তিনিই প্রথম কাশ্মীরি আইএএস। ইন্ডিয়ান সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় প্রথমবার বসেই উত্তীর্ণ। সেটা ২০০৯। আগের বছর ঝিলাম ভ্যালি মেডিক্যাল কলেজ থেকে এমবিবিএস। মা, ঠাকুমা ও জঙ্গিদের হাতে নিহত বাবা-পরিবারের সবাই শিক্ষক। কাশ্মীরিদের উপর প্রশাসনের বঞ্চনা ও ‘গণহত্যা’-র প্রতিবাদে জানুয়ারিতে কেন্দ্রীয় সরকারের চাকরি ছেড়ে গড়ে তোলেন জম্মু অ্যান্ড কাশ্মীর পিপলস মুভমেন্ট। এহেন ডা. শাহ ফয়জল এবার মুখোমুখি বসলেন সংবাদ প্রতিদিনের প্রতিনিধি সোম রায়ের।
নতুন জীবন কীভাবে কাটছে?
শাহ ফয়জল: সারাদিন একের পর এক মিটিং। বিভিন্ন প্রান্তে জনসংযোগ। কীভাবে কী করব, কূলকিনারা করতে পারছি না।
হঠাৎ করে এই সিদ্ধান্ত কেন?
শাহ ফয়জল: সত্তর বছরে বিভিন্ন বঞ্চনা ও প্রতারিত হয়ে এখানকার বেশিরভাগ শিক্ষিত মানুষ মেনস্ট্রিম পলিটিক্সে আর ভরসা রাখছে না। গণতন্ত্রে আস্থা হারিয়ে তারা অন্য উপায় অবলম্বন করছে। অথচ মেনস্ট্রিম পলিটিক্স খুব জরুরি। আমি মনে করি রাজনীতিতে শিক্ষিত লোকের আসা প্রয়োজন। তাই নিজেকে দিয়েই শুরু করলাম।
ব্যক্তিগত কোনও সমস্যার সামনে কি পড়তে হয়েছিল?
শাহ ফয়জল: না না। ভালই তো সুখের জীবন কাটাচ্ছিলাম। সমাজের কথা ভেবেই এই সিদ্ধান্ত।
আমলাতান্ত্রিক দেশে আপনার মতো মানুষের তো প্রয়োজন ছিলই।
শাহ ফয়জল: দশ বছর সার্ভিস করেছি। সেই কাজই আরও বড় প্ল্যাটফর্মে করতে রাজনীতিতে এলাম। আমলারা যতই যা করুক, ভারতে রাজনৈতিক নেতারাই হল আসল পলিসি মেকার। আমাদের তো উচিত ভবিষ্যৎ প্রজন্মের শিক্ষিতদের রাজনীতিতে আসতে উৎসাহ দেওয়া।
নির্বাচনে লড়ার কথা বলেও শেষ মুহূর্তে সরে এলেন কেন?
শাহ ফয়জল: হাতে সময় খুব কম ছিল। ফেব্রুয়ারিতে দলগঠন করেছি। তার পরপরই নির্বাচন ঘোষণা হয়ে গেল। প্রস্তুতির সময়টাই পাইনি।
কিন্তু আপনি কাশ্মীরিদের যে সমস্যাগুলির কথা বলেন, তা গোটা দেশের সামনে তুলে ধরতে সংসদই তো সব থেকে বড় মঞ্চ।
শাহ ফয়জল: কোনওরকম তাড়াহুড়ো করতে চাইনি। প্রক্রিয়াটা অনেক বড়। তাই আগে সবার সঙ্গে কথা বলতে, মিশতে চেয়েছিলাম।
৩৭০, ৩৫এ নিয়ে আপনার কী বক্তব্য?
শাহ ফয়জল: দিল্লি ও শ্রীনগরের সম্পর্ক ধরে রাখতে ৩৭০ একটা ব্রিজ। এই সেতু পুড়িয়ে দিলে সব শেষ হয়ে যাবে। সংবিধান থেকে এই ধারাগুলো সরানোর প্রশ্নই নেই।
এই ধারা নাকি নিয়ম মেনে সংবিধানে ঢোকানো হয়নি?
শাহ ফয়জল: অনেককেই এখন এনিয়ে অনেক কথা বলছেন শুনছি। আসলে, রাজনৈতিক নেতারা তাঁদের সুবিধামতো সংবিধানের বিভিন্ন ধারার ব্যাখ্যা দিচ্ছেন। একটা বিভ্রান্তি তৈরি করতে পারলে কায়েমি স্বার্থের সুবিধা হয়। তাতে যে সংবিধানের মর্যাদা ক্ষুণ্ণ হয়, তা ভাবেন না। আমাদের সংবিধান দেশের জাতি-ধর্ম-বর্ণ- সব মানুষকে সমান অধিকার দিয়েছে। সর্বস্তরের মানুষের মৌলিক অধিকারকে স্বীকৃতি দিয়েছে। বিজেপি এনআরসি-র কথা বলছে। যার মাধ্যমে বিশেষ সম্প্রদায়ের মানুষকে দেশ থেকে বার করে দেওয়া হবে। বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্রের দেশ ভারত। যার অন্যতম প্রধান ভিত, সার্বভৌমত্ব। সেই দেশের শাসকদলের নেতাদের মুখে এই বক্তব্য, লজ্জার।
এবারের নির্বাচনে যারা লড়ছে তাদের মধ্যে কে বা কারা কাশ্মীর সমস্যার সমাধান করতে পারে বলে মনে হয়?
শাহ ফয়জল: কেউ না। এতদিন যাঁরা ছিলেন, তাঁদের মধ্যেই কেউ তো আসবেন। পার্লামেন্টে বা অন্যত্র এতদিন তাঁদের ভূমিকা কী ছিল? যতদিন না নতুন কেউ আসবে, ততদিন এর সমাধান হবে না।
ভরা ভোটের মরশুমে কী করছেন?
শাহ ফয়জল: আমরা তৃণমূল স্তরে মানুষের কাছে যাচ্ছি। তাঁদের সঙ্গে কথা বলে জনসংযোগ তৈরি করে নিজেদের সংগঠন তৈরি করছি।
দু’দফায় কাশ্মীর এসে যা বুঝলাম, নেতারা সাধারণ মানুষের কাছে যান না। একতরফা সিদ্ধান্ত নেন।
শাহ ফয়জল: একদম খাঁটি কথা। আমাদের নেতারা লোকের কাছে যান না। সাধারণের সমস্যা নিয়ে মাথাই ঘামান না। শুধু নিজেদেরটা হলেই ওঁরা খুশি। আমরা এই সিস্টেমেরই পরিবর্তন আনতে চাই।
এই ভোটে পুলওয়ামা একটা বড় ইস্যু। কিন্তু সেখানকার বেশিরভাগ মানুষ তো জানেই না নির্বাচন কবে!
শাহ ফয়জল: ওরা জানতেও চায় না। বীতশ্রদ্ধ হয়ে গিয়ে কাশ্মীরের দক্ষিণ অংশের এলাকার লোকদের নির্বাচনে বিশ্বাসই নেই। ফলে মিলিট্যান্সি বাড়ছে। ওখানে নির্বাচন করানোটাই সমস্যার। আমরা এখন থেকেই এই চেষ্টা চালাচ্ছি।
বিজেপি হারলে হয়তো উগ্র হিন্দুত্ববাদ মিটবে। কিন্তু পাক মদতপুষ্ট জঙ্গির সমস্যা?
শাহ ফয়জল: বিজেপি আর পাকিস্তানের মাঝে জম্মু-কাশ্মীর পিষছে। দু’ তরফেই সমস্যা। তারা না পাকিস্তানের মোকাবিলা করতে পারে, না বিজেপির। দু’দিক থেকে দুটো গোষ্ঠী জীবন হারাম করে তুলেছে।
আপনাদের পার্টির টার্গেট কী? আজাদ কাশ্মীর? না ভারতের সঙ্গে থেকে ‘আচ্ছা’ কাশ্মীর?
শাহ ফয়জল: শুধু কাশ্মীর নয়, লে এবং জম্মুর সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার উন্নতিই আমাদের লক্ষ্য।
ইমরান খানের মোদি স্তুতি নিয়ে আপনার বক্তব্য?
শাহ ফয়জল: প্রথমে মনে হল বিজেপির স্টার ক্যাম্পেনার হয়ে গিয়েছেন ইমরান খান। এটা একটু উলটি ইয়র্কার হয়ে গিয়েছে। এখনও চালটা বুঝতে পারিনি। রাশিয়া যেমন আমেরিকার নির্বাচনে হস্তক্ষেপ করে, এটাও কি তেমন কিছুই?
সমঝোতার কথা উঠলেই পাকিস্তান হুরিয়তকে মাঝে রাখতে চায়। আপনি কীভাবে এটা দেখেন?
শাহ ফয়জল: হুরিয়তও তো একটা দল। ওদের একটা প্রভাব আছে এখানে। গণতন্ত্রে সর্বদল বৈঠক তো হয়। আমরাও বিশ্বাস করি যে, ওদের সঙ্গে আলোচনা করা উচিত।
আপনার এই মুভমেন্টে রাজ্যের বাইরের কোনও নেতার সাহায্য নেওয়ার পরিকল্পনা আছে?
শাহ ফয়জল: নিশ্চয়ই। প্রথমেই আপনাদের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথা বলব। উনি যেভাবে সিবিআইকে আটকেছেন সেটা আমাকে ইনস্পায়ার করেছে। রাজ্যের ক্ষমতা দেখিয়েছেন। আমি চাইব দিদি এখানে এসে আমাদের সাহায্য করুন।