নিরুফা খাতুন: জিওগ্রাফিক্যাল ইন্ডিকেশন (GI) তকমা পাওয়ার পর সুন্দরবনের মধুর কদর যেন আরও বেড়ে গিয়েছে। দেশের সীমানা ছাড়িয়ে পশ্চিমবঙ্গের ম্যানগ্রোভ জঙ্গলের এই তরল সম্পদের কদর আন্তর্জাতিক স্তরেও বাড়ছে। সুইজারল্যান্ডের জেনিভায় রাষ্ট্রসংঘের ওয়ার্ল্ড ইন্টেলেকচুয়াল প্রপার্টি অর্গানাইজেশন (ডব্লুআইপিও) আয়োজিত জেনেটিক সম্পদ ও ঐতিহ্যগত জ্ঞানের ওপর সম্মেলনে এবার জায়গা পেয়েছে সুন্দরবনের মধু (Sundarban Honey)।
সোমবার থেকে শুরু হয়েছে এই সম্মেলন। বিশ্বের প্রায় ১২০০ প্রতিনিধি এই সম্মেলনে যোগ দিয়েছেন। শুক্রবার পর্যন্ত এই সম্মেলন চলবে। কূটনৈতিক এই সম্মেলনে জেনেটিক সম্পদগুলিকে সুরক্ষিত রাখা, কীভাবে এগুলি ব্যবহার করা যেতে পারে, আন্তর্জাতিক বাজারে তার মান উন্নয়ন করা এসব নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা চলবে। সেজন্য বিভিন্ন দেশের জেনেটিক সম্পদগুলির একটি করে স্যাম্পেল এই সম্মেলনে রাখা হয়েছে। সেখানে এ রাজ্য থেকে একমাত্র স্থান পেয়েছে সুন্দরবনের মধু।
[আরও পড়ুন: পাইকারি মূল্যবৃদ্ধি ১৩ মাসে সর্বোচ্চ, ভারতের জিডিপি বৃদ্ধির পূর্বাভাষ আইএমএফ-এর]
সম্মেলনের জন্য রাজ্য বনদপ্তরের পক্ষ থেকে জেনিভায় মধু পাঠানো হয়েছে। ওয়েস্ট বেঙ্গল ফরেস্ট ডেভলপমেন্ট কর্পোরেশনের ম্যানেজিং ডিরেক্টর ভি কে সুদ বলেন, ‘‘ডব্লুআইপিও জেনেটিক সম্পদ ও ঐতিহ্যগত জ্ঞানের উপর জেনিভায় যে সম্মেলন চলছে, সেখানে রাজ্যের মধ্যে সুন্দরবনের মধুকে বেছে নেওয়া হয়েছে। জিআই পাওয়ার পর এই প্রথম সুন্দরবনের মধু বিদেশের কোনও সম্মেলনে রাখা হল। যা আন্তর্জাতিক বাজারে মধুর মার্কেটিংয়ে একটা বড় সুযোগ এনে দিল।’’
বাঘের ডেরায় ঢুকে প্রাণ হাতে নিয়ে মধু সংগ্রহ করতে হয় মৌলিদের। সুন্দরবনের মানুষের জীবিকা নির্ভর করে এই মধুসংগ্রহের ওপর। রাজ্য বনমন্ত্রী বিরবাহা হাঁসদা বলেন, ‘‘জিআই ট্যাগ পাওয়ার পর মধু রপ্তানির উপর জোর দেওয়া হচ্ছে। এখন অনলাইনে মধু পাওয়া যাচ্ছে। পাশাপাশি বিদেশের বাজার ধরতে প্যাকেজিং ও মার্কেটিংয়ের উপর জোর দেওয়া হচ্ছে। আন্তর্জাতিক মার্কেট সার্ভে করতে দপ্তরের আধিকারিকদের বিদেশ পাঠানোরও পরিকল্পনা রয়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারে মধু রপ্তানি বাড়লে মৌলি ও সুন্দরবনের মানুষ উপকৃত হবে।
গত বছর G20 বৈঠকে যোগদান করতে কলকাতায় এসেছিলেন G20 গোষ্ঠীভুক্ত দেশের প্রতিনিধিরা। অতিথি আপ্যায়ন তখন তাঁদের হাতে সুন্দরবনের মধুও তুলে দেওয়া হয়েছিল। তার এক বছর পর জিআই তকমা পায় সুন্দরবনের মধু। জিআই তকমা পাওয়ার পর জেনিভায় ডব্লুআইপিও-র সম্মলনে এই মধু জায়গা করে নেওয়ায় আন্তর্জাতিক বাজারে দরজা খুলে যাবে বলে বলে আশা করছে বনদপ্তর।