shono
Advertisement
Khaleda Zia

রাজপ্রাসাদ থেকে বন্দিশালা, খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক জীবন হার মানায় চিত্রনাট্যকেও

মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিরুদ্ধে পাকিস্তানের হাত ধরেই জমি শক্ত করেছিল তাঁর দল বিএনপি।
Published By: Amit Kumar DasPosted: 08:27 AM Dec 30, 2025Updated: 08:27 AM Dec 30, 2025

সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: খালেদা জিয়া। বাংলাদেশের রাজনীতিতে শক্তিশালী এবং বিতর্কিত এক ব্যক্তিত্ব। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিরুদ্ধে পাকিস্তানের হাত ধরেই জমি শক্ত করেছিল তাঁর দল বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট পার্টি (বিএনপি)। তাঁর আমলেই মহাশক্তিশালী হয়ে ওঠে জামাত-ই-ইসলামি-সহ অন্যান্য মৌলবাদী সংগঠন। ভারতের সঙ্গেও তাঁর সম্পর্ক যে খুব একটা মধুর ছিল না তা সবার জানা। মুজিব হত্যার পর রাজাকারদের আশ্রয় দিয়েছিলেন তাঁর স্বামী সেনাশাসক জেনারেল জিয়াউর রহমান। তাঁর মৃত্যুর পর একই কাজ করে গিয়েছেন খালেদা। সবমিলিয়ে, রাজপ্রাসাদ থেকে বন্দিশালা পর্যন্ত বেগম জিয়ার রাজনৈতিক ক্যারিয়ার চমকে ভরা।

Advertisement

সালটা ১৯৮১ সালের ৩০ মে বাংলাদেশের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে যখন হত্যা করা হয়, সেই সময় সাধারণ গৃহবধূ ছিলেন খালেদা জিয়া। স্বামীর মৃত্যুর পর তখন দিশাহারা অবস্থা বিএনপির। দলের মধ্যে চলছে নেতৃত্বের টানাপোড়েন। প্রেসিডেন্ট পদে কে বসবে তা নিয়ে অশান্তি চরমে। এর ঠিক এক বছর পর দলেরই বরিষ্ঠ নেতৃত্বের পরামর্শে রাজনীতিতে পা রাখার সিদ্ধান্ত নেন খালেদা। ১৯৮২ সালের ১৩ জানুয়ারি বিএনপির প্রাথমিক সদস্যপদ নেওয়ার পর ৭ নভেম্বর জিয়াউরের সমাধিস্থলে শ্রদ্ধা জানিয়ে জীবনের প্রথম রাজনৈতিক ভাষণ দেন তিনি। এরপরই শুরু হয় বাংলাদেশের রাজনীতিতে তাঁর পদচারণ।

বিএনপির তরুণ অংশ খালেদা জিয়াকে দলের প্রধান হিসেবে দেখতে চাইলেও দলের অন্দরে শীর্ষ নেতার অভাব ছিল না। তবে বিএনপিতে খালেদার প্রভাব উত্তরোত্তর বাড়তে থাকে। ১৯৮৩ সালে সিনিয়র ভাইস-চেয়ারম্যান এবং পরে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হন তিনি। সেনাপ্রধান এরশাদবিরোধী আন্দোলনে নেমে দ্রুত জনপ্রিয়তা অর্জন করেন তিনি। ১৯৮৪ সালের ১০ মে খালেদা আনুষ্ঠানিকভাবে বিএনপির চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে ব্যাপক আন্দোলনের জেরে খালেদা জিয়ার জনপ্রিয়তা দেশে-বিদেশে ছড়িয়ে পড়ে। বাংলাদেশে সামরিক শাসনের অবসান ঘটিয়ে দেশে গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠায় অগ্রণী ভূমিকা নেন তিনি। ১৯৯১ সালের নির্বাচনে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে জয়ী হয় খালেদার দল বিএনপি। প্রথমবার বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হন জিয়াউর পত্নি খালেদা।

প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বে এসেই দেশের অর্থনৈতিক উন্নতি ও পরিকাঠামোগত উন্নয়নের দিকে খালেদা নজর দেন কিন্তু বিতর্ক তাঁর পিছু ছাড়েনি। তাঁর শাসনে বাংলাদেশে মৌলবাদ চরম আকার নেয়। সংখ্যালঘুদের উপর নির্যাতন, হিংসা মাত্রাছাড়া হয়ে ওঠে। যার ফলস্বরূপ পরের নির্বাচনে আওয়ামি লিগের কাছে হারের মুখ দেখতে হয় মুজিব চেতনাকে দুরমুশ করা পাকপন্থী বিএনপিকে। ক্ষমতা হারালেও বিরোধী নেত্রী হিসেবে দাপটের সঙ্গে লড়াই চালিয়ে যান তিনি। ২০০১ সালে ফের ক্ষমতায় আসে তার দল। আবারও প্রধানমন্ত্রী হন খালেদা জিয়া। কিন্তু পরিস্থিতি বদলায়নি। সমস্ত ক্ষমতার রাশ নিজের হাতে নিয়ে ফের শুরু হয় খালেদার দাপট। গণআন্দোলন, জনমত এবং জনপ্রিয়তাকে ভিত্তি করে ক্ষমতায় এলেও অচিরেই তাঁর শাসনে অরাজকতা ও দুর্নীতি ভয়াবহ আকার নেয়। সাম্প্রদায়িক হিংসা ব্যাপক বাড়ে বাংলাদেশে। মৌলবাদ ও রাজনৈতিক হিংসার ঘটনাও লাগামছাড়া আকার নেয়। তার মেয়াদকালে দুর্নীতির সূচকে (২০০১-২০০৫) বাংলাদেশ টানা পাঁচ বছর বিশ্বের সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ হিসেবে উঠে আসে।

২০০৭ সালের রাজনৈতিক সহিংসতা ও অন্তর্দ্বন্দ্বের কারণে নির্বাচন বিলম্বিত হলে, সেনাবাহিনী সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতা গ্রহণ করে। সেই সরকারের সময়কালে, খালেদা জিয়া তার দুই সন্তান-সহ দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত হন। যার ফলও ভুগতে হয় বিএনপিকে। ২০০৮ সালের নির্বাচনে ভরাডুবি হয় খালেদা জিয়ার দলের। ক্ষমতায় আসে শেখ হাসিনার আওয়ামি লিগ। বাংলাদেশে আবারও ফেরে মুজিব চেতনা। এরপর সেভাবে আর মাথা তুলে দাঁড়াতে পারেনি বিএনপি। ২০১০-এর পর থেকে তাঁর রাজনৈতিক ভূমিকা ক্রমশ সীমিত হয়ে আসে।

২০১৮ সালে, অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলা এবং চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়াকে মোট ১৭ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। দুর্নীতি মামলায় জেলবন্দি হয়ে রাজনৈতিকভাবে আরও কোণঠাসা হয়ে পড়েন তিনি। ২০১৯ সালের এপ্রিলে চিকিৎসার জন্য তাঁকে জেল থেকে হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। এরপর ২০২০ সালের মার্চে মানবিক কারণে তাঁকে ছয় মাসের জন্য গৃহবন্দি করে জেল থেকে মুক্তি দেয় শেখ হাসিনা সরকার। পরবর্তীকালে জুলাই বিপ্লবের পর বাংলাদেশ অন্তর্বর্তীকালীন সরকার তাঁর শাস্তি মুকুব করে।

উল্লেখ্য, বাংলাদেশের ইতিহাসে খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক জীবন এক বিপরীতধর্মী বাস্তবতার সমন্বয়। গণআন্দোলনের মাধ্যমে তিনি নিজেকে জননেত্রী হিসেবে তুলে ধরলেও, তাঁর শাসনকাল বিতর্ক, দুর্নীতি, রাজনৈতিক হিংসা ও ধর্মীয় মেরুকরণের জন্য সমালোচিত। তবে এসবের পরও তিনি বাংলাদেশের শীর্ষ রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের একজন যিনি অশান্ত বাংলাদেশকে পথ দেখান।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

হাইলাইটস

Highlights Heading
  • বাংলাদেশের রাজনীতিতে শক্তিশালী এবং বিতর্কিত এক ব্যক্তিত্ব খালেদা জিয়া।
  • মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিরুদ্ধে পাকিস্তানের হাত ধরেই জমি শক্ত করেছিল তাঁর দল বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট পার্টি (বিএনপি)।
  • তাঁর আমলেই মহাশক্তিশালী হয়ে ওঠে জামাত-ই-ইসলামি-সহ অন্যান্য মৌলবাদী সংগঠন।
Advertisement