ধ্রুবজ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায়: মরণোত্তর দেহদান নিয়ে এখনও অনেক ‘ট্যাবু’ রয়েছে। কারও ধর্মের ভয় আছে। তো কেউ বা আবার বাঙালি আচার-সংস্কারও অনেককে পিছনে টানে। তাই প্রতিশ্রুতি দিয়েও অনেকে পিছিয়ে যান। কারও ক্ষেত্রে আবার পরিবারের তরফেও প্রতিশ্রুতি ফিরিয়ে নেয়। তবে এমনটা হতে দিতে চান না রাজ্যের স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য। মৃত্যুর পরও সমাজের জন্য কিছু করে যেতে চান তিনি। রেখে যেতে চান তাঁর শারীরিক অংশ, যাতে করে কেউ নতুন প্রাণ পায় তাঁর সাহায্যের মধ্য দিয়ে। সেই কারণেই এই মরণোত্তর দেহদানের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন চন্দ্রিমা।
আর মরণোত্তর তাঁর শারীরিক অঙ্গদানের ইচ্ছে যাতে পরিস্থিতির চাপে পড়ে কেউ বদলে দিতে না পারেন, সেজন্য আইনি ব্যবস্থাও নিয়েছেন চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য। চন্দ্রিমা তাঁর শারীরিক অঙ্গদানের ইচ্ছে শুধু ঘোষণাই করেননি আইনবদ্ধও করেছেন তাঁর এই ইচ্ছেটুকু। ব্রেইন ডেথ হলেই তাঁর দেহ যেন তুলে দেওয়া হয় এসএসকেএম হাসপাতালের অ্যানাটমি বিভাগে। স্বামীর সঙ্গে মরণোত্তর দেহদানের অঙ্গীকার করলেন রাজ্যের স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য।
চন্দ্রিমার কথায়, “চিকিৎসা বিজ্ঞানে এটা একজন মায়ের অবদান। আমি চিকিৎসক নই। কিন্তু স্বাস্থ্য দপ্তরের প্রতিমন্ত্রী। সেদিক থেকে এভাবেই না হয় চিকিৎসা বিজ্ঞানে আমি কিছুটা অবদান রেখে গেলাম।” তাঁর প্রতিশ্রুতি রাখতে যাতে পরিবারের তরফে কোথাও কোনও বাধা না থাকে, তার জন্য চন্দ্রিমার ছেলেও প্রয়োজনীয় ‘কনসেন্ট’ দিয়েছেন। চন্দ্রিমা ও তাঁর স্বামী সমীর বোস ছাড়াও অঙ্গীকারবদ্ধ হয়েছেন তাঁর পরিবারের আরও তিন সদস্য। চন্দ্রিমাদেবীর তিন জা। চন্দ্রিমাকে অনুসরন করে একইভাবে মরণোত্তর দেহদানে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়েছেন তৃণমূলের নারী সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত আরও অনেকে। সব মিলিয়ে সংখ্যাটা ১৭। তাঁদের মধ্যে ১৫ জন মহিলা আর দু’জন পুরুষ। গত বছর হিন্দুস্থান পার্কে নিজের পাড়ার পুজোর সময়ই এই অঙ্গীকার করেছিলেন মন্ত্রী। চন্দ্রিমার কথায়, “আমাদের থিম ছিল, আমার দেহের বস্ত্র দিচ্ছি। তোমার বাঁচার শপথ নিচ্ছি। অর্থাৎ, আমার পর তুমি বাঁচো। আমার পরের প্রজন্ম বাঁচুক।”
[আরও পড়ুন:নির্যাতনের অভিযোগ পেলেই দ্রুত ব্যবস্থা, নারী সুরক্ষায় পুলিশকে কঠোর নির্দেশ মুখ্যমন্ত্রীর ]
অনেক ক্ষেত্রেই আক্ষেপ শোনা যায়, সমাজে এখনও এমন একটা বিষয় নিয়ে অঙ্গীকার করেও তা পূরণ করে যেতে পারেন না বেশিরভাগ মানুষই। যিনি অঙ্গীকারবদ্ধ হলেন, তাঁর মৃত্যুর সময় পরিবারের কেউ সেই অঙ্গীকার নিয়ে আপত্তি তুলতেই পারেন। মন্ত্রীর কথায়, “তা হতেই পারে। সেই কারণেই এখন পরিবারের কোনও তৃতীয় ব্যক্তির কনসেন্ট প্রয়োজন।” মন্ত্রী ও তাঁর স্বামীর ক্ষেত্রে সেই কনসেন্ট দিয়েছেন তাঁদের ছেলে সৌরভ।
মরণোত্তর দেহদানের ক্ষেত্রে আইন মোতাবেক স্পেসিফিক পারফরম্যান্স অফ কন্ট্রাক্ট প্রয়োজন। অর্থাৎ, সেই অঙ্গীকারে নির্দিষ্টভাবে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হতে হয়। কিন্তু মৃত্যুর পর তা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই লঙ্ঘিত হয়। চন্দ্রিমাদেবীও মনে করেন এই আইনটা দুর্বল। এই ‘লঙ্ঘন’ কি তবে কোনওভাবে রোখা সম্ভব নয়? মন্ত্রীর কথায়, প্রায় হয় না বললেই চলে। তিনি বলছেন, “মৃত্যুর পর দেহ নিয়ে যাওয়ার সময় পরিবারের কেউ রাজি না-ই হতে পারেন। কারণ যাঁর সঙ্গে চুক্তি হচ্ছে তিনি তো আর সে সময় বেঁচে নেই। সেক্ষেত্রে ‘পারফরম্যান্স অফ কন্ট্রাক্ট’ বলবৎ হয় না।” মন্ত্রীর যুক্তি, “পরিবারের তরফে প্রথমেই এই অনুমতি না পেলে যাঁর সঙ্গে হাসপাতাল চুক্তিবদ্ধ, মৃত্যুর পর স্বাভাবিক নিয়মে সেই চুক্তি অনেকটা মূল্যহীন হয়ে যায়। তাই এই আইনটা দুর্বল।”
[আরও পড়ুন:সরকারি হাসপাতালে চুরিই হচ্ছে রোগীর খাবার, ভিডিও ফুটেজে মিলল প্রমাণ ]
The post মানবিক মন্ত্রী, মরণোত্তর দেহদানের অঙ্গীকার চন্দ্রিমা ভট্টাচার্যের appeared first on Sangbad Pratidin.