সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: জল্পনাই অবশেষে সত্যি হল। বাংলাদেশের (Bangladesh) নয়া মন্ত্রিসভা থেকে বাদ পড়লেন প্রাক্তন বিদেশমন্ত্রী ডক্টর এ কে আবদুল মোমেন (A K Abdul Momen)। তাঁর জায়গায় এবার বিদেশমন্ত্রীর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে প্রাক্তন তথ্য-সম্প্রচার মন্ত্রী হাসান মাহমুদকে। ওয়াকিবহাল মহলের একাংশের মত, মোমেনের পদ খোয়ানো কিছুটা প্রত্যাশিতই ছিল। সম্প্রতি ভারতবন্ধু মনোভাব প্রকাশ্যে আসায় দেশের অভ্যন্তরেই রোষের মুখে পড়তে হয়েছিল বর্ষীয়ান রাজনীতিক আবদুল মোমেনকে। এমনকী গত বছর জি-২০ (G-20) বৈঠকে ভারতে আসার সময় শেষ মুহূর্তে হাসিনার সফরসঙ্গী হতে পারেননি তৎকালীন বিদেশমন্ত্রী। যা যথেষ্ট ইঙ্গিতবাহী ছিল। আর নতুন বছরে সে দেশের নতুন মন্ত্রিসভায় ঠাঁই হল না তাঁর।
সমস্যার সূত্রপাত গত অগাস্ট মাসে। সেসময় বান্দরনগর চট্টগ্রামে জে এম সেন হলে জন্মাষ্টমী উৎসবের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিদেশমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন বলেছিলেন, “শেখ হাসিনার (Sheikh Hasina)সরকারকে টিকিয়ে রাখার জন্য যা যা করা দরকার, ভারত সরকারকে সেটা করার অনুরোধ করেছি। আমি ভারতে গিয়ে বলেছি, শেখ হাসিনাকে টিকিয়ে রাখতে হবে। শেখ হাসিনা আমাদের আদর্শ। তাঁকে টিকিয়ে রাখতে পারলে আমাদের দেশ উন্নয়নের দিকে যাবে এবং সত্যিকারের সাম্প্রদায়িকতামুক্ত, অসাম্প্রদায়িক একটা দেশ হবে।” তাঁর এই মন্তব্যের পরই দেশজুড়ে শুরু হয় বিতর্ক (Controversy)।
[আরও পড়ুন: চতুর্থবার বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী পদে শেখ হাসিনা, ফোনে শুভেচ্ছা জানালেন মমতা]
এর পর বিদেশমন্ত্রী মোমেনও পালটা বলেন, ”অনেকে আমাকে ভারতের দালাল বলে। কারণ, অনেক কিছুই হয়, আমি স্ট্রং কোনও স্টেটমেন্ট দিই না।” তাঁর এসব বক্তব্যের বিরুদ্ধে ইসলামি আন্দোলন বাংলাদেশের বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, “একটি স্বাধীন দেশের রাষ্ট্র পরিচালনায় কে টিকে থাকবে আর কে থাকবে না, তা নির্ধারণ করার পূর্ণ অধিকার সেই দেশের জনতার। বিদেশমন্ত্রী যখন অন্য কোনও দেশকে ক্ষমতায় টিকিয়ে রাখতে যা যা করার তা করতে অনুরোধ করেন, তখন তা সুস্পষ্ট বাংলাদেশের মানুষের রক্তে কেনা সার্বভৌমত্বকে অন্যের হাতে অর্পণ করা হচ্ছে। বিদেশমন্ত্রী ভারত সরকারকে এই অনুরোধ করে জনগণের রক্তে কেনা অধিকারের সঙ্গে গাদ্দারি করেছেন। একই সঙ্গে তিনি রাষ্ট্রদ্রোহের অপরাধ করেছেন।”
[আরও পড়ুন: হাসিনার শপথের দিনই অস্তিত্ব প্রমাণে মরিয়া বিএনপি! ঢাকার কার্যালয়ে তালা ভেঙে প্রবেশ]
এভাবেই প্রেক্ষাপট তৈরি হচ্ছিল। ১১ জানুয়ারি বাংলাদেশের নবনির্বাচিত সরকার শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানের পর দেখা যায়, আবদুল মোমেনের ভাগ্যে এবার আর শিকে ছিঁড়ল না। কোনও মন্ত্রকের দায়িত্ব দেওয়া হয়নি তাঁকে। বিশেষজ্ঞ মহলের একাংশের মত, বাংলাদেশে ভারত বিদ্বেষ বাড়ছে। আবদুল মোমেনের ভারতপ্রীতি ভালো চোখে দেখছেন না অনেকেই। সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন সম্পন্ন হলেও সেই ইসলামপন্থীদের একটা চাপ রয়েছেই নবনির্বাচিত সরকারের উপর। সেসব দিক বুঝেশুনে, বড়সড় অশান্তি এড়াতেই মোমেনকে আর মন্ত্রিসভায় রাখেননি ৭৮ বছরের অভিজ্ঞ রাজনীতিক বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা।