণের বিধায়ক। তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী বিজেপির জগন্নাথ সরকার। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছে জগন্নাথের তুলনায় গ্রহণযোগ্যতার নিরিখে অনেকটাই এগিয়ে মুকুটমণি। সে কারণেই সদ্য দলে যোগ দেওয়া মুকুটমণিতেই আস্থা ঘাসফুল শিবিরের।
একুশের বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপির টিকিটে রায়গঞ্জের বিধায়ক হয়েছিলেন কৃষ্ণ কল্যাণী। ওই বছরের শেষের দিকেই দল ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দেন। এর পর বিধানসভার পাবলিক অ্যাকাউন্টস কমিটির চেয়ারম্যান হন। ব্যবসা থেকে রাজনীতির জগতে আসা কৃষ্ণর দাবি ছিল, দিলীপ ঘোষের জন্যই তাঁকে গেরুয়া শিবির ছাড়তে হয়েছে। সেই কৃষ্ণ কল্যাণীকেই এবার রায়গঞ্জে প্রার্থী করল তৃণমূল।
তৃণমূলের পুরনো কর্মী হরিরামপুরের বিধায়ক বিপ্লব মিত্র। জেলা সভাপতির দায়িত্ব সামলেছেন দীর্ঘদিন। পরে বিজেপিতে যোগদান করেন। কিন্তু মাস কয়েকের মধ্যেই ফিরে আসেন পুরনো দলে। এবার তিনিই লোকসভার সৈনিক।
উত্তরবঙ্গের দুই বিধায়ক ধূপগুড়ির ‘মাস্টারমশাই’ নির্মলচন্দ্র রায় এবং কোচবিহারের সিতাইয়ের জগদীশচন্দ্র বসুনিয়াতেও এবার আস্থা রেখেছে তৃণমূল। জলপাইগুড়ি থেকে টিকিট পেয়েছেন নির্মলবাবু। জগদীশচন্দ্র বসুনিয়া কোচবিহারের প্রার্থী।
লোকসভা নির্বাচনে জিতলে বিধায়ক পদ ছাড়তে হবে। সেক্ষেত্রে ফের রাজ্যে হতে পারে উপনির্বাচন।