সুকুমার সরকার, ঢাকা: একটি পদ্মা সেতু বাংলাদেশের (Bangladesh) শুধু ইতিহাসই গড়েনি, গোটা দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থার পাশাপাশি অর্থনৈতিক উন্নতিতে বহু রাস্তা খুলে দিয়েছে। পদ্মা সেতু (Padma Setu) চালুর পর বাগেরহাটের মোংলা সমুদ্রবন্দর দিয়ে এই প্রথম বস্ত্র রপ্তানি শুরু করল বাংলাদেশ। ঢাকা, গাজিপুর, সাভার ও নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে তৈরি জামাকাপড় (Garments) নিয়ে বৃহস্পতিবার বেলা ১১টা নাগাদ মোংলা বন্দর ছেড়েছে ‘এমভি মার্কস নেসনা’ নামে পানামার পতাকাবাহী একটি জাহাজ। বন্দর কর্তৃপক্ষ ও শিপিং এজেন্টদের বক্তব্য, মোংলা বন্দর ব্যবহার করে পণ্য রপ্তানির বিষয়টি বন্দরের ক্ষেত্রে নতুন এক মাইলফলক।
মোংলা বন্দরের পরিচালক (ট্রাফিক) মোস্তফা কামাল জানান, পদ্মা সেতু চালুর পর বৃহস্পতিবার থেকে মোংলা বন্দর দিয়ে প্রথমবার পণ্য রপ্তানি শুরু হল। এর আগে মোংলা দিয়ে হাতে গোনা কয়েকবার সামান্য কিছু রপ্তানি হয়েছে। আগে এই পথে ফেরিঘাটের জন্য দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হত। ফলে অনেকেই মোংলা বন্দর ব্যবহারে আগ্রহী হতেন না। এখন সময় ও দূরত্ব কমে যাওয়ায় এই বন্দর দিয়ে পণ্য আমদানি-রপ্তানি আগের চেয়ে সহজ ও দ্রুত হবে।
[আরও পড়ুন: অর্পিতার বেলঘরিয়ার ফ্ল্যাটে স্বর্ণভাণ্ডার, কী কী উদ্ধার করল ইডি?]
বন্দর সূত্রে জানা গিয়েছে, বাংলাদেশের মোট ২৭ টি কারখানায় তৈরি শিশুদের পোশাক, জার্সি, কার্ডিগান, টি-শার্ট, ট্রাউজার-সহ বিভিন্ন জামাকাপড় নিয়ে পানামার জাহাজটি পূর্ব ইউরোপের পোল্যান্ডে (Poland) যাচ্ছে। পদ্মা সেতু চালুর পর সড়কপথে স্বল্প সময়ের মধ্যে ঢাকার কারখানা থেকে এই পণ্যগুলো মোংলায় আসে। বন্দরে পৌঁছনোর পর বুধবার ৮ নম্বর জেটিতে থাকা ‘এমভি মার্কস নেসনা’ জাহাজে পণ্যবোঝাই কনটেনারগুলি তোলা শুরু হয়। বন্দর কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় ঢাকা থেকে সড়কপথে মোংলা বন্দরের দূরত্ব কমেছে। যেখানে চট্টগ্রাম বন্দরের দূরত্ব ২৬০ কিলোমিটার, সেখানে বর্তমানে মোংলার দূরত্ব ১৭০ কিলোমিটার। জাহাজ হ্যান্ডেলিং দ্রুত ও নিরাপদে হওয়ার পাশাপাশি ঢাকার সঙ্গে দূরত্ব কমেছে। তাই ব্যবসায়ীদেরও সময়, অর্থ – দুইই সাশ্রয় হচ্ছে। ফলে মোংলা বন্দর দিয়ে আমদানি-রপ্তানিতে আগ্রহ বাড়ছে।
[আরও পড়ুন: দ্রৌপদী মুর্মুকে ‘রাষ্ট্রপত্নী’ বলে কটাক্ষ! বিতর্কে অধীর, তীব্র আক্রমণে বিজেপি]
২০২১-২২ অর্থবর্ষের মে মাস পর্যন্ত মোংলা জেটিতে কনটেনার হ্যান্ডেলিংয়ে খালাস করা পণ্যের পরিমাণ ছিল ১ লক্ষ ৪৬ হাজার ৭৪৬ মেট্রিক টন। উলটোদিকে কনটেনারে বোঝাই হয়েছে ৬৯ হাজার ৬৫৪ মেট্রিক টন পণ্যসামগ্রী। এখন পণ্য রপ্তানির মাধ্যমে প্রায় আমদানি নির্ভর সমুদ্রবন্দরটি দিয়ে রপ্তানি বৃদ্ধির আশা দেখছেন সংশ্লিষ্ট সকলে। সিএন্ডএফ ও শিপিং এজেন্ট সৈয়দ জাহিদ হোসেন বলেন, চট্টগ্রামে জাহাজের চাপের কারণে অনেক সময় পণ্য ওঠানো ও নামানোয় অনেক সময় লাগে। তবে মোংলা বন্দরে সেই চাপ আর নেই। এই বস্ত্র রপ্তানির পর আরও অনেকে এই বন্দর দিয়ে রপ্তানিতে আগ্রহী হবেন বলে আশা বাড়ছে।