দীপালি সেন: বিমানবন্দরের মধ্যেই মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় (Airport Accident) মৃত্যু হয়েছে সহকর্মীর। শুক্রবারের সেই ঘটনার পর শনিবার সকাল থেকেই এয়ারপোর্ট ১ নম্বর গেটের কাছে এয়ার ইন্ডিয়ার (Air India) অফিসের সামনে অবস্থান-বিক্ষোভে সামিল হন এয়ার ইন্ডিয়া এয়ারপোর্ট সার্ভিস লিমিটেডের (এআইএএসএল) প্রায় দু’শো চুক্তিভিত্তিক কর্মচারী। তাঁদের দাবি, সহকর্মীর মরদেহ তাঁর বাড়িতে পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে এবং তাঁর পরিবারের একজনকে চাকরি দিতে হবে বিমান সংস্থাকে। এদিনের বিক্ষোভ কর্মসূচি থেকে নিজেদের বঞ্চনার কথাও তুলে ধরেন তাঁরা।
এদিন বিক্ষোভের খবর পেয়েই তাঁদের পাশে দাঁড়ান কলকাতা বিমানবন্দরের কন্ট্রাক্টর্স ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের সভাপতি তথা দমদমের সাংসদ সৌগত রায়। ছিলেন দমদম পুরসভার প্রশাসক মণ্ডলির সদস্য তথা ইউনিয়নের কার্যকরী সভাপতি বরুণ নট্ট এবং দমদম পুরসভার প্রশাসক মণ্ডলির চেয়ারম্যান হরিন্দর সিং। শনিবার সকাল ১১টা থেকে প্রায় দুপুর দু’টো পর্যন্ত কাজ বন্ধ করে বিক্ষোভ দেখান কর্মচারীরা। অভিযোগ, ভিআইপি থেকে সাধারণ যাত্রী পরিষেবার দায়িত্ব সামলান গ্রাউন্ড স্টাফরা। ঘণ্টার পর ঘণ্টা পরিশ্রম করানো হলেও, ন্যূনতম সুযোগ সুবিধাটুকুও তাঁদের দেওয়া হয় না। স্বাস্থ্যবীমা, ইএসআই, প্রভিডেন্ট ফান্ড – মেলে না কিছুই।
[আরও পড়ুন: COVID-19 Restriction: কড়া বিধিনিষেধের মেয়াদ বাড়ল রাজ্যে, শর্তসাপেক্ষে ছাড় মেলা ও বিয়ের অনুষ্ঠানে]
এক কর্মী বলেন, “স্থায়ী কর্মী মাত্র ১৯ জন এবং চুক্তিভিত্তিক কর্মী প্রায় ১৬০০ জন। কিন্তু, অ্যাম্বুল্যান্স, স্বাস্থ্যবীমা, কোভিড টিকা (Covid Vaccine) সবই শুধুমাত্র স্থায়ী কর্মচারীদের জন্য। ৩০-৩৫ বছরের পুরোনো বাতিল গাড়ি আমাদের চালাতে দেওয়া হয়। আজ পর্যন্ত পোশাক, জুতো কিছুই দেওয়া হয়নি। দৈনিক ৬০০-৭০০ টাকার মজুরিতে কাজ করতে হয়। একটা ট্রলি ভাঙলে তার পয়সা আমাদের থেকে নিয়ে নেওয়া হয়। আমাদের নো ইনক্রিমেন্ট, নো প্রমোশন, নো মেডিক্লেম, নো ভ্যাকসিন। সবসময় শুধু চাপে রাখে।”
সৌগত রায় বলেন, “সব জায়গায়, আমাদের বিমানবন্দরেও যাঁরা চুক্তিভিত্তিক কাজ করেন তাঁদের নানারকম বঞ্চনার শিকার হতে হয়। এই যে ওঁরা বলছেন, স্বাস্থ্যবীমা নেই। একটা দুর্ঘটনার কবলে পড়লে কেমন করে ওঁরা ক্ষতিপূরণ পাবেন তার ঠিক নেই। কন্ট্রাক্টররা সব সময় কম পয়সা দিয়ে বেশি খাটিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে।”
গত শুক্রবার বিকেলে কলকাতা বিমানবন্দরে ট্রাক্টর উল্টে মৃত্যু হয় ৩২ বছরের সঞ্জিত রায়ের। তিনি এআইএএসএল-এর ইউটিলিটি এজেন্ট ব়্যাম্প ড্রাইভার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। সেই ঘটনায় প্রতিটি পদক্ষেপেই বিমান সংস্থার বিরুদ্ধে নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ তুলেছেন সহকর্মীরা। তাঁদের অভিযোগ, দুর্ঘটনার পর রক্তাক্ত সঞ্জিতকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার জন্য অ্যাম্বুল্যান্সের ব্যবস্থাটুকুও করেনি এয়ার ইন্ডিয়া কর্তৃপক্ষ। বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের অ্যাম্বুল্যান্সে তাঁকে হাসপাতাল নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। এমনকী, হাসপাতাল থেকে মৃত ঘোষণার পর মরদেহ ফিরিয়ে আনা হলে তা অ্যাম্বুল্যান্সেই প্রায় দু’ঘণ্টা পরে ছিল বলে অভিযোগ। মরদেহ বাড়িতে পাঠানোর ব্যবস্থা পর্যন্ত করেনি বিমান সংস্থা। কর্মীদের উদ্যোগে এনএসসিবিআই থানার সহযোগিতায় দু’ঘণ্টা পর দেহ পাঠানো হয় আরজি কর হাসপাতালে।