সুকুমার সরকার, ঢাকা: এবারের দুর্গাপুজোয় (Durga Puja) বঙ্গে যে প্রচুর পদ্মার ইলিশ আমদানি হবে, সেই সুখবর মিলেছিল আগেই। এবার কলকাতা (Kolkata) ফিশ ইম্পোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের আহ্বানকে মান্যতা দিল বাংলাদেশ। সে দেশ থেকে ৫ হাজার টন ইলিশ (Hilsa) রপ্তানি করা হবে। বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বৃহস্পতিবার ঢাকার সচিবালয়ে মন্ত্রকের সভাকক্ষে ‘নিত্যপ্রয়োজনীয় কৃষিপণ্যের উৎপাদন, চাহিদা ও মূল্য পরিস্থিতি’ পর্যালোচনা সভা শেষে সাংবাদিক বৈঠকে এই তথ্য জানান। মন্ত্রী বলেন, ‘‘পাঁচ হাজার টন ইলিশ রপ্তানি আমাদের লক্ষ্য। গত বছর এই পরিমাণ দিয়েছি। আগের বছরও পাঁচ হাজার কিংবা তিন হাজার টন দিয়েছিলাম। তিন হাজার টন দিয়ে যদি পারি, তাহলে এর বেশি আমরা দেব না।’’ বাজারে এর কোনও প্রভাব পড়বে না বলে মনে করেন টিপু মুনশি।
জানা গিয়েছে, প্রতিটি প্রতিষ্ঠানকে হয়তো ৫০ টন করে দেব। এখন ইলিশের মরশুম, বাজারে চড়া দাম। তারপরও ইলিশ রপ্তানির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘ইলিশ আমরা নিয়মিত রপ্তানি করি না। শুধু দুর্গাপুজোয় যেসব বাঙালি আমাদের মতো ইলিশ খেয়ে থাকেন, তাদের জন্য এই উৎসবের সময় শুভেচ্ছা স্বরূপ ইলিশ দেওয়া হয়। যেমন আমের সময়, আমরা আম পাঠাই। সারা বছর কিন্তু আমরা এক ছটাকও ইলিশ রপ্তানি করিনি। এই ১৫ দিন কিংবা এক মাসের জন্য টোকেন স্বরূপ কিছু ইলিশ রপ্তানি করব।’’
[আরও পড়ুন: পুত্রবধূকে ‘ধর্ষণ’ শ্বশুরের, ‘তুমি এখন আমার আম্মি’, দাবি করে স্ত্রীকে বাড়িছাড়া করলেন যুবক]
বাণিজ্যমন্ত্রক এবার পশ্চিমবঙ্গে ইলিশ রপ্তানির জন্য ৯৬ প্রতিষ্ঠানকে অনুমতি দিয়েছে। যদিও ইলিশ রপ্তানির অনুমোদন চেয়ে একশো প্রতিষ্ঠান আবেদন করেছিল। প্রতি বছরের ধারাবাহিকতা বজায় রেখেই বাংলাদেশ (Bangladesh) এবারও ইলিশ রপ্তানির অনুমতি দিয়েছে। বাণিজ্য মন্ত্রক সূত্রে খবর- প্রত্যেক ব্যবসায়ী নির্দিষ্ট পরিমাণ ইলিশ রপ্তানির অনুমোদন পাবেন। গতবার যেসব প্রতিষ্ঠানকে অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল তাদের মধ্যে অনেকে নির্ধারিত পরিমাণ ইলিশ রপ্তানি করতে পারেনি। তাই এবার প্রতিষ্ঠানের সক্ষমতা দেখে অনুমতি দেওয়া হলো। গত বছর ৪৯টি প্রতিষ্ঠানের প্রত্যেককে ৫০ মেট্রিক টন করে মোট ২ হাজার ৪৫০ মেট্রিক টন ইলিশ রপ্তানির অনুমতি দেওয়া হয়েছিল।
এর আগে ১ সেপ্টেম্বর কলকাতা ফিশ ইম্পোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে দুর্গাপুজোয় পাঁচ হাজার টন ইলিশ আমদানি চেয়ে কলকাতার বাংলাদেশ উপ-হাইকমিশনে আবেদন করে। চিঠিতে বলা হয়, গত বছর দুর্গাপুজো উপলক্ষে ২৯০০ মেট্রিক টন ইলিশ রপ্তানির অনুমোদন দেওয়া হয়। তবে মাত্র ১৩০০ মেট্রিক টন ইলিশ রপ্তানি হয়েছিল। এ বছর তারা পাঁচ হাজার মেট্রিক টন ইলিশ আমদানি করতে চায় বাংলাদেশ থেকে। ওই চিঠিতে আরও বলা হয়, পদ্মার ইলিশ শুধু রপ্তানিযোগ্য সুস্বাদু মাছই নয়। কলকাতার মানুষ এটাকে ঢাকার পাঠানো বহু মূল্যবান উপহার হিসেবে ধরে। একইসঙ্গে উন্নত গুণাগুণ সমৃদ্ধ বড় মাপের ইলিশ চেয়েছে কলকাতা। বাংলাদেশ সরকারের পরিকল্পনা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে রপ্তানি কার্যক্রম শেষ করা। এছাড়া বাংলাদেশ বাণিজ্য মন্ত্রকের রপ্তানি অনুবিভাগের এক ঊর্ধ্বতন আধিকারিক জানিয়েছিলেন, ব্যবসায়ীদের দাবি পুরোটাই পূরণ করা হবে।
[আরও পড়ুন: বাড়ির অ্যাকোরিয়ামে ডিম ফুটে বেরল সাপের বাচ্চা! আজব কাণ্ড পটাশপুরে]
এদিকে দুর্গাপুজো শুরু হবে ২০ অক্টোবর থেকে। অক্টোবরে ২২ দিনের জন্য মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা (Banned) থাকে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রকের পক্ষ থেকে। গত বছর নিষেধাজ্ঞা শুরু হয়েছিল ৭ অক্টোবর থেকে। বাণিজ্য মন্ত্রক এবার আগেভাগেই ইলিশ রপ্তানির অনুমোদন দিচ্ছে। যেসব প্রতিষ্ঠানকে রপ্তানির অনুমতি দেওয়া হবে, তারা সে অনুযায়ী কাজ করছে কিনা, তা নজরদারিও করবে বাণিজ্য মন্ত্রক। ২০১২ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত রপ্তানি বন্ধ থাকলেও ২০১৯ থেকে ভারতে আবার ইলিশ রপ্তানি শুরু হয়।