দেবব্রত মণ্ডল, বারুইপুর: দাবি মতো মেলেনি পণ। আর সেই ‘অপরাধে’ই বিয়ের মাত্র ৯ মাসের মধ্যেই অন্তঃসত্ত্বা গৃহবধূকে শ্বাসরোধ করে খুনের অভিযোগ। গ্রেপ্তার অভিযুক্ত স্বামী। দক্ষিণ ২৪ পরগনার (South 24 Pargana) জয়নগর থানার দক্ষিণ বারাসতের পদ্মেরহাটের ঢালিপাড়ার ঘটনায় চাঞ্চল্য।
মাত্র ৯ মাস আগে ওই গ্রামেরই বাসিন্দা সাহাবুল ঢালির সঙ্গে সম্বন্ধ করে বিয়ে হয় জাংগালিয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের আইউব আলি সর্দারের মেয়ে বেবি খাতুন। অভিযোগ, বিয়ের দেড় মাস পর থেকেই পণের জন্য চাপ দিতে শুরু হয় ওই গৃহবধূকে। দাবি মতো প্রথমে ২০ হাজার টাকা সাহাবুলকে দিয়েছিলেন গৃহবধূর বাবা।এখানেই শেষ নয়। দিনের পর দিন দাবি আরও বাড়তে থাকে। বাপের বাড়ি থেকে গৃহবধূকে ১০ হাজার টাকা আনার জন্য চাপ দেওয়া হয় বলেও অভিযোগ। প্রথমে বাপের বাড়িতে জানাতে রাজি হননি গৃহবধূ। দাবি না মেটায় অত্যাচার বাড়তে থাকে। সহ্য করতে না পেরে বাপের বাড়িতে অত্যাচারের কথা জানান তিনি।
[আরও পড়ুন: নিয়োগে স্বচ্ছতা আনতে প্রকাশ করা হবে TET-এর উত্তরপত্র, পুজোর আগেই ফলপ্রকাশের সম্ভাবনা]
অত্যাচারের কথা শুনে ফের ১০ হাজার টাকা জামাইয়ের হাতে তুলে দেন গৃহবধূর বাবা। গত বৃহস্পতিবার আবারও গৃহবধূর উপর অত্যাচার শুরু হয়। অভিযোগ, এবার বাড়ি তৈরি এবং ব্যবসা করার জন্য গৃহবধূর স্বামী ১ লক্ষ টাকা দাবি করে। তবে ওই টাকা দিতে পারেননি গৃহবধূর বাবা। টাকা না নিয়ে বাড়িতে ফিরলে তার উপর অত্যাচার বাড়বে তা জানতেন ওই গৃহবধূ। তাই প্রথমে শ্বশুরবাড়ি ফিরতে চাননি। তবে তাঁর ননদ বাপের বাড়িতে আসেন। সেখান থেকে ওই গৃহবধূকে শ্বশুরবাড়িতে নিয়ে যান। অভিযোগ, তারপরই শুরু হয় অত্যাচার। এরপর গৃহবধূর প্রতিবেশীরা বাপের বাড়ির লোকজনকে খবর দেন। জানান গৃহবধূর অবস্থা আশঙ্কাজনক।
খবর পাওয়ামাত্রই গৃহবধূর শ্বশুরবাড়িতে ছুটে যান তাঁর বাপের বাড়ির লোকজন। তাঁরা দেখেন বাড়ির বারান্দায় অচৈতন্য অবস্থায় পড়ে রয়েছেন ওই গৃহবধূ। স্বামী কিংবা শ্বশুরবাড়ির কোন লোকজনকেই দেখা যায়নি। তড়িঘড়ি গৃহবধূকে উদ্ধার করে পদ্মেরহাট গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। কিছুক্ষণের মধ্যেই তাঁকে মৃত বলে জানান চিকিৎসকরা। মৃতার পরিবারের অভিযোগ, শ্বাসরোধ করে খুন (Murder) করা হয়েছে তাঁকে। স্বামী-সহ শ্বশুরবাড়ির লোকজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের হয়। তদন্তে নেমে পুলিশ গৃহবধূর স্বামীকে গ্রেপ্তার করে। ধৃতকে বৃহস্পতিবার বারুইপুর মহকুমা আদালতে তোলা হয়। তার আগে শারীরিক পরীক্ষার জন্য পদ্মেরহাট হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় তাকে। সেই সময় পুলিশের গাড়ি ঘিরে বিক্ষোভ দেখাতে থাকে মৃতার বাপেরবাড়ির লোকজন। অভিযুক্তের ফাঁসির দাবি জানান তাঁরা।