সুকুমার সরকার, ঢাকা: গত ৫ আগস্ট বাংলাদেশের গণ আন্দোলন চরম আকার ধারণ করে। প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারি বাসভবন, গণভবন অভিযানে এগিয়ে যান হাজার হাজার বিক্ষোভকারী। কিন্তু তাঁরা সেখানে পৌঁছনোর আগেই পদত্যাগ করে দেশ ছাড়েন হাসিনা। তার পরই গণভবনে ঢুকে কার্যত তাণ্ডব চালায় উন্মত্ত জনতা। লুঠ করে নেওয়া হয় জিনিসপত্র। এবার সেই গণভবনকে ‘জুলাই গণ অভ্যুত্থান স্মৃতি জাদুঘর’ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে মহম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার।
বৃহস্পতিবার অন্তর্বর্তী সরকারের পঞ্চম উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মহম্মদ ইউনুস। পরে সন্ধ্যায় রাজধানীর ঢাকার ফরেন সার্ভিস অ্যাকাডেমিতে যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া জানান, গণভবনের দরজা জনগণের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে। জুলাই মাসে গণ অভ্যুত্থানে শহিদদের স্মৃতি এবং বিগত ফ্যাসিবাদী আমলে যত অন্যায়–অবিচার হয়েছে, তার সব কিছু সংরক্ষণ করার জন্য এটাকে ‘জুলাই গণ–অভ্যুত্থান স্মৃতি জাদুঘর’ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা হবে। দ্রুতই এই বিষয়ে কার্যক্রম শুরু হবে। গণভবন যে অবস্থায় রয়েছে, জনগণ যেভাবে রেখেছেন সেই অবস্থাতেই রাখা হবে। এর মধ্যে ভিতরে একটি মিউজিয়াম তৈরি করা হবে। সেখানে অভ্যুত্থানের স্মৃতি সংরক্ষিত থাকে।
[আরও পড়ুন: ‘আমার সোনার বাংলা’, রবীন্দ্রনাথে আপত্তি, জাতীয় সঙ্গীত বদলের দাবি বাংলাদেশে]
গত জুলাই মাসে বাংলাদেশে সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার নিয়ে ছাত্রদের আন্দোলন ব্যাপক আকার ধারণ করে। দেশের নানা প্রান্তে শয়ে শয়ে রক্ত ঝরে। কড়া হাতে সেই বিক্ষোভ-প্রতিবাদ দমন করার চেষ্টা করে তৎকালীন হাসিনা সরকার। যা নিয়ে জনতা ও ছাত্রদের মধ্যে ক্ষোভের আগুন চরম আকার নেয়। ছাত্রদের দাবি মেনে কোটা সংস্কার করা হলেও আন্দোলন থামেনি। পরে এই ছাত্রদের আন্দোলনই কার্যত ‘হাসিনা হঠাও’ অভিযানের রূপ নেয়। অবশেষে ৫ আগস্ট ব্যাপক গণ আন্দোলনের জেরে আওয়ামি লিগের টানা প্রায় ১৬ বছরের সরকারের অবসান ঘটে।
উল্লেখ্য, ৫ আগস্ট সোশাল মিডিয়ায় গণভবনের একের পর এক ছবি ছড়িয়ে পড়তে থাকে। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবনে ঢুকে হামলা চালায় বিক্ষোভকারী। ভিতর থেকে নানা আসবাবপত্র, শাড়ি চুরি করে নেওয়া হয়। বাসভবনের ভিতরে খাবার খেতেও দেখা যায় অনেককে। একদিকে যখন তাণ্ডব চলছে গণভবনে তখন হামলা চলছে অতীতের রক্তভেজা স্মৃতি বিজড়িত ৩২ নম্বর ধানমন্ডির বাড়িতে। যেখানে ঘাতকের বুলেটে সপরিবারে খুন হয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ক্ষমতায় থাকার সময় বাবার স্মৃতিতে সেই বাড়ি সংগ্রহশালাতে পরিণত করেছিলেন হাসিনা। কিন্তু তিনি বাংলাদেশ ছাড়ার পরই জ্বলে খাক হয়ে যায় ধানমন্ডির সেই বাড়ি।