বাবুল হক, মালদহ: বোনের শ্রাদ্ধানুষ্ঠানের দিনই বাইকের ধাক্কায় প্রাণ হারালেন দাদা! যদিও এই ঘটনাটিকে কোনও মতেই দুর্ঘটনা মানতে নারাজ মৃতের পরিবার। পরিকল্পিত ভাবে খুন করা হয়েছে বলে অভিযোগ তুলে পুলিশের দ্বারস্থ হয়েছেন পরিজনরা। পুলিশ ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে। এই রহস্যজনক মৃত্যুর ঘটনাটি ঘটেছে মালদহের হরিশচন্দ্রপুর থানার মহেন্দ্রপুর গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায়।
হরিশ্চন্দ্রপুর থেকে ভালুকাগামী রাজ্য সড়কে মহেন্দ্রপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে সোমবার রাত ন’টা নাগাদ দুর্ঘটনা ঘটে। মোটরবাইকের ধাক্কায় মৃত্যু হয় এক যুবকের। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, মৃত যুবকের নাম আশুতোষ দাস (৪৭)। বাড়ি মহেন্দ্রপুর গ্রামেই। বাইক চালকের নাম সামিম আক্তার (১৮)। তাঁর বাড়ি হরিশ্চন্দ্রপুর থানার সিমলা গ্রামে। রাতেই হরিশ্চন্দ্রপুর থানার পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে বাইক চালককে আটক করে। ঘাতক বাইকটি বাজেয়াপ্ত করা হয়। পুলিশ জানতে পেরেছে, ঘাতক বাইকটির মালিক আনজার আলি। আনজারও মৃত যুবকের গ্রাম মহেন্দ্রপুরের বাসিন্দা। মৃতের পরিবারের অভিযোগ, মহেন্দ্রপুর গ্রামের বাসিন্দা আনজার আলি পরিকল্পিতভাবে ভাড়াটে ওই যুবককে নিজের বাইক দিয়ে আশুতোষকে খুন করিয়েছে। অভিযুক্ত যুবক-সহ এই ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের কঠোর শাস্তির দাবি তুলেছেন মৃতের পরিবারের সদস্যরা। তাঁর বিরুদ্ধে খুন করানোর মতো গুরুতর অভিযোগ ওঠায় বাইকের মালিক আনজার আলির দাবি, তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ একেবারে ভিত্তিহীন। আশুতোষের সঙ্গে তাঁর কোনও রকম শত্রুতা ছিল না। কারও উস্কানিতে এই ধরনের অভিযোগ তোলা হয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে।
[আরও পড়ুন: সড়কপথে বাধার আশঙ্কা করে লোকাল ট্রেনে রিষড়ায় লকেট, স্টেশনে নামতেই আটকাল পুলিশ]
আনজারের দাবি, সোমবার রাতে রাতে তাঁর ছেলে লিটন আলি বাইক নিয়ে গ্রামে চায়ের দোকানে চা খেতে যায়। সেই সময় সিমলা গ্রামের বাসিন্দা তার এক বন্ধু লিটনের কাছ থেকে বাইকের চাবিটি জোর করে কেড়ে নিয়ে যায়। চাবি নিয়ে বাইক চালিয়ে যাওয়ার মিনিট পাঁচেক পরেই তাঁরা এই দুর্ঘটনার খবর শুনতে পান। আনজার বলেন, “এটা নিছকই একটি দুর্ঘটনা। কোনও পরিকল্পিত খুন নয়।” মৃত আশুতোষের পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, সপ্তাহ দু’য়েক আগে আশুতোষের এক বোন মারা গিয়েছেন। এদিন রাতে বোনের শ্রাদ্ধানুষ্ঠান থেকে রাস্তার একপাশ দিয়ে পায়ে হেঁটে বাড়ি ফিরছিলেন আশুতোষ। সেই সময় বেপরোয়া গতিতে আসা বাইকের ধাক্কায় অন্তত ১০ হাত দূরে ছিটকে পড়েন তিনি। স্থানীয়রা ছুটে এসে রক্তাক্ত অবস্থায় রাজুকে হরিশ্চন্দ্রপুর গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে যান। অবস্থা আশঙ্কাজনক দেখে চিকিৎসকরা তাঁকে মালদহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করতে পরামর্শ দেন। মালদহ মেডিক্যাল কলেজের উদ্দেশে নিয়ে যাওয়ার পথেই মৃত্যু হয় আশুতোষের। মৃতের চার মেয়ে ও এক ছেলে রয়েছে। ছেলে ভিন রাজ্যে পরিযায়ী শ্রমিকের কাজ করেন। হরিশ্চন্দ্রপুর থানার পুলিশ জানিয়েছে, মৃত দেহটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে। মৃতের পরিবারের পক্ষ থেকে তোলা অভিযোগটিও পুলিশ গুরুত্বসহকারে খতিয়ে দেখছে। স্রেফ দুর্ঘটনা, না কি পরিকল্পিতভাবে দুর্ঘটনা ঘটিয়ে খুন, তা নিয়ে এখনই কিছু বলা যাবে না। পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে।