রাজ কুমার, আলিপুরদুয়ার: শুক্রবার রাতেই প্রসব বেদনা ওঠে। মালঙ্গি চা বাগানের স্নেহা কান্দুলনা তখনও ভাবতে পারেনি শনিবারের মাধ্যমিকের ভুগোল পরীক্ষা দিতে পারবে কিনা। এদিন সকালেই একটি ফুটফুটে ছেলের জন্ম দিয়েছে স্নেহা। আর তার পরেও দাঁতে দাত চেপে জেদ নিয়ে বসেছে মাধ্যমিক পরীক্ষায়।
কালচিনির লতাবাড়ি ব্লক হাসপাতালের বেডে একেবারে ছেলে কোলে নিয়ে পরীক্ষা দিয়েছে স্নেহা। স্নেহার এই সাহসিকতাকে কুর্নিশ জানাচ্ছেন সকলে। আবার অনেকে বলছেন চা বাগানের মেয়েরা লড়াই করতে জানে। সেই কারণেই স্নেহা এক অন্য লড়াইয়ের ইতিহাস তৈরি করল। জানা গিয়েছে, কালচিনি ব্লকের মালঙ্গি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার বাসিন্দা স্নেহা কান্দুলনা হাসিমারা হিন্দি হাইস্কুলের দশম শ্রেণির পড়ুয়া। এই বছর তাঁর মাধ্যমিক পরীক্ষা পড়েছে কালচিনির হাসিমারা হাই স্কুলে।
[আরও পড়ুন: জঞ্জালে ব্যাগ দেখে কুড়োতে গিয়েই বিপত্তি, জোরাল বিস্ফোরণে উড়ে গেল ছাত্রের হাতের আঙুল]
দশ মাসের অন্তঃসত্ত্বা স্নেহা ঠিক করে জীবনের বড় পরীক্ষা দেবে সে। শুরু করে দেয় পরীক্ষার প্রস্তুতি। প্রথম দু’টো পরীক্ষাও ভালভাবে দিয়েছে স্নেহা। কিন্তু শুক্রবার রাতেই আচমকা প্রসবকালীন ব্যথা অনুভব করে। সঙ্গে সঙ্গে ব্লক প্রশাসনকে জানালে স্নেহাকে লতাবাড়ি ব্লক হাসপাতালে রাতেই ভরতি করা হয়। শনিবার সকালে হাসপাতালেই পুত্র সন্তানের জন্ম দেয় স্নেহা। কিন্তু তার কিছুক্ষণ পরে ওই একই বেডে বসেই এদিনের ভুগোল পরীক্ষা দিয়েছে সে।
স্নেহার যেন কোনও অসুবিধে না হয় তা দেখতে এদিন হাসপাতালে যান কালচিনির বিডিও প্রশান্ত বর্মন। বিডিও বলেন, “ স্নেহার জেদ ও মনোবল আমাদের উৎসাহ দেয়। ওকে আমরাই হাসপাতালে ভরতি করি। দু’দিন পর চিকিৎসকরা ওকে ছুটি দেবে বলেছেন। এর পরের পরীক্ষাগুলোতে ওকে বাড়ি থেকে নিয়ে যাওয়া ও নিয়ে আসার সব ব্যবস্থা করব আমরা ব্লক প্রশাসন। “
কালচিনিতে এখন লড়াইয়ের অন্য এক নাম স্নেহা। পুত্র সন্তান জন্ম হওয়ায় খুশি স্নেহা। তিনি বলেন, “ ছেলে হয়েছে। খুব ভাল হয়েছে। কিন্তু তা বলে নিজের জীবনের প্রথম বড় পরীক্ষা দেব না তা হয় না। তাই সিদ্ধান্ত নিয়েছি পরীক্ষা দেব এবং ভালভাবে উত্তীর্ণ করবো। সকলেই আমার পাশে আছেন। সকলকে আমি ধন্যবাদ জানাচ্ছি। ব্লক প্রশাসনকেও ধন্যবাদ জানাচ্ছি।” স্নেহার খোঁজ রাখছেন আলিপুরদুয়ারের জেলা শাসক সুরেন্দ্রকুমার মিনাও। স্নেহাকে প্রশাসনের পক্ষ থেকে সবরকম সহযোগিতা করা হবে বলে জানিয়েছেন জেলাশাসক।