সুকুমার সরকার, ঢাকা: ভারতের সঙ্গে নিজস্ব মুদ্রা ‘রুপি’তে বাণিজ্য শুরু করছে বাংলাদেশ (Bangladesh)। ভারতের সঙ্গে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য শুরু হচ্ছে মার্কিন ডলারের পাশাপাশি রুপিতে। আপাতত রুপিতে শুরু হলেও উভয় দেশের বাণিজ্য ব্যবধান কমে এলে বাংলাদেশি মুদ্রা টাকাতেও হবে বাণিজ্য। মঙ্গলবার ঢাকার (Dhaka) লা মেরিডিয়ান হোটেলে ভারতের সঙ্গে রুপিতে দ্বিপাক্ষিক লেনদেনের উদ্বোধন হবে। যৌথ আয়োজক বাংলাদেশ ব্যাংক ও ঢাকায় নিযুক্ত ভারতীয় হাই কমিশন। বাংলাদেশের সোনালী ব্যাংক ও ইস্টার্ন ব্যাংক এবং ভারতের স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়া ও আইসিআইসিআই ব্যাংক উভয় দেশের মধ্যে রুপিতে বাণিজ্য করার দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যাংক। ডলার-সংকটের কারণে উভয় দেশ রুপিতে বাণিজ্য করার বিষয়টি সামনে এনেছে। এতে উভয় দেশ লাভবান হবে। দ্বিতীয়ত, আমদানি ও রপ্তানিকারকদের দু’বার মুদ্রা বিনিময় করার খরচ কমবে। তৃতীয়ত, লেনদেন নিষ্পত্তিতে সময় বাঁচবে। চতুর্থত, অন্য উদ্বৃত্ত মুদ্রা রুপিতে রূপান্তর করে লেনদেন করা যাবে।
ঢাকার কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্রে জানা গিয়েছে, টাকা ও রুপিতে উভয় দেশের আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য করার আলোচনা চলছে প্রায় এক দশক ধরে। ডলার-সংকট প্রকট আকার ধারণ করায় সম্প্রতি তা আলোর মুখ দেখেছে। কাজটি বাস্তবায়ন করতে বাংলাদেশের দুই ব্যাংক ভারতের দুই ব্যাংকে ‘নস্ট্র হিসাব’ খুলেছে। এক দেশের এক ব্যাংক অন্য দেশের কোনো ব্যাংকে বৈদেশিক মুদ্রায় লেনদেনের উদ্দেশ্যে হিসাব খুললে সে হিসাবকে ‘নস্ট্র হিসাব’ বলা হয়ে থাকে। ইস্টার্ন ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আলি রেজা ইফতেখার জানিয়েছেন, ‘‘আপাতত ভারতীয় রুপিতে বাণিজ্য হবে। পরে বাংলাদেশি টাকার বিষয়টিও আসবে বলে আমরা আশা করছি।”
[আরও পড়ুন: বিজেপির ‘দালালি’ বন্ধের দাবি, ‘কমরেড’দের বিক্ষোভে তালা বন্ধ আলিমুদ্দিনের পার্টি অফিসে!]
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২১-২২ অর্থবছরে মোট ৮ হাজার ৯১৬ কোটি মার্কিন ডলারের পণ্য আমদানি করে বাংলাদেশ। এর মধ্যে ১ হাজার ৩৬৯ কোটি ডলারের পণ্যই আমদানি হয় ভারত থেকে। একই অর্থবছরে বাংলাদেশ ভারতে রপ্তানি করে ১৯৯ কোটি ডলারের পণ্য। আমদানি-রপ্তানি মিলিয়ে উভয় দেশের মধ্যে ১ হাজার ৫৬৮ কোটি ডলারের বাণিজ্য হয় ওই অর্থবছরে। বিদায়ী ২০২২-২৩ অর্থবছরেও একই প্রবণতা দেখা গেছে। ঢাকায় আমদানিকারকরা বলছেন, আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে রুপিকে মর্যাদাপূর্ণ মুদ্রায় রূপান্তর করতে ভারত বহু বছর ধরেই চেষ্টা করছে। দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক আরবিআই গত বছরের জুলাইয়ে এ জন্য একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করে। এমনকি দেশটির বাণিজ্য সংগঠন ও ব্যাংকগুলোকে পরামর্শ দিতে থাকে দেশটির অর্থ মন্ত্রণালয়, তারা যাতে ভারতীয় মুদ্রায় বিভিন্ন দেশের সঙ্গে বাণিজ্য শুরু করে। বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছেন।
[আরও পড়ুন: হাসপাতালেই সঙ্গমে লিপ্ত হয়ে মৃত্যু রোগীর! চাকরি গেল অভিযুক্ত নার্সের]
ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রাক্তন সভাপতি তাসকিন আহমেদ বলেন, ‘‘রুপিতে লেনদেন শুরু হলে অন্তত ২০০ কোটি ডলার বাঁচবে। সরকার তৃতীয় কোনও দেশ থেকে রুপি আনতে পারলে আরও ডলার সাশ্রয় সম্ভব। বেশ কয়েকটি দেশের সঙ্গে আমাদের বাণিজ্য উদ্বৃত্ত আছে। সেসব দেশে রপ্তানির অর্থের কিছু অংশ রুপিতে আনার সুযোগ আছে।” বিষয়টি নতুন করে সামনে আসে ভারতের দিল্লিতে গত বছরের ডিসেম্বরে যখন দুই দেশের বাণিজ্যমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠক হয়। তখন ভারতের পক্ষ থেকে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের মাধ্যম ভারতীয় মুদ্রা রুপি ব্যবহারের প্রস্তাব দেওয়া হয়। আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব দেওয়ার কথা ওই বৈঠকেই জানিয়ে দেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। শুধু বাণিজ্য নয়, বিনিয়োগ এবং ঋণেও রুপিতে লেনদেনের সুযোগ রয়েছে বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা।