shono
Advertisement
Ghatal

বাড়ির একতলা যেন পুকুর! প্লাবিত ঘাটালে ছাদেই সংসার পেতেছে ৩৫০ পরিবার

নৌকায় করে খিচুড়ি বিতরণ প্রশাসনের।
Published By: Suhrid DasPosted: 02:17 PM Aug 05, 2025Updated: 02:19 PM Aug 05, 2025

শ্রীকান্ত পাত্র, ঘাটাল: পশ্চিম মেদিনীপুরের ঘাটাল শহর থেকে ঢিল ছোড়া দূরত্বে ঘাটালের অজবনগর গ্রাম। গ্রামে প্রায় সাড়ে তিনশো পরিবারের বাস। সবক’টি পরিবারেরই এখন ছাদে সংসার। ত্রিপল দিয়ে ঘেরা ছাউনি পেতে গত দেড় মাস ধরে ছাদেই চলছে দু’বেলার রান্না-খাবার। রান্না-খাবার বলতে ব্লক প্রশাসন থেকে নৌকায় করে নিয়ে যাওয়া খিচুড়ি। কেউ কেউ আবার ছাদেই গ‌্যাসে বা উনুনে একবেলা ভাতে ভাত রান্না করছেন। সবজি দূর অস্ত। পাবেন কোথায়? ঘাটাল শহরের সবজি বাজারে যাবেন-ই বা কিভাবে? ছাদ থেকে নামলেই নৌকা ছাড়া গতি নেই।

Advertisement

অনেকে আবার নিজস্ব ডোঙা, ডিঙি নিয়ে বাজার-হাট করতে সকাল সকাল রওনা দেন শহরের দিকে। আর সরকারি পানীয় জলের পাউচ দিয়েই মিটছে চাহিদা। বাড়ির চারপাশ থইথই। বইছে ঘোলা জলের স্রোত। এই জল যন্ত্রণা আর কতদিন? কথা হচ্ছিল ঘাটাল ব্লকের অজবনগর দুই নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের অজবনগর গ্রামের গণেশ পোড়ের সঙ্গে। সেই ১৯ জুন থেকেই ছাদে সংসার পেতেছেন গণেশবাবু। একতলা বাড়ি জলের তলায়। সেদিন তড়িঘড়ি করে ছাদে উঠে এসেছিলেন গোটা পরিবার নিয়ে। সেই থেকেই ছাদে সংসার। দিনে একবার রান্না হয় গ‌্যাসে। ব্লক প্রশাসন থেকে খিচুড়ি, পানীয় জলের পাউচ দিয়ে যায়। সোমবার গলা জল পেরিয়ে বাজার-হাট করে ছাদে উঠেছেন গণেশবাবু। নিজেজের কষ্টের বর্ণনা দিতে গিয়ে হতাশ গণেশবাবু বললেন, ‘‘এই সময় তো কখনই ঘাটালে বন‌্যা পরিস্থিতি হয়নি। এখানে সাধারণত বন‌্যা পরিস্থিতি হয় সেপ্টেম্বর মাস নাগাদ বা আগস্টের শেষের দিকে। এখনও সেপ্টেম্বর মাস অনেক বাকি। দেখতে দেখতে প্রায় দেড় মাসের বেশি হয়ে গেল এই ছাদে কাটিয়ে দিলাম। তাহলে কি আরও দেড় মাস এই ছাদেই কাটাতে হবে?’’ শুধু গণেশবাবু নন, এই গ্রামের বিকাশ দোলই, পূর্ণ পোড়ে, লক্ষ্মণ পোড়ে, গুনধর বড়দোলইরা একইভাবে ছাদে সংসার পেতেছেন গত দেড় মাস ধরে। সবারই বাড়ির একতলা জলের তলায়।

একমাস ধরে জলমগ্ন এলাকা। নিজস্ব চিত্র

ব্লক প্রশাসনের তথ‌্য বলছে, এই গ্রাম পঞ্চায়েতের অজবনগর পূর্ব, পশ্চিম ও মধ‌্যপাড়া ও রথিপুর গ্রামের সবক’টি বাড়ির একতলা জলের তলায়। একইভাবে হরিদাশপুর, রাধাকান্তপুর, মহারাজপুর, নিমপাতা, এলোচক, পান্না, শীতলপুরের মতো ২০ থেকে ২২টি বুথের সবক’টি বাড়ির একতলা জলের তলায়। ছাদেই একের পর এক পরিবার সংসার পেতেছেন সেই ১৯ জুন থেকে। সবারই প্রশ্ন আর কতদিন এভাবে ছাদে অস্থায়ী সংসার পেতে বাস করতে হবে?

ঘাটাল পঞ্চায়েত সমিতির প্রাক্তন সভাপতি তথা ব্লক তৃণমূল সভাপতি দিলীপ মাজির বাড়িও বন‌্যাকবলিত এলাকায়। তিনি জানাচ্ছেন, ‘‘ঘাটাল ব্লকের ছয়টি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকা পুরো জলবন্দি। বাকি দু’টি গ্রাম পঞ্চায়েত জলমগ্ন আংশিক। ২২টির মতো গ্রামের সবক’টি বাড়ির একতলা জলের তলায় প্রায় দেড় মাস ধরে। বাকিগুলিও কোনওরকমে চলছে। রাস্তাঘাট তো সবই জলমগ্ন। নিজস্ব ডোঙা, ডিঙিই ভরসা। অসুখ-বিসুখ হলে তো কথাই নেই। মানুষের কী যে কষ্ট চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা কঠিন। আরও যে কতদিন এইভাবে ছাদে সংসার নিয়ে থাকতে হবে, তা জানি না। কেন না ঘাটালে সাধারণত বন‌্যা পরিস্থিতি হয় আগস্টের শেষে বা সেপ্টেম্বর মাসের মাঝামাঝি। জল থাকে পুজোর আগে পর্যন্ত। এবার বন‌্যা পরিস্থিতি শুরু হয়ে গেল জুন মাসের মাঝামাঝি থেকে যা আজও কমার কোনও লক্ষণ নেই। এইভাবে যদি চলতে থাকে, প্রায় তিন মাস জলবন্দি থাকতে হবে ঘাটালের মানুষকে। যা আগে কখনও দেখা যায়নি।’’

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

হাইলাইটস

Highlights Heading
  • পশ্চিম মেদিনীপুরের ঘাটাল শহর থেকে ঢিল ছোড়া দূরত্বে ঘাটালের অজবনগর গ্রাম।
  • গ্রামে প্রায় সাড়ে তিনশো পরিবারের বাস। সবক’টি পরিবারেরই এখন ছাদে সংসার।
  • ত্রিপল দিয়ে ঘেরা ছাউনি পেতে গত দেড় মাস ধরে ছাদেই চলছে দু’বেলার রান্না-খাবার।
Advertisement