চন্দ্রশেখর চট্টোপাধ্যায়, আসানসোল: পুজোর সাজে চণ্ডী মণ্ডপ। বাহারি আলোর কাজ। সপ্তমীতে জলসা, পাঁচদিন পাত পেড়ে মহাভোগ বলতেই চোখে ভাসবে প্রাচীন জমিদার বাড়ির কোনও দুর্গাপুজোর কথা। ২৫১ বছর আগে যে পুজো সামন্ত রাজারা শুরু করে গিয়েছিলেন, তার পরম্পরা আজও অব্যাহত। আসানসোলের বড়তোড়িয়া গ্রামে মণ্ডলবাড়ির দুর্গাপুজোয় মিলবে অতীতের সেই ঐতিহ্য। এই পরিবারের পুজোর অভিনবত্ব একটি দুর্গা প্রতিমা নয়, কার্যত একসঙ্গে দু-দুটি প্রতিমার পুজো হয়।
[পুজোয় বাংলার ব্রতকথার ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনবে শ্যামবাজার নবীন সংঘ]
এর ব্যাখা দিয়েছেন পরিবারের অন্যতম সদস্য সুজিত মণ্ডল। তাঁর কথায়, শেরগড় পরগনার (অধুনা পশ্চিম বর্ধমান) সামন্ত রাজা ছিলেন মণ্ডলদের পূর্বপুরুষরা। হেমসুন্দর, বদনসুন্দর ও কান্ত নামে তিন ভাই দুর্গাপুজো চালু করেছিল মণ্ডল পরিবারে। কিন্তু মেজ ভাই বদনসুন্দর ৬ মেয়ের পর পুত্রসন্তানের আশায় মা দুর্গার কাছে মানত করেছিলেন। মানতের সেই পুত্রসন্তান ‘কাঙালচন্দ্র’ হওয়ার পর বদনসুন্দর আলাদা করে দু্র্গামন্দির প্রতিষ্ঠা করে পুজো শুরু করেন। তখন থেকেই মণ্ডলদের দু’টি দুর্গা পুজোর প্রচলন। ৩০৯ জন সদস্য মিলেমিশে পুজোর আয়োজন করেন। দশ মিটারের মধ্যে দুটি দুর্গামন্দির। সেখানে সমানভাবে পূজিতা হন দশভুজা।
[পুজোয় মননের সুলুকসন্ধান টালা পার্ক প্রত্যয়ে]
পরিবারের প্রবীণ সদস্যা রেণুবালা মণ্ডল জানান, ষষ্ঠীতে অধিবাসের ভাত দিয়ে শুরু আর দশমীতে মৎস্য ও খই-চিড়ে দিয়ে মহাভোগের শেষ। রেওয়াজ অনুযায়ী, পরিবারের প্রত্যেকটি সদস্যকে জ্যান্ত চ্যাং মাছ দেখে উঠতে হয় দশমীর সকালে। সেই মাছেরই ভোগ নিবেদন করা হয় দশমীতে। মায়ের মুখে পোড়া মাছের ভোগ নিবেদন না করলে বিদায় দেওয়া হয় না। প্রবীণ সদস্য সুনীল মণ্ডলের কথায়, দশমীর সকালে নবপত্রিকা বিসর্জনের সময় জলাধারের উপর আকাশে শঙ্খচিল উড়তে দেখা যায়। তারপরেই ঘট ও নবপত্রিকার বিসর্জন হয়। পরিবারের নবীন সদস্যা দেবিকা মণ্ডল জানান, সপ্তমী সন্ধ্যায় চণ্ডী মন্ডপে জলসার নিয়ম রয়েছে। তার প্রস্তুতি হিসাবে নাটক ও অনুষ্ঠানের রিহার্সাল শুরু হয়ে গিয়েছে দু’মাস আগে থেকে। পরিবারের সদস্যরাই সেই নাটকে অভিনয় করবেন। তাঁর কথায়, পরিবারের অনেকেই কর্মসূত্রে ও পড়াশোনা জন্য রাজ্য বা জেলার বাইরে থাকেন। কিন্তু পুজোর টানে সবাই আসেন বড়তোড়িয়ায়।
The post অভিনব আয়োজন, আসানসোলে একই বাড়িতে পূজিতা দুই দুর্গা প্রতিমা appeared first on Sangbad Pratidin.
