গৌতম ব্রহ্ম ও অর্ণব আইচ: শ্রাবণের শেষে স্ত্রীর জন্মদিন৷ শুক্রবার তাই জন্মদিন উপলক্ষে স্ত্রী সঙ্গীতা আর মেয়ে সানভিকে নিয়ে ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালে বেড়াতে গিয়েছিলেন দমদমের বাসিন্দা সুবীর পাল৷ সেইই শেষ যাওয়া৷ শুক্রবার বিকেলে আকাশ কালো করে তুমুল গর্জে বজ্রপাতে ভিক্টোরিয়া চত্বরেই প্রাণ হারিয়েছেন তিনি। আহত হয়ে স্ত্রী ও মেয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন৷ একই পরিস্থিতি বাঁশদ্রোণীর মণ্ডল পরিবারেও৷ সেখানে বৃষ্টির সময় বাড়ির বাগানে ছিলেন গৃহকর্ত্রী অপর্ণা৷ বজ্রপাত কেড়ে নিয়েছে তাঁর প্রাণ৷ শহর কলকাতায় দুই নাগরিকের এমন মর্মান্তিক মৃত্যুতে শোকের আবহ দুই পরিবারে৷
[আরও পড়ুন: জামিন অযোগ্য ধারায় মামলা, রূপা গঙ্গোপাধ্যায়ের ছেলেকে পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ আদালতের]
বর্ষার শেষ বেলায় অঝোর বর্ষণের স্বাদ পেয়েছে কলকাতা-সহ গোটা দক্ষিণবঙ্গ৷ কয়েকদিন ধরেই কখনও ঝিরঝিরে, তো কখনও ভারী বৃষ্টিতে ভিজেছে রাস্তাঘাট৷ তবে শুক্রবার বিকেলে যেন বরুণদেবের রোষ আছড়ে পড়ল কলকাতার বুকে৷ টানা দু-একঘণ্টার প্রবল বৃষ্টিতে পালটে গেল অনেক কিছু৷ হালকা বৃষ্টিভেজা ভিক্টোরিয়ার শোভা দেখতে গিয়ে জীবনেই ইতি পড়ল দমদমের সুবীর পালের৷ বেড়ানোর আনন্দে মশগুল ছোট্ট মেয়েটা হয়তো বুঝেই উঠতে পারল না যে সে বাবাকে হারাল চিরতরে৷ সুবীরবাবুর স্ত্রী সঙ্গীতাও বজ্রাঘাতে আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন৷ আঘাতের চেয়েও জন্মদিনে স্বামীকে হারানোর শোক যেন উপচে পড়ছে সঙ্গীতার৷
সুবীর পালের মৃত্যু যখন সন্ধে নামা ভিক্টোরিয়াকে বিষণ্ণ করে তুলেছে, তখনই শহরের আরেকপ্রান্তেও একই পরিবেশ৷ দক্ষিণ কলকাতার বাঁশদ্রোণীর শিবতলার বাসিন্দা অপর্ণা মণ্ডল৷ ঝড়বৃষ্টির মধ্যেই তিনি বাগানে গিয়েছিলেন৷ সেটাই কাল হল৷ আচমকা বাজ পড়ে জ্ঞান হারান অপর্ণা৷ বাড়ির লোকজন ছুটে গিয়ে তাঁকে উদ্ধার করে সঙ্গে সঙ্গে এমআর বাঙুর হাসপাতালে নিয়ে যান৷ চিকিৎসকরা অপর্ণাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন৷ তাঁর মৃতদেহ ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে বলে হাসপাতাল সূত্রে খবর৷
[আরও পড়ুন: দিদিকে বলেই মুশকিল আসান, চিকিৎসা পেলেন আশ্রয়হীন যুবক]
এমন নয় যে তুমুল বজ্রপাত-সহ বৃষ্টি এই প্রথমবার দেখছে কলকাতা৷ প্রায় ফি বছরই দিন কয়েকের এমন বৃষ্টিতে তিলোত্তমার জলমগ্ন দশা হয়৷ বজ্রপাতে মৃত্যুর ঘটনাও একেবারেই নতুন নয়৷ এবারও শুধুমাত্র বজ্রপাতে জখম হয়েছেন ১৭ জন৷ এদের মধ্যে ৬ জন আবার বাংলাদেশি, যাঁরা বিভিন্ন কাজে কলকাতায় এসেছিলেন৷ তাঁরা সকলেই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন৷ কিন্তু একইদিনে দু’জনের মৃত্যুতে উসকে উঠছে আরও অনেক আশঙ্কা৷ তাহলে কি শহরে বজ্রনিরোধক ব্যবস্থা ক্রমশই দুর্বল হচ্ছে? শহরের শোভা বৃদ্ধিতে বড় গাছ কেটে এধরনের দুর্ঘটনাকে স্বাগতই জানানো হচ্ছে? বারবার পরিবেশবিদদের সতর্কবার্তা সত্বেও কেন সচেতনতা জাগছে না? প্রশ্নগুলো উসকে দিচ্ছেন সুবীর পাল, অপর্ণা মণ্ডলরা৷
The post স্ত্রী’র জন্মদিনে বেড়াতে গিয়ে গৃহকর্তার মৃত্যু, বিপর্যস্ত বজ্রপাতে নিহত ব্যক্তির পরিবার appeared first on Sangbad Pratidin.