স্টাফ রিপোর্টার: একটি সম্পত্তির যিনি ক্রেতা। অন্য সম্পত্তির বিক্রেতা তিনিই। অয়ন শীলের কাছ থেকে পাওয়া নথি দেখে উঠে এসেছে এমনই বহু রহস্যময় তথ্য। একই সঙ্গে ওই নথি সামনে রেখে নিয়োগ দুর্নীতিতে ধৃত অয়ন শীলকে জেরা করে তাঁর বেশ কিছু ‘খাস এজেন্ট’-এর ব্যাপারে নিশ্চিত হয়েছে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট। তাঁদের মধ্যে অনেকেই অয়ন শীলের কর্মচারী।
রবিবার অয়নের দুই ঘনিষ্ঠ কর্মচারীকে তলব করে জেরা করে ইডি। অয়নের নির্দেশে চাকরিপ্রার্থীদের কাছ থেকে টাকা তোলার পদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য পেতে তাঁদের অয়ন শীলের মুখোমুখি বসিয়ে জেরা করা হয়। যে সম্পত্তিগুলির হদিশ মিলেছে, তার বাইরেও অয়ন শীল ও তাঁর পরিবারের কত সম্পত্তি রয়েছে, তা কর্মচারীদের কাছ থেকে জানার চেষ্টা করা হয়। এ ছাড়াও এজেন্ট হিসাবে ওই কর্মচারীরা কাজ করতেন কি না ও তাঁরা চাকরিপ্রার্থীদের কাছ থেকে কত টাকা নিয়েছেন, তা জানতেও দু’জনকে রাত পর্যন্ত জেরা করেন ইডি আধিকারিকরা।
[আরও পড়ুন: পঞ্চায়েত ভোটে বাম-কংগ্রেসকে সমর্থন! অঘোষিত ‘জোট’বার্তা বিজেপির সংখ্যালঘু মোর্চার]
এদিকে, নিয়োগ দুর্নীতির অভিযোগে হুগলির শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায় ও কুন্তল ঘোষের বেশ কিছু মুছে ফেলা হোয়াটসঅ্যাপ চ্যাটও সামনে এসেছে ইডির গোয়েন্দাদের। ওই চ্যাটগুলিতে এক বিশেষ ব্যক্তিকে ‘স্যর’ বলে সম্বোধনও করা হয়। সেই ব্যক্তিটি কে, সেই সম্পর্কে জানতে জেলে গিয়ে শান্তনুকে ইডি জেরা করতে পারে।
ইডি জানিয়েছে, তদন্তে অয়ন শীলের কয়েকজন এজেন্টের নাম উঠে এসেছে, যাঁদের তিনি বিভিন্ন জায়গায় কানুদা, তপনদা, লাল, এমডি বলে উল্লেখ করেছেন। তাঁরা প্রত্যেকেই যে ১৩ থেকে ৯৬ জন পর্যন্ত চাকরিপ্রার্থীর কাছ থেকে টাকা তুলেছেন, তার প্রমাণও পেয়েছে ইডি। এ ছাড়াও তদন্তে আরও কয়েকজনের নাম উঠে এসেছে। বিশেষ করে হুগলির একাধিক জায়গা, দক্ষিণ ২৪ পরগনার ভাঙড়ে বেশ কয়েকটি জমি ও সম্পত্তির নথি দেখে ইডির গোয়েন্দারা নিশ্চিত যে, বিভিন্ন ব্যক্তি ও মহিলার নামে কেনা হয়েছিল সেগুলি। অয়ন শীলের স্ত্রী কাকলি, ছেলে অভিষেক ও ছেলের বান্ধবী ইমন গঙ্গোপাধ্যায়ের নামে বেশ কিছু সম্পত্তি রয়েছে। কিন্তু এ ছাড়াও ইডির হাতে যে তথ্য এসেছে, তার মাধ্যমে জানা গিয়েছে যে, রীতেশ নামে একজন কলকাতা লেদার কমপ্লেক্স এলাকায় ৫ লাখ ৭১ হাজার টাকা দিয়ে একটি জমি কিনেছেন তপন নামে এক ব্যক্তির কাছ থেকে। আবার তপনের কাছ থেকে ৪ লাখ ২০ হাজার টাকা দিয়ে একটি সম্পত্তি কিনেছেন মহেন্দ্র ও রাজেশ নামে দু’জন। হীরালাল নামে এক ব্যক্তির কাছ থেকে ভাঙড়ে ২ লাখ ৯৬ হাজার টাকা দিয়ে জমি কিনেছিলেন লীলা নামে এক মহিলা। আবার হীরালালের কাছ থেকেই ৩ লাখ ৪৬ হাজার ৫০০ টাকা দিয়ে ভাঙড়ে একটি জমি কেনেন।
[আরও পড়ুন: মেজিয়ায় তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের দূষণে নষ্ট কৃষিজমি, মমতার নির্দেশে ৮ কোটি ক্ষতিপূরণ চাষিদের]
আবার অন্য নথি ঘেঁটে গোয়েন্দারা জানতে পেরেছেন যে, দশ লাখ টাকা দিয়ে দুই ‘ক্রেতা’ লীলা ও বিজয়কুমারের সম্পত্তি বিক্রি করেছেন অয়ন শীলকে। অন্য দুই ‘ক্রেতা’ মহেন্দ্র ও রাজেশ আবার একটি জমি বিক্রি করেছেন অয়ন শীলের ঘনিষ্ঠ বান্ধবী শ্বেতা চক্রবর্তীকে, এমন তথ্যও ইডির গোয়েন্দারা জানতে পেরেছেন। গোয়েন্দাদের সন্দেহ, যে ক্রেতা ও বিক্রেতাদের নাম উঠে এসেছে, তাঁরা প্রতে্যকেই অয়ন শীলের সাজানো। এই ব্যাপারে অয়ন শীলকে জেরা করেও দেখা গিয়েছে যে, তাঁর বক্তবে্য অসঙ্গতি রয়েছে। তাই তাঁর কর্মচারীদের জেরা করে এই ব্যাপারে আরও তথ্য পাওয়ার চেষ্টা হচ্ছে বলে জানিয়েছে ইডি।